কলকাতা: ঘরোয়া ক্রিকেটের কিংবদন্তি বলা হতো তাঁকে। প্রয়াত হলেন সেই বাঁহাতি স্পিনার রাজিন্দর গোয়েল। বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। রেখে গেলেন স্ত্রী ও পুত্র নীতিন গোয়েলকে।


ঘরোয়া ক্রিকেটে অভূতপূর্ব সমস্ত রেকর্ড রয়েছে গোয়েলের সাফল্যের ঝুলিতে। হরিয়ানার প্রতিনিধিত্ব করতেন। খেলেছেন উত্তরাঞ্চলের হয়েও। ১৫৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ৭৫০ উইকেট! পাশাপাশি ৮টি লিস্ট এ ম্যাচে ১৪টি উইকেট। তবু কোনওদিন জাতীয় দলে খেলা হয়নি গোয়েলের। ঢাকা পড়েছেন আর এক কিংবদন্তি বিষাণ সিংহ বেদীর ছায়ায়।



কেমন ছিল বল হাতে গোয়েলের মুন্সিয়ানা? ঘরোয়া আড্ডায় কিংবদন্তি সুনীল গাওস্কর একবার বলেছিলেন, গোয়েল তাঁকে লাগাতার এমন লেংথে বল করতেন যে, ড্রাইভই মারতে পারতেন না!



গোয়েলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া ভারতীয় ক্রিকেট মহলে। সচিন তেন্ডুলকর ট্যুইট করেছেন, ‘শুধু রঞ্জি ট্রফিতেই ছশোর বেশি উইকেট। ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রবাদপ্রতিম চরিত্র ছিলেন রাজিন্দর গোয়েলজি। ওঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।’



বিরাট কোহলির ট্যুইট, ‘একজন কিংবদন্তিকে হারালাম। রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। এর থেকেই ওঁর কেরিয়ারের গ্রাফ বোঝা যায়। পরিবারের সকলের প্রতি রইল সমবেদনা।’ ভারতীয় দলের প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রী লিখেছেন, ‘নিজের শিল্পে আপনি ওস্তাদ ছিলেন। ভয়ঙ্কর লাইন ও লেংথ।’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বোর্ডের তরফে প্রকাশিত বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটের এক বিশাল চরিত্র প্রয়াত হলেন। ওঁর রেকর্ডই ওৎ নৈপুণ্য আর কেরিয়ারের প্রতিফলন। ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে একভাবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা ও খেলে যাওয়া ক্রিকেটের প্রতি ওঁর নিষ্ঠার পরিচয় বহন করে। ৭৫০ উইকেট নিতে গেলে বছরের পর বছর সাধনা দরকার হয়। ওঁর পরিশ্রমকে কুর্ণিশ জানাই।’



১৯৫৮-৫৯ থেকে ১৯৮৪-৮৫ মরসুম পর্যন্ত টানা খেলেছেন গোয়েল। বেদী বাদ পড়ায় ১৯৭৪-৭৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরু টেস্টের ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন গোয়েল। তবে সেই ম্যাচে তিনি দ্বাদশ ক্রিকেটার ছিলেন। প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি। বেদী ট্যুইট করেছেন, ‘আমার দেখা সবচেয়ে হাসিখুশি চরিত্র। এত মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারতেন যে, আমি হিংসা করতাম। হৃদয় দিয়ে বল করে রঞ্জি ট্রফিটাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।’



সঞ্জয় মঞ্জরেকরের ট্যুইট, ‘শিভালকর ও রাজিন্দর গোয়েলের রেকর্ড শুনে সবসময় বিস্মিত হয়েছি।’ শিখর ধবন ট্যুইট করেছেন, ‘ঈশ্বর আপনার আত্মাকে চিরশান্তি দিন।’ ভিভিএস লক্ষ্মণ লিখেছেন, ‘রঞ্জি ট্রফির সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির প্রয়াণে মর্মাহত।’





রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে পড়ছিল বাংলা বনাম হরিয়ানার একটি ম্যাচের কথা। বলছিলেন, ‘গোয়েল এমন জায়গায় বল রাখছিল যে, ব্যাট করতে নেমে ৫৯টি বল সামনের পায়ে ডিফেন্স করতে বাধ্য হয়েছিলাম। ৬০তম বল সুইপ করে এক রান পেয়েছিলাম। পয়েন্টে কোনও ফিল্ডার না রেখে বল করত। জীবনে স্কোয়্যার কাট মারতে দেবে না, এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল।’ গোয়েলের সঙ্গে ভারতের টেস্ট দলের প্রস্তুতি শিবিরেও ছিলেন সম্বরণ।