কলকাতা: রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর। বক্সিং ডে (Boxing Day)। ক্রিকেট বিশ্বে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এই দিনটির। সব বড় দলই চায় এই দিন শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সামনে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে। অস্ট্রেলিয়া (Australia), ইংল্যান্ড (England) কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকায় (South Africa) তো এই দিন ম্যাচ আয়োজনের হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। এবারও তার অন্যথা হয়নি। সেঞ্চুরিয়নে বক্সিং ডে টেস্টে বিরাট কোহলির ভারতের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। মেলবোর্নে অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড। ক্রিকেট বিশ্ব রীতিমতো জমজমাট।
কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, রিংয়ে বক্সিং তো হয় না, তবু কেন দিনটিকে বক্সিং ডে বলা হয়?
দিনটির নামকরণের সঙ্গে বক্সিং রিং বা গ্লাভসের দূর-দুরান্তেরও কোনও যোগ নেই। মুষ্টিযুদ্ধের সঙ্গে বক্সিং ডে সম্পূর্ণরূপে সম্পর্কহীন। কিন্তু তবু কেন এরকম অদ্ভুত নাম?
উত্তর খুঁজতে বসলে সবার আগে চোখ রাখতে হবে দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইতিহাসের দিকে। অস্টাদশ শতকে রানি ভিক্টোরিয়ার আমল থেকেই বড়দিনের ঠিক পরের দিন, অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর দিনটিকে বলা হয় বক্সিং ডে। খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব হল বড়দিন। সেদিনের রেওয়াজ হল, অর্থনৈতিকভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষদের হাতে উপহার তুলে দেবে তুলনায় স্বচ্ছলরা। আবার কারও কারও মতে, রানি ভিক্টোরিয়ার আমল থেকেই বড়দিন উপলক্ষ্যে একে অপরকে উপহার বিনিময় করে থাকেন খ্রীস্টানরা। ঠিক যেরকম দুর্গাপুজোর সময় বাঙালিদের মধ্যে নতুন পোশাক আদান-প্রদানের চল রয়েছে। তফাত হল, বড়দিনের উপহার খুব সুন্দর করে বাক্সের মধ্যে সাজিয়ে দেওয়া হয়।
মজার ব্যাপার হল, সেই সমস্ত উপহার কেউই বড়দিনের দিন খোলেন না। বড়দিন হল প্রভু যীশুকে স্মরণ করার আর প্রার্থনা করা দিন। পরিবারের সকলে মিলে হইচই করে কাটানোর মাহেন্দ্রক্ষণ। বড়দিনের রাত পোহালে, অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর আবার সকলের রোমাঞ্চকর এক অপেক্ষার অবসান হয়। কারণ, আগের দিন উপহার পাওয়া বাক্সগুলো সেদিন খুলে দেখা হয়, তার মধ্যে কী আছে। উপহার পেয়ে আট থেকে আশির মুখে হাসি ফোটে। শোনা যায় সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষেরা এই দিন ছুটি পেতেন। তাঁদের অনেকেই অন্য বাড়িতে পরিচারক বা পরিচারিকার কাজ করতেন। গৃহপ্রভুদের থেকে পাওয়া উপহারের বাক্স পরিবারের সকলের সঙ্গে খুলে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য তাঁরা ২৬ ডিসেম্বর ছুটি পেতেন। উপহারের সেই বাক্সের জন্য এই দিনটির নাম বক্সিং ডে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে টসে জিতে ব্যাটিং ভারতের, দলে রাহানে
খ্রীস্টান ধর্মপ্রধান যে সমস্ত দেশে ক্রিকেট খুব জনপ্রিয়, সেখানে এই দিনটি খেলাধুলোর মাধ্যমে উপভোগ করে কাটানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়। তাই অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের ম্যাচ আয়োজন হয় এই দিন। সাধারণত টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনের খেলা শুরু হয় ২৬ ডিসেম্বর। যাতে ক্রিকেট রোমাঞ্চের আঁচে উৎসবের মরসুম আরও বেশি করে উপভোগ করা যায়।