নয়াদিল্লি: দিন পাঁচেক আগে কুয়েতে গিয়ে কুয়েতকে হারিয়ে এলেও ঘরের মাঠে কাতারের বিরুদ্ধে ম্যাচ যে মোটেই সহজ হবে না, তা খুব ভাল করেই জানেন ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্তিমাচ (Igor Stimac)। ফিফা ক্রমতালিকায় ৪১ ধাপ এগিয়ে থাকা কাতার এশিয়ার সেরা ফুটবলখেলিয়ে দেশগুলির অন্যতম। গত বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে তারা তাতে অংশও নেয়। যদিও কোনও ম্যাচেই জিততে পারেনি। সাত গোল খেয়ে মাত্র এক গোল দিতে পেরেছিল।

এশিয়ার ফুটবলের নিরিখে কাতার অবশ্য বেশ ভাল জায়গায় রয়েছে। গতবারের এএফসি এশিয়ান কাপ তাদের হাতেই উঠেছিল। অবশ্য সেই সাফল্যের তিন মাসের মাথায় বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ভারত তাদের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে তাদেরই ঘরের মাঠে। তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও যে ভাল তাও বলা যায় না। এ বছর ১৫টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে জিতেছে তারা।

এই অবস্থায় কাতারকে কি আটকানো বা হারানো সম্ভব ভারতের পক্ষে? যারা কয়েকদিন আগেই বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে তাদের প্রথম অ্যাওয়ে-উইন নিয়ে দেশে ফিরেছে, তাদের পক্ষে কি কাতারের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে নিদেনপক্ষে আটকানোও সম্ভব নয়?

কী বলছেন ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্তিমাচ? সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “এই ম্যাচে আমাদের হারানোর কিছু নেই। কিন্তু পাওয়ার আছে অনেক কিছু। তাই অল আউট যাওয়াই ভাল। বাইরের বিষয়গুলো তো আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমরা আমাদের পারফরম্যান্সের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারি মাত্র। আমরা শুধু ৯০ মিনিট ধরে নিজেদের সেরাটা দিতে পারি”।

কোচ চান তাঁর দল ধারাবাহিক হোক। কুয়েতে যে পারফরম্যান্স তাঁর দল দেখিয়েছে, সে রকমই বা তার চেয়েও ভাল পারফরম্যান্স এই ম্যাচে দিক তাঁর দল। গতবার কুয়েতের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্রয়ের পর যেমন বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ড্র করে ভারত, এ বারও যেন সে রকম না হয়। গতবার ধারাবাহিকতার অভাবেই ভুগে তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার দৌড়ে ব্যর্থ হয়। এ বার দলের কাছ থেকে সেই ধারাবাহিকতা চান কোচ।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোনও দল যখন পরপর সাফল্য পেতে থাকে। কিরগিজস্তান, ইরাকের বিরুদ্ধে, কুয়েতের বিরুদ্ধে তিনবার, লেবাননের বিরুদ্ধে দু’বার এবং এদের বিরুদ্ধে ক্লিন শিট বজায় রেখে না হারে, তার মানেই হল সেই দলের ধারাবাহিকতা রয়েছে। কুয়েতের বিরুদ্ধে জয়ের পর ড্রেসিংরুমে ফিরে আমি ছেলেদের বলি, এই ম্যাচটা এখনই ভুলে যাও। সেলিব্রেশন না করে সেই শক্তি সঞ্চয় করে রাখো। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে ও আবেগে ভেসে গিয়ে লাভ নেই। সে সব ভুলে যাও। এখন কাতার ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে আমাদের। আমাদের সামনে এখন এই একটাই রাস্তা”।

চার বছর আগে যে ম্যাচে কাতারের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করেছিল ভারত, সেই ম্যাচে ১১টি অবধারিত গোল বাঁচিয়ে নায়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন যিনি, সেই গুরপ্রীত এ দিন কোচের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে আসেন। মঙ্গলবারের ম্যাচ নিয়ে গুরপ্রীত বলেন, “আশা করি এ বার আর অত পরিশ্রম করতে হবে না আমাকে। একজন গোলকিপার কম পরিশ্রম করে পুরো পয়েন্ট নেওয়ার স্বপ্নই দেখে। আমি চাই আমার সতীর্থরা ম্যাচটা উপভোগ করুক। স্কোরশিটে নিজেদের নাম লিপিবদ্ধ করো এবং আমাদের জেতাও”।

চার বছর আগের সেই ম্যাচের স্মৃতিচারণ করে গুরপ্রীত সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে বলেছেন, “সেই রাতের কথা আমাদের কেউই কখনও ভুলবে না। আমাদের সে দিন কোনও চাপ ছিল না। তবে সবাই ভেবেছিলাম, প্রতিপক্ষের কাজটা যতটা পারা যায় কঠিন করে তুলতে হবে। লং বল খেলো। যতক্ষণ পারো ম্যাচে থাকো। কে বলতে পারে, ম্যাচের শেষে আমরা কিছু অর্জন করতে পারব, কি পারব না”। সেই ম্যাচ থেকে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে ঘরে ফিরেছিলেন ভারতীয়রা।

ফিরতি ম্যাচেও গুরপ্রীত ন’টি সেভ করেছিলেন। ভারতও রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে কাতারকে যথাসাধ্য আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ম্যাচ কাতার সেই ম্যাচ শেষ করেছিল ১-০-য় জিতে। কুয়েতের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফুটবলে নজিরবিহীন ২৫তম ক্লিন শিট রেখে মাঠ ছাড়া গোলকিপার আসন্ন ম্যাচ নিয়ে বলছেন, “আমাদের দল এখন একেবারে অন্যরকম। অনেক উন্নত, ভয়ডরহীন, আরও আগ্রাসী ও খুধার্ত। উজ্জীবিত হওয়ার জন্য আমাদের অনেক কিছুর প্রয়োজন নেই। আমরা একসঙ্গে অনেক ফুটবল খেলেছি এবং উন্নতিও করছি। ২০১৯ এর পর থেকে অনেক ওপরে উঠেছি আমরা। আমাদের সাম্প্রতিক ফলই বলে দেয় নিজেদের প্রতি কতটা আস্থা আছে আমাদের”।


আরও পড়ুন: ফাইনালে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি? বোমা ফাটালেন ভারতকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।