সন্দীপ সরকার, কলকাতা: নাটকীয় সেই ম্যাচের পর তিনদিন কেটে গিয়েছে। এখনও যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। গতবারের চ্যাম্পিয়নদের ডেরায় গিয়ে ব্যাট হাতে মাস্তানি করে এসেছেন। কার্যত হারা ম্যাচ জিতিয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সকে (Kolkata Knight Riders)। শেষ ওভারে বাকি ছিল ২৯ রান। পাঁচ ছক্কায় যে লক্ষ্যপূরণ করেছেন রিঙ্কু সিংহ (Rinku Singh)। অবিশ্বাস্যভাবে। অভাবকে হারিয়ে যাঁর ক্রিকেট মাঠে সাফল্যের উত্থান যে কোনও থ্রিলারকে হার মানাতে পারে। কলকাতায় ফিরে ফের প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন। এবার ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) প্রতিপক্ষ সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (SRH)। প্রস্তুতির ফাঁকেই কেকেআর তারকা একান্ত সাক্ষাৎকারের জন্য সময় দিলেন এবিপি লাইভ-কে।
প্রশ্ন: ৬ বল। ২৯ রান। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে শেষ ওভারের সময় কী লক্ষ্য সাজিয়েছিলেন?
রিঙ্কু সিংহ: খুব সত্যি বললে, আমি কিছু ভাবিনি। মনের মধ্যে কিছুই ছিল না। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগতে পারে, আমি জানতামও না শেষ ওভারে কত রান চাই। ২ বলে যখন ১০ রান চাই, তখন জানতে পারি। তখন মনে হয়েছিল হয়ে যেতে পারে। আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। চতুর্থ ছক্কাটা মেরে দেওয়ার পর দারুণ অনুভূতি হচ্ছিল। তারপর পাঁচ নম্বর ছক্কা। ম্যাচ জিতিয়ে দুর্দান্ত লাগছে।
প্রশ্ন: গোটা ক্রিকেট বিশ্বে এখনও সেই ম্যাচ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আপনি কি সেই ইনিংসের ঘোর কাটিয়ে উঠেছেন?
রিঙ্কু: (হেসে) হ্যাঁ, ঘোর কাটিয়ে উঠেছি। নিজের যে রুটিন থাকে, ফের সেটা অনুসরণ করতে শুরু করেছি। জিম থেকে শুরু করে প্র্যাক্টিস, সবই স্বাভাবিকভাবে করতে শুরু করেছি।
প্রশ্ন: শাহরুখ খান, সচিন তেন্ডুলকরের মতো কিংবদন্তিরা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। এত শুভেচ্ছাবার্তা। কীরকম অনুভূতি হচ্ছে?
রিঙ্কু: বড় তারকাদের প্রশংসা শুনে খুব ভাল লাগছে। শাহরুখ খান, সচিন তেন্ডুলকর, বীরেন্দ্র সহবাগের মতো ব্যক্তিত্বরা আমাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন, দুর্দান্ত অনুভূতি। আমি খুব খুশি। কিন্তু ম্যাচের পর থেকে এত মেসেজ পেয়েছি যে, আমার ইনবক্সও উপচে পড়ছে। এখনও সব পড়ে উঠতে পারিনি।
প্রশ্ন: পাঁচ ছক্কার তাণ্ডব দেখে অনেকেই তো ভারতীয় দলে আপনাকে দেখতে চাইছেন। আপনার স্বপ্নও কি তাই?
রিঙ্কু: ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে এখনও কিছু ভাবিনি। আইপিএলেও এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। এখন পুরো মনঃসংযোগ আইপিএলে। কেকেআরকে ম্যাচ জেতাতে হবে। সেটাই একমাত্র লক্ষ্য। আর ভারতীয় দলের কথা বলতে গেলে, সেটা তো প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে। জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব সকলেই করতে চায়। তবে আমি এখনও সেভাবে ভাবিনি।
প্রশ্ন: শেষ ওভারে পাঁচ ছক্কা খাওয়া বোলার যশ দয়ালের সঙ্গে কী কথা হল? কী বললেন গুজরাত টাইটান্সের পেসারকে?
রিঙ্কু: কথা হয়েছে যশের সঙ্গে। ওকে বলেছি, মনঃসংযোগ হারাস না। গত মরসুম ওর খুব ভাল গিয়েছে। ভাল বোলার। ওকে বলেছি, ফের ভাল বল করতে হবে। সেদিনটা হয়তো আমার ছিল। এক একদিন এরকম যায়।
প্রশ্ন: দারিদ্রের বিরুদ্ধে আপনার লড়াই, সাফল্য অনেকের কাছে প্রেরণা হতে পারে। যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তাঁদের কী বলবেন?
রিঙ্কু: সকলকে আমি বলব, কখনও হার স্বীকার কোরো না। পরিশ্রম করে যাও। প্রস্তুতিতে ফাঁক রেখো না। ঈশ্বর করুণাময়। সৎ থেকে পরিশ্রম করলে ঈশ্বর আশীর্বাদ করবেনই। যে জগতেরই মানুষ হোন না কেন, নিজের প্রতি সৎ থেকে পরিশ্রম করলে ঈশ্বর আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না। খোলা মনে জীবনটাকে দেখো।
প্রশ্ন: গুজরাত ম্যাচে শেষ ওভারে ভেবেছিলেন কেকেআর ম্যাচটা জিততে পারে?
রিঙ্কু: সেদিন তার আগে ১২ বলে ৮ রান করেছিলাম। আমি বিশেষ কিছু ভাবছিলাম না। নিজের ব্যাটিং নিয়ে খুশি ছিলাম না। তবে ইনিংসের শেষ ৮টি বলে ভাল খেলেছি। আমি জানতামও না শেষ ওভারে কত রান বাকি রয়েছে। যখন ২ বলে ১০ রান বাকি, তখন মনে হয়েছিল একটা ছক্কা মেরে দিতে পারলে ম্যাচটা জিততে পারি। সেই আত্মবিশ্বাস ছিল। ম্যাচ জেতাতে পেরেছি শেষ পর্যন্ত। দারুণ অনুভূতি।
প্রশ্ন: আপনার ইনিংস নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। পরিবারের সকলে কী বলছেন?
রিঙ্কু: সেদিন রাতেই মা-বাবাকে ভিডিও কল করেছিলাম। খুব খুশি ছিলেন সকলে। আমার সব দাদা-ভাইরাও দারুণ খুশি ছিল। প্রচুর বাজি ফাটানো হয়েছে। আলিগড়ে আমার বাড়ির কাছে রীতিমতো দীপাবলি পালিত হয়েছে। খুব ভাল লেগেছে। তবে দায়িত্ব আরও বাড়ল। দলকে আরও ম্যাচ জেতাতে হবে।