সন্দীপ সরকার, কলকাতা: আইপিএল তাঁর কেরিয়ারের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে। এক সময় যিনি স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, ভাবতেন দেশের সেরা আর্কিটেক্ট হবেন, তিনিই এখন বল হাতে বিস্ময়-স্পিনার। প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের কাছে আতঙ্ক সম। কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে ৪২ ম্যাচে ৪২ উইকেট। জাতীয় দলের দরজাও খুলে গিয়েছিল তাঁর সামনে। কিন্তু, চোট-আঘাত আর ধারাবাহিকতার অভাবে পিছনের সারিতে চলে গিয়েছিলেন। এবারের আইপিএলকে প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ হিসাবে দেখছেন কেকেআরের স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী (Varun Chakravarthy)। আইপিএলের (IPL 2023) প্রথম ম্যাচের আগে টিমহোটেলে বসে এবিপি লাইভ-কে একান্ত, দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিলেন। জানালেন তাঁর অঙ্গীকার, প্রস্তুতি আর স্বপ্নের কথা।
প্রশ্ন: আইপিএলে দুর্দান্ত অভিষেক। তারপর কেরিয়ারে খারাপ সময় গিয়েছে। কঠিন সময় কীভাবে কাটিয়ে উঠলেন?
বরুণ চক্রবর্তী: প্রচুর পরিশ্রম করেছি। আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখিনি। ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।
প্রশ্ন: সুনীল নারাইনও কেরিয়ারে অনেক চড়াই-উতরাই দেখেছেন। কী শিখেছেন নারাইনের কাছে?
বরুণ: প্রত্যেক বোলারের জীবনেই ভাল-খারাপ সময় থাকে। নারাইনের সঙ্গে কথা বলেছি। উৎসাহ দিয়েছে। আমাদের জুটি দাঁড়িয়ে যাবে। ওর সঙ্গে এক ড্রেসিংরুমে সময় কাটিয়ে মানসিক প্রস্তুতির দিক থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট স্পিনারদের জন্য খুব কঠিন। ব্যাটার বড় শট খেলতে পারে। এই ফর্ম্যাটে কী পরিকল্পনা থাকে?
বরুণ: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বোলারদের জন্য সত্যিই ভীষণ কঠিন। আমার সব সময় লক্ষ্য থাকে লাইন-লেংথে অভ্রান্ত থাকা। ব্যাটারদের পছন্দের শট খেলতে না দেওয়া। তাহলেই ব্যাটারদের পরীক্ষা নেওয়া যায়। উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
প্রশ্ন: ইডেনের পিচ এখন আগের মতো স্পিন সহায়ক নয়। গতি ও বাউন্স আছে। ইডেনে বল করার প্রস্তুতি কেমন চলছে?
বরুণ: ইডেনে এখন পেসাররা বেশি সুবিধা পায়। তবে বিপক্ষকে ১৭০ রানে বেঁধে রাখতে পারলে জেতার সুযোগ থাকবে। কারণ, আমাদের দলের ব্যাটিংও বেশ শক্তিশালী।
প্রশ্ন: আইপিএলে সব দলে বিগহিটার রয়েছে। কাকে বল করা সবচেয়ে কঠিন?
বরুণ: ক্রিস গেলকে বল করা সবচেয়ে কঠিন। গেলের মিসহিটও ছয় হয়ে যায়। অনেকবারই এরকম হয়েছে যে, ব্যাটে-বলে হয়নি, কিন্তু বল বাউন্ডারির বাইরে উড়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে কেকেআরের তুরুপের তাস হতে পারেন কে?
বরুণ: ঘরোয়া ক্রিকেটে দুরন্ত ছন্দে রয়েছে রিঙ্কু সিংহ। নীতীশ রানা, বেঙ্কটেশ আইয়ার, মনদীপ সিংহ, এন জগদিশান সকলেই ফর্মে রয়েছে। পরিকল্পনা কাজে লাগালে পাঞ্জাবকে হারাব আমরা। আমি ভীষণ ইতিবাচক থাকছি।
প্রশ্ন: শিখর ধবনের মতো বিধ্বংসী ব্যাটার রয়েছে পাঞ্জাব দলে। কেকেআরের অস্ত্র কারা?
বরুণ: আমি ও নারাইন ছন্দে থাকলে ম্যাচে দাগ ফেলব। লকি ফার্গুসন, উমেশ যাদব, বৈভব অরোরা সকলেই ভাল বোলার। ধবনদের বিরুদ্ধে ভালই করব আমরা।
প্রশ্ন: শ্রেয়সের না থাকা দলের কাছে কত বড় ধাক্কা? নতুন অধিনায়কের অধীনে প্রস্তুতি কেমন হচ্ছে?
বরুণ: শ্রেয়স আমাদের দলের বড় ভরসা। ওর না থাকাটা ধাক্কা। তবে বাকিরা সেই অভাব পূরণ করে দিতে পারে। আমাদের হাতে বিকল্প রয়েছে।
প্রশ্ন: পাঞ্জাবের জনি বেয়ারস্টো না থাকাটা কি কেকেআরের কাছে বাড়তি সুবিধা?
বরুণ: বেয়ারস্টোর না থাকা ওদের কাছে বিরাট ধাক্কা। আমাদের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তবে আইপিএলে সব প্লেয়ারই ভাল।
প্রশ্ন: নতুন কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের প্রশিক্ষণে প্রথম এক সপ্তাহ কাটানোর অভিজ্ঞতা কেমন?
বরুণ: খুব খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েও উনি আগ্রহী। সব কিছুর উত্তর জানা আছে। ওঁর প্রশিক্ষণ ফল দেবে বলেই বিশ্বাস। ঘরোয়া ক্রিকেটে পণ্ডিত কিংবদন্তি। যে দলের দায়িত্ব নিয়েছেন, ট্রফি দিয়েছেন।
প্রশ্ন: আইপিএলে ভাল পারফর্ম করলে জাতীয় দলের দরজা খুলে যেতে পারে। সামনে বিশ্বকাপ...
বরুণ: বিশ্বকাপের দলে সুযোগের জন্য মরিয়া নই। আইপিএলে ভাল খেলতে হবে। পারফর্ম করতে হবে। ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলতে হবে। বাকিটা আমার হাতে নেই।
প্রশ্ন: দলের মালিক শাহরুখ খানের থেকে কোনও বার্তা পেলেন?
বরুণ: গ্রুপ কল করে দলের সকলের সঙ্গে কথা বলেছেন শাহরুখ। মজা করেছেন। আমাদের হাসিয়েছেন। কখনও চাপ দেন না। উনি সব সময় চাপমুক্ত থাকার কথা বলেন।
প্রশ্ন: আইপিএল ২ মাসের টুর্নামেন্ট। ক্রিকেটের বাইরে সময় কাটান কীভাবে?
বরুণ: আড়াই-তিন মাস পরিবার ছেড়ে থাকা সহজ নয়। আমার সদ্য পুত্রসন্তান হয়েছে। নাম রেখেছি আত্মন। ওকে নিয়ে দলের সঙ্গে সর্বত্র ঘোরাঘুরি করা সম্ভব নয়। তাই স্ত্রী ও পুত্র শিবিরে নেই। তবে আইপিএল জিতলে ট্রফিটা পুত্রসন্তানকেই উৎসর্গ করব। পরিবারের সদস্যরাও আমাদের জন্য কম আত্মত্যাগ করে না।