সন্দীপ সরকার, কলকাতা: উমেশ যাদব-শার্দুল ঠাকুররা ছন্দে থাকলে গোটা আইপিএল (IPL 2023) হয়তো ডাগ আউটে বসেই কাটাতে হতো তাঁকে। কিন্তু ভারতীয় দলের পেসারদের ব্যর্থতা কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) প্রথম একাদশের দরজা আচমকাই করে খুলে দেয় তাঁর সামনে। সুযোগের সদ্বব্যবহার করেছেন হর্ষিত রানা (Harshit Rana)। ৩ ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে তিনিই এখন নাইটদের পেস ব্যাটারির প্রধান মুখ। পাঞ্জাব কিংসকে তাঁর গতির আগুনে ছারখার করেছেন। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছেন হর্ষিত।
বৃহস্পতিবার ইডেনে প্রতিপক্ষ সঞ্জু স্যামসনরা। তার আগের দিন এবিপি লাইভকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে দিল্লির ডানহাতি পেসার বললেন, ‘দীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন এবারের আইপিএলে প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছিলাম, ঠিকই করে নিয়েছিলাম পাওয়ার প্লে-তে উইকেট তুলতে হবে। কোচও সেটাই বলেছিলেন যে, কোথায় বল ফেলবি সেটা নিয়ে ভাব। পরিশ্রম কর। আর কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। অধিনায়ক নীতীশ রানাও বলেছিল, তোকে যেটা বলা হয়েছে সেটাই কর। বেশি চিন্তাভাবনার দরকার নেই। মনঃস্থির করে রেখেছিলাম যে, খেলার সুযোগ পেলে পাওয়ার প্লে-তে উইকেট তুলতে হবে। তাতে দলের শুরুটা খুব ভাল হয়।’
কেকেআরের কাছে এখন সব ম্যাচই মরণ-বাঁচন। এই প্রাণান্তকর চাপের সামনে কি কেঁপে যাওয়ার ভয় হয়? হর্ষিত বলছেন, ‘প্রথম একাদশে যখন সুযোগ পেয়েছিলাম, ৬ ম্যাচে ৬টিই জেতার মতো পরিস্থিতি ছিল। আমি ঠিকই করে রেখেছিলাম, নিজের সেরাটা দেব। সব প্লেয়ার যদি নিজের সেরাটা দেয়, তাহলে ম্যাচ জেতা অনেক সহজ হয়ে যায়। আমার পরিকল্পনা ছিল দলের হয়ে বোলিংয়ের শুরুটা ভাল করতে হবে।’
বৈভব অরোরার সঙ্গে হর্ষিত রানার বোলিং জুটি নাইট শিবিরের ভরসা হয়ে উঠেছে। হর্ষিত বলছেন, ‘বৈভবের সঙ্গে আমার দারুণ বোঝাপড়া। দুজনের দক্ষতা আলাদা। ওর অস্ত্র স্যুইং। আমার গতি। আমি যে কোনও পিচ থেকে বাউন্স আদায় করে নিতে পারি। ওর বল সহজাতভাবেই স্যুইং করে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে কোনও বোলার মার খেয়ে যেতে পারে। আমাদের লক্ষ্য থাকে কোনও একজন বেশি রান খরচ করলে অন্যদিক থেকে চাপ বজায় রাখা। যেই উইকেট পাক না কেন, দলের ভাল হবে। ম্যাচের আগে আমি ও বৈভব কথা বলে নিই। আলোচনা করি যে, পাওয়ার প্লে-তে ২ ওভার, ১ ওভার যাই করি না কেন, উইকেট তুলতে হবে। যাতে বোলিংয়ের শুরুটা ভাল হয়। আমরা খারাপ বল করলে অধিনায়কের ওপর চাপ তৈরি হয়। বোলিং পরিবর্তন করতে হয়। আমরা চাই যাতে নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি।’
কেকেআরের বোলিং কোচ ভরত অরুণ এক সময় জাতীয় দলের বোলিং গুরু ছিলেন। যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামিরা তাঁর প্রশিক্ষণেই প্রস্তুতি সারতেন। সেই ভরতকে বোলিং কোচ হিসাবে পেয়ে কী শিখলেন? ‘স্যার সব সময় বলেন, ফল নিয়ে ভেবো না। নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকো। নিজের শক্তি অনুযায়ী বল করো। তাতে ব্যর্থ হলেও চিন্তা কোরো না। কারণ ওটাই তোমার শক্তি। ভাল বলেও ব্যাটার মেরে দিতে পারে। নেটে আমাদের অনেক সময় দেন। প্রত্যেক ম্যাচের আগের দিন বোলারদের নিয়ে আলাদা করে বৈঠকে বসেন। ম্যাচ ধরে ধরে পরিকল্পনা তৈরি হয়। ভরত স্যার সব সময় পাশে থাকেন। বলেন, রান খরচ করলেও ক্ষতি নেই। নিজেদের দক্ষতা অনুযায়ী বোলিং করো,’ বলছিলেন ডানহাতি পেসার।
প্লে অফে উঠতে হলে বাকি ৩ ম্যাচের ৩টিই জিততে হবে কেকেআরকে। সম্ভব? হর্ষিত বলছেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী। কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতও বলছেন যে, আমাদের পক্ষে কোয়ালিফাই করা সম্ভব। দলের মনোবলে ধাক্কা লাগতে দেন না কোচ। ক্যাপ্টেন নীতীশ ভাইও ভীষণ ইতিবাচক। বলে দিয়েছে, আমাদের তিনটি ম্যাচের তিনটিই জিততে হবে আর আমরা জিতবই। কেকেআর আগেও এরকম পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। এবারও নিশ্চয়ই করব।’
পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে ঘরের মাঠে কামাল করেছেন কেকেআরের ‘আরআরআর’। নীতীশ রানা, আন্দ্রে রাসেল ও রিঙ্কু সিংহ। সেই পারফরম্যান্স দলের মনোবল কতটা বাড়াল? হর্ষিত বলছেন, ‘ডেথ ওভারে রিঙ্কু ভাই থাকলে অনেক নিশ্চিন্ত থাকি। রিঙ্কু ভাই যে কোনও জায়গা থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। ম্যাচ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জেতার আশা থাকে। ভাবিই না যে, হাত থেকে ম্যাচ বেরিয়ে গিয়েছে। রিঙ্কু ভাই গেমচেঞ্জার। রাসেল কী পারে, সকলেই জানে। পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে সেটাই ফের করে দেখিয়েছে। আর রানা ভাই এবছর অধিনায়ক। এমনিতেই আগ্রাসী খেলে। সামনে থেকে দায়িত্ব নিয়ে খেলে।’
বৃহস্পতিবার ইডেনে সামলাতে হবে রাজস্থান রয়্যালসের জস বাটলার, যশস্বী জয়সওয়ালের মতো ব্যাটারদের। কী পরিকল্পনা? আত্মবিশ্বাসী গলায় ২১ বছর বয়সী পেসার বলছেন, ‘আমি নাম দেখে বল করি না। নীতীশ ভাই বলে, কাকে বল করছিস সেটা দেখার দরকার নেই। ম্যাচের পরিস্থিতি নিয়েও বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। যেটা সবচেয়ে ভাল পারিস, সেটাই কর। আমিও তাই করি। নিজের দক্ষতা অনুযায়ী বল করলে আমি সফল হবই।’ একটা সময় পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল রাজস্থান। কিন্তু শেষ ৫ ম্যাচের মধ্যে চারটিতে হেরে বিপাকে। কেকেআর কি মনঃস্তাত্ত্বিক সুবিধা পাবে? হর্ষিত বলছেন, ‘রাজস্থানকে নিয়ে খুব একটা ভাবছি না। নিজেদের প্রস্তুতিতে জোর দিচ্ছি।’
পরপর ২ ম্যাচ জেতার পর টিম মালিক শাহরুখ খানের কাছ থেকে কোনও বার্তা পেলেন? হর্ষিত হেসে বলছেন, ‘শাহরুখ খানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আরসিবি ম্যাচের পর। এত কথা শুনেছিলাম ওঁকে নিয়ে। ঠিক যা শুনেছিলাম, বাস্তবে উনি তাই। মাটির মানুষ। আমাদের ম্যাচ দেখেছিলেন। ড্রেসিংরুমে এসে কথা বলেছিলেন। সকলকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। এত বড় তারকা আমাদের সমর্থনে গলা ফাটালে বাড়তি তাগিদ অনুভব করি।’
আরও পড়ুন: ওঁদের গল্পই জিতেছিল অস্কার, এবার বোমান-বেইলির সঙ্গে দেখা করলেন ধোনি