সন্দীপ সরকার, কলকাতা: কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) নামছে ঘরের মাঠে। ইডেনে (Eden Gardens) চলতি আইপিএলে তৃতীয় ম্যাচ নাইটদের। প্রতিপক্ষ চেন্নাই সুপার কিংস (Chennai Super Kings)।


কিন্তু সত্যিই কি ইডেনে কেকেআর তাদের হোম ম্যাচ খেলতে নামছে? নাকি অন্তত রবিবারের জন্য মাঠ ভাড়া নিয়ে ফেলেছে সিএসকে?


দুপুর থেকে ময়দানে হলুদ ঝড়। ঝড় বললেও হয়তো কম বলা হয়। বলা উচিত ঘূর্ণিঝড়। সাইক্লোন। রবিবার ইডেনের যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রে একজন। তিনি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক।


সিএসকে জার্সিতে অনন্য সব কীর্তি রয়েছে। ক্যাপ্টেন কুলের হাতে উঠেছে চার-চারটি আইপিএল ট্রফি। একচল্লিশেও অপ্রতিরোধ্য ধোনি। বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখিয়ে চলেছেন। চলতি আইপিএলে ২১৭ স্ট্রাইক রেটে রান করছেন ধোনি। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ১৭ বলে তাঁর অপরাজিত ৩২ রানের ইনিংস প্রায় ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছিল সিএসকে-কে।


ধোনির কি এটাই শেষ আইপিএল? এবারের আইপিএল খেলেই কি বুটজোড়া চিরকালের মতো তুলে রাখবেন মাহি?


ধোনি নিজে কিছু বলেননি। তবে তাঁর কেরিয়ার নিয়ে কে আর কবে পূর্বাভাস করতে পেরেছে? ধোনি যে টেস্ট থেকে অবসর নেবেন, ঘোষণার আগে খোদ কোচ রবি শাস্ত্রীও তা ঘুণাক্ষরে টের পাননি। তবে ধোনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এবারের আইপিএলের পর তাঁকে আর দেখা নাও যেতে পারে। তারপর থেকেই রবিবাসরীয় ম্যাচ নিয়ে উন্মাদনার পারদ তুঙ্গে। কেন?


কারণ, ধোনির শেষ আইপিএল হলে ২৩ এপ্রিলের ম্যাচ হতে পারে শেষবারের মতো ধোনির ইডেনে খেলা। তাই মাহি-দর্শনের সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না কেউই। কেকেআরের হোম ম্যাচে ধোনির জন্য আবেগের যা প্লাবন, তাতে ক্যাপ্টেন কুল স্বয়ং বিভ্রান্ত হতে পারেন। কিংবদন্তি অধিনায়কের মনে হতে পারে, এটা তো মেরিনা বিচের পাশের স্টেডিয়াম নয়। মাঠ লাগোয়া সমুদ্র নেই। রয়েছে গঙ্গা। পাশে বাবুঘাট। চিপকের সঙ্গে ইডেন গার্ডেন্সের বিস্তর ফারাক। মিল শুধু একটা জায়গায়। সেটা হল ধোনির জন্য নিঃশর্ত সমর্থনে। শ্রদ্ধায়। ভালবাসায়।


শুধু ধোনিকে দেখার জন্য দুপুর থেকে জনতার প্লাবন। সকলের গায়ে ধোনির জার্সি। পিঠে লেখা, ধোনি। জার্সি নম্বর ৭।


ঝাড়গ্রাম লাগোয়া গোপীবল্লভপুর থেকে এসেছেন সুমিত দে, কৃষ্ণগোপাল মহাপাত্র, সুমিত কুণ্ডু। সকলেই ছাত্র। শুধু ধোনিকে দেখার জন্য এক মাস আগে টিকিট কেটেছেন। পৌঁছে গিয়েছেন কলকাতায়। ধোনির জার্সি পরে গালে এমএসডি-র ছবি আঁকিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছিলেন রোহিত মুর্শেদ। বহরমপুর থেকে এসেছেন। বললেন, 'টিকিট কেনার টাকা ছিল না। কিন্তু অনলাইনে এত দ্রুত টিকিট বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল যে, অপেক্ষা করার উপায় ছিল না। মোবাইল ফোন বিক্রি করে সেই টাকায় টিকিট কেটেছি। ধোনি-দর্শনের এই সুযোগ হারাতে চাই না।'



বৃষ্টির ভ্রুকুটি রয়েছে। রাত ন’টায় নামতে পারে বারিধারা। কিন্তু ধোনি উপাসক আমজনতার তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। বৃষ্টি হলেও ম্যাচ যাতে পণ্ড না হয়, তার জন্য তৎপর সিএবি। কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় জানালেন, ম্যাচের সময় থাকবেন ৭০ জন মাঠকর্মী। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে তিনটি সুপার সপার।


সব মিলিয়ে জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা। সকলের প্রার্থনা, ধোনির হেলিকপ্টার যেন ইডেনের আকাশ চিরে আছড়ে পড়ে গ্যালারিতে। আর জয়োধ্বনি ওঠে, মাহি মার রহা হ্যায়...


আরও পড়ুন: মিডল স্টাম্প দু'টুকরো করে দিলেন অর্শদীপ, বিরাট আর্থিক ক্ষতির মুখে আইপিএল