কলকাতা: আইপিএলে (IPL) বরাবরের সবচেয়ে তারকাখচিত দল। যে দলের ব্যাটিং অর্ডারে নাকি পরপর নামতেন ক্রিস গেল, এ বি ডিভিলিয়ার্স ও বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। অথচ সেই দলের ট্রফির ভাঁড়ার শূন্য? অবিশ্বাস্য শোনালেও, এটাই সত্যি। গত ১৫ বছরের আইপিএলে কোনওদিন চ্যাম্পিয়ন হয়নি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (RCB)। তিনবার ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছে। বিশাল ফ্যান বেস। নক্ষত্রখচিত দল। কখনও দীপিকা পাড়ুকোন, তো কখনও ক্যাটরিনা কাইফের মতো তারকা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। অথচ ট্রফির দেখা নেই। এবার কি শাপমোচন হবে? প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হবে আরসিবি? কেমন হয়েছে এবারের দল? নিমেষে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো অস্ত্র রয়েছে হাতে? আরসিবি-র হাল হকিকত নিয়ে হাজির এবিপি লাইভ।


শক্তি


আরসিবি-র সবচেয়ে বড় শক্তি দলের টপ অর্ডার ব্যাটিং। ওপেন করতে পারেন বিরাট কোহলি ও অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোহলির স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৪০। রয়েছে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি। আইপিএলেও কোহলির ঈর্ষণীয় রেকর্ড। ২২৩ ম্যাচে ৬৬২৪ রান। ৫টি সেঞ্চুরি, ৪৪টি হাফসেঞ্চুরি। গত আইপিএল ভাল যায়নি কোহলির। ১৬ ম্যাচে মাত্র ৩৪১ রান করেছিলেন। এবার কিন্তু ছন্দে রয়েছেন বিরাট। আইপিএলে দুরন্ত রেকর্ড ডুপ্লেসিরও। ১৩০-এর ওপর স্ট্রাইক রেট রেখে ১১৬ ম্যাচে ৩৪০৩ রান রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার তারকার। তিনে নামতে পারেন রজত পতিদার। গত আইপিএলের অন্যতম সেরা আবিষ্কার। গতবার ৮ ম্যাচে ৩৩৩ রান করেছিলেন। ১৫২-র ওপর স্ট্রাইক রেট ছিল। এবারও দলের ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা। সঙ্গে রয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও দীনেশ কার্তিক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুজনে ব্যাট হাতে কী করতে পারেন, খুব ভাল মতো জানেন প্রতিপক্ষ বোলাররা। বল হাতেও কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেন ম্যাক্সওয়েল। বোলিংয়ের সেরা দুই অস্ত্র মহম্মদ সিরাজ ও হর্ষল পটেল। সিরাজ বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন। সেই ফর্ম বজায় রাখতে পারলে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলবেন সিরাজ। সঙ্গে অলরাউন্ডার হিসাবে গত আইপিএলে নজর কাড়া বাংলার শাহবাজ আমেদও দলকে ভরসা দিতে পারেন।


দুর্বলতা


আরসিবি-র সবচেয়ে বড় কাঁটা স্পিন বিভাগ। যুজবেন্দ্র চাহালকে ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে আর বিশ্বমানের কোনও স্পিনার নেই দলে। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, কর্ণ শর্মা, শাহবাজ, ম্যাক্সওয়েলরা থাকলেও ঘূর্ণিতে কিস্তিমাত করে দেওয়ার মতো পারফরম্যান্স এখনও দেখাতে পারেননি। হাসারাঙ্গা গত আইপিএলে ১৬ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিলেও ওভার প্রতি প্রায় ৮ রান করে খরচ করেছেন। স্লগ ওভারে হর্ষল পটেল বল হাতে ব্যর্থ হলে ভাল বিকল্প নেই হাতে। জস হ্যাজলউডের বল কার্যকরী হলেও গতি কম হওয়ায় ব্যাটাররা শট খেলার বাড়তি সময় পেয়ে যান। ইংল্যান্ডের তারকা উইল জ্যাকসকে নিলাম থেকে দলে নেওয়া হলেও চোটের জন্য গোটা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছেন। তবে আরিসিবি শিবিরের সবচেয়ে বড় সমস্যা বড় ম্যাচের ব্যর্থতা। অনেকে মজা করে বলে থাকেন, আরসিবি আইপিএলের দক্ষিণ আফ্রিকা। যারা গোটা টুর্নামেন্টে ভাল খেললেও বড় ম্যাচে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তিনবার ফাইনালে উঠেও ট্রফি পায়নি আরসিবি। বড় ম্যাচের ব্যর্থতা ভোগাতে পারে দলকে।


এক্স-ফ্যাক্টর


যে দলে বিরাট কোহলি রয়েছেন, সেই দলের এক্স-ফ্যাক্টর হিসাবে কি আর কিছু ভাবা যায়? ব্যাটে হোক বা ফিল্ডিংয়ে, কোহলি মানেই ভরপুর বিনোদন। ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্ক। মাঠের আগ্রাসন প্রতিপক্ষ শিবিরকে ভাবিয়ে তুলতে পারে। কোহলি মাঠে থাকা মানেই সব সময় ম্যাচ অন। সঙ্গে বলতে হবে ডিকে-র কথা। দীনেশ কার্তিক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শটের এত বৈচিত্র খুব কম ব্যাটারেরই রয়েছে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলও স্কুপ করে গ্যালারিতে ফেলে দিতে পারেন। উইকেটকিপার হিসাবেও নির্ভরযোগ্য।


গেমচেঞ্জার


অবশ্যই গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। যিনি একা হাতে ২-১ ওভারের মধ্যে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের জন্য তাঁকে বলা হয় ম্যাড ম্যাক্স। বিস্ফোরক ব্যাটিং। কার্যকরী বোলিং। দুরন্ত ফিল্ডিং। ম্যাক্সওয়েল মানেই সম্পূর্ণ প্যাকেজ। শুধু গত দুটি আইপিএল মিলিয়ে ৭৯টি চার ও ৩৬টি ছক্কা মেরেছেন। গত আইপিএলে বল হাতে ওভারপ্রতি সাতেরও কম রান খরচ করে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। এবারও বিপক্ষের ত্রাস হয়ে উঠতে প্রস্তুত ম্যাক্সওয়েল।



ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। চ্যাম্পিয়্ন্স ট্রফি। টেস্টে বিশ্বের সেরা দলের শিরোপা। ক্রিকেট বিশ্বের প্রায় সমস্ত কোহিনূর রয়েছে বিরাট কোহলির ঝুলিতে। শুধু নেই আইপিএল। এবার কি অপেক্ষার অবসান হবে?  আইপিএলে আরসিবির প্রথম ম্যাচ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে। ঘরের মাঠ বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে, ২ এপ্রিল। তারপরই কেকেআরের বিরুদ্ধে খেলতে কলকাতায় আসবেন কোহলিরা। ভক্তরা আরসিবি শিবিরে প্রথম ট্রফি দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন। প্রত্যাশা পূরণ করার চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে কোহলিদের।



আইপিএলের হাঁড়ির খবর, সব দলের চুলচেরা বিশ্লেষণ জানতে চোখ রাখুন এবিপি লাইভে।


আরও পড়ুন: পৌঁছে গেলেন উমেশ-শার্দুল, স্থানীয় ক্রিকেটের জন্য বাংলা বনাম কেকেআর প্রস্তুতি ম্যাচ বাতিল