কুন্তল চক্রবর্তী, নয়াদিল্লি: বারে বারেই তারকা খচিত দল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আইপিএলে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। এবার কি ট্রফির খরা কাটবে? সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে এবারের আইপিএল। আসন্ন টুর্নামেন্টে কিংস ইলেভেনকে ডার্ক হর্স বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দলে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে রয়েছে দারুণ ভারসাম্য। রয়েছেন টি ২০ ফরম্যাটের একাধিক ম্যাচ উইনার।
দলের কোচ ও অধিনায়ক দুজনেই ব্যাঙ্গালোরের। কোচ অনিল কুম্বলে, অধিনায়ক কেএল রাহুল। দলের নিউক্লিয়াসদের মধ্যে অন্যতম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ময়াঙ্ক অগ্রবালও কর্ণাটকেরই। আবার করুণ নায়ারও কর্ণাটকেরই।
কিংস ইলেভেনের এবারের দল কেমন তা জানার আগে দেখে নেওয়া যাক, দলের সমস্ত ক্রিকেটার ফিট থাকলে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে টুর্নামেন্টে তাদের প্রথম ম্যাচে স্টার্টিং লাইন আপ কেমন হতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম এগারোয় থাকতে পারেন চার বিদেশি। এক্ষেত্রে ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম একাদশে থাকতে পারেন ক্রিস গেইল, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, শেলডন কটরেল ও আফগান মিস্ট্রি স্পিনার মুজিবর রহমান। এখন দেখে নেওয়া যাক, দলের প্রথম এগারোয় সম্ভাব্য ভারতীয় ক্রিকেটার কারা হতে পারেন। অধিনায়ক রাহুল তো থাকছেন। সেইসঙ্গে থাকতে পারেন ময়াঙ্ক, মনদীপ সিংহ বা করুণ নায়ার, ঘরোয়া ক্রিকেটে তুখোড় ফর্মে থারা সরফরাজ খান, অলরাউন্ডার দীপক হুডা, মহম্মদ সামি। ১১ নম্বর কে হবেন, তা অনেকটাই নির্ভর করছে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ম্যাচের পিচ কেমন হয়, তার ওপর। অধিনায়ক রাহুলের হাতে বিকল্প হিসেবে থাকছেন বাংলার পেসার ইশান পোড়েল, রাজস্থানের গুগলি বোলার রবি বিষ্ণোই অথবা আর এক স্পিনার মুরুগান অশ্বিন।
এই যদি হয় প্রথম এগারো, তাহলে বলা যায় যে, দলে থাকছেন একাধিক ম্যাচ উইনার। রাহুল, গেইল, ম্যাক্সওয়েল, মুজিবর, শামি ও কটরেলদের মতো ক্রিকেটাররা যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রঙ বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের এবারের দলে পেস ও স্পিন বোলিংয়ের ভারসাম্যও দুরন্ত। টপ অর্ডারও বেশ মজবুত। সেইসঙ্গে ডেথ ওভারে রয়েছে ম্যাক্সওয়েলের মতো বিগ হিটারের উপস্থিতি।

সবমিলিয়ে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব বেশ শক্তিশালী দল। যে সম্ভাব্য এগারো জন ক্রিকেটার প্রথম ম্যাচ নামতে পারেন, তাঁদের বাইরেও রয়েছেন কিউয়ি অলরাউন্ডার জিমি নিশম, ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার ক্রিস জর্ডনও। প্রথম এগারোয় খেললে টুর্নামেন্টের যে কোনও সময় ম্যাচ উইনার হিসেবে তাঁরা নিজেদের প্রমাণ করার ক্ষমতা রাখেন। সেইসঙ্গে রয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরান। টি ২০-এর একেবারে আদর্শ ক্রিকেটার। এছাড়াও রিজার্ভ বেঞ্চে রয়েছেন অর্শদীপ সিংহ ও হরপ্রিত ব্রারের মতো তরুণ তুর্কি।
সার্বিকভাবে বলা যেতে পারে, কিংস ইলেভেন পঞ্জাব যথেষ্ট ব্যালান্সড দল। দেশে আইপিএল হলে তাদের হোম ম্যাচ হয় মোহালি বা ধর্মশালায়। আমিরশাহীর মাঠ কিন্তু মোহালি বা ধর্মশালার তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট। এমন মাঠে ব্যাটে-বলে হলে রাহুল, গেইল ও ম্যাক্সওয়েলদের মারমুখী মেজাজে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব।
দুর্বলতা
আট ওভারে বিনা উইকেটে ৮০ বা ১ উইকেটে ১০০ হলে তো কোনও কথা নেই। কিন্তু তা যদি না হয়! শুরুতেই এলোমেলো চালাতে গিয়ে ক্রিস গেইল প্যাভিলিয়নে ফিরছেন, এমন দৃশ্য আইপিএলে নতুন নয়। ধরা যাক, স্কোর লাইন ২০-২ বা ৩০-৩। এমনটা হলে কিন্তু কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের ব্যাটিং অর্ডারের চাপে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা একটা থাকছেই। কারণ, মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সংখ্যা কম। চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স সবমিলিয়ে সাতবার আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই দুই দলের মিডল অর্ডারের মুন্সিয়ানা কিন্তু একটা বড় ভূমিকা নিয়েছে। বহু ম্যাচেই এই দুটি দল শুরুতে দ্রুত উইকেট হারিয়েও কামব্যাক করেছে। কারণ, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের অভিজ্ঞতা। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে এক্ষেত্রে দুর্বলতা ভোগাতে পারে। তবে কোনও তরুণ ব্যাটসমম্যান এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে তারকা হয়ে উঠতে পারেন কিনা, সেটাই এখন দেখার।