কলকাতা: ইডেনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে বড় জয় চেন্নাই সুপার কিংসের। টানা চার ম্যাচ হেরে কোণঠাসা কলকাতা নাইট রাইডার্স। জিতে স্বস্তিতে বিরাট কোহলিরা। আইপিএলের সেরা পাঁচ খবর এক ঝলকে।
টানা চার হার কেকেআরের
হারের হ্যাটট্রিকের পর পয়েন্ট টেবিলে আইসিইউতে রয়েছে দল। অন্তত জেনারেল বেডে ফেরার জন্য জয় আর ২ পয়েন্ট আপদকালীন ওষুধের কাজ করতে পারত। কিন্তু সঞ্জীবনীর দেখা পেল না কলকাতা নাইট রাইডার্স। উল্টে ঘরের মাঠে ফের ৪৯ রানে হারের পটাশিয়াম সায়ানাইড হজম করতে হল। ৭ ম্যাচের পাঁচটিতে হেরে পয়েন্ট টেবিলে আট নম্বরে ধুঁকছে কেকেআর। টানা চার ম্যাচে হেরে প্লে অফের দৌড় থেকে নক আউটের মুখে শাহরুখ খান-জুহি চাওলার যোদ্ধারা।
মাথার ওপর চেন্নাই সুপার কিংসের ২৩৫/৪ স্কোরের পাহাড়। চলতি আইপিএলে সবচেয়ে বেশি স্কোর। শুরু থেকে আস্কিং রেট সাড়ে এগারো। তার মধ্যে শুরুতেই এন জগদিশান, সুনীল নারাইন ও বেঙ্কটেশ আইয়ারের উইকেট খুইয়ে ৪৬/৩ হয়ে যাওয়া কেকেআর। সেখান থেকে পাল্টা লড়াই শুরু করলেন জেসন রয়। ইংরেজ তারকা দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে হারা ম্যাচেও দলের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন। রবিবারও তিনি যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, কেকেআরের পাদপ্রদীপ জ্বলছিল। ফিল্ডিং করার সময় সামান্য চোট লেগেছিল। সে জন্য ইনিংস ওপেন করতে নামেননি রয়। পাঁচ নম্বরে নেমে পাল্টা মারের দাওয়াই প্রয়োগ করলেন। ২৬ বলে ৬১ রান করলেন ইংরেজ তারকা। তাঁর ইনিংসে ৫টি চার ও ৫টি ছক্কা। একটি ছক্কা মারলেন ৯২ মিটারের। যা এদিনের সবচেয়ে বড় ছক্কার পুরস্কারও পেল।
সঙ্গী হিসাবে পেলেন রিঙ্কু সিংহকে। ৩৩ বলে ৫৩ রান করে অপরাজিত রইলেন তিনি। ৩টি চার ও ৪টি ছক্কা। তবে ৫ ছক্কার মহাকাব্য আর হয়নি। ২৩৬ রান তাড়া করতে নেমে কেকেআর থমকে গেল ১৮৬/৮-এ। ৪৯ রানে ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে পৌঁছে গেল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সিএসকে।
মাহি ম্যানিয়া
দুপুর থেকে ময়দানে হলুদ ঝড়। ঝড় বললেও হয়তো কম বলা হয়। বলা উচিত ঘূর্ণিঝড়। সাইক্লোন। রবিবার ইডেনের যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রে একজন। তিনি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক।
সিএসকে জার্সিতে অনন্য সব কীর্তি রয়েছে। ক্যাপ্টেন কুলের হাতে উঠেছে চার-চারটি আইপিএল ট্রফি। একচল্লিশেও অপ্রতিরোধ্য ধোনি। বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখিয়ে চলেছেন। চলতি আইপিএলে ২১৭ স্ট্রাইক রেটে রান করছেন ধোনি। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ১৭ বলে তাঁর অপরাজিত ৩২ রানের ইনিংস প্রায় ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছিল সিএসকে-কে।
ধোনির কি এটাই শেষ আইপিএল? এবারের আইপিএল খেলেই কি বুটজোড়া চিরকালের মতো তুলে রাখবেন মাহি?
ধোনি নিজে কিছু বলেননি। তবে তাঁর কেরিয়ার নিয়ে কে আর কবে পূর্বাভাস করতে পেরেছে? ধোনি যে টেস্ট থেকে অবসর নেবেন, ঘোষণার আগে খোদ কোচ রবি শাস্ত্রীও তা ঘুণাক্ষরে টের পাননি। তবে ধোনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এবারের আইপিএলের পর তাঁকে আর দেখা নাও যেতে পারে। তারপর থেকেই রবিবাসরীয় ম্যাচ নিয়ে উন্মাদনার পারদ ছিল তুঙ্গে।
কোহলিদের জয়
আইপিএলে অধিনায়ক হিসেবে টানা ২ ম্যাচ জিতলেন বিরাট কোহলি। ২০১৯ সালের পর চিন্নাস্বামীতে অধিনায়ক হিসেবে নামলেন কিংগ কোহলি। আগের ম্যাচে মোহালিতে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে অধিনায়ক হিসেবে নেমে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। এদিন ফের জয় পেলেন। এবার বিরাটের নেতৃত্বে আরসিবি হারাল রাজস্থান রয়্যালসকে। ৭ রানে সঞ্জু স্যামসনের দলকে হারিয়ে দিল বিরাট বাহিনী।
অর্শদীপের কীর্তি
একটা সময় জাতীয় দলের হয়ে ডেথ ওভারে অতিরিক্ত রান খরচের জন্য কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে তাঁকে। তবে আইপিএলে দুরন্ত গতিতে ছুটছেন অর্শদীপ সিংহ (Arshdeep Singh)। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য স্পেল করে ম্যাচ জিতিয়েছেন পাঞ্জাব কিংসকে। সঙ্গে গড়ে ফেলেছেন অভিনব এক কীর্তি।
মুম্বই ইনিংসের ১৮তম ওভারে বল করতে এসে মাত্র ৯ রান খরচ করেন পাঞ্জাব কিংসের পেসার। সঙ্গে সূর্যকুমার যাদবের উইকেট তুলে নেন। শেষ ওভারেও তাঁর হাতেই বল তুলে দেন পাঞ্জাব অধিনায়ক স্যাম কারান। প্রথম বলে টিম ডেভিড সিঙ্গলস নেন। পরের বল নষ্ট করেন তিলক বর্মা। শেষ ৪ বলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জেতার জন্য প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। পরপর দুটি অনবদ্য ইয়র্কার করেন অর্শদীপ। বোল্ড করে দেন তিলক বর্মা ও নেহাল ওয়াধেরাকে। দুবারই স্টাম্প ভেঙে দেন বাঁহাতি পেসার। যার জেরে বড় ক্ষতির মুখে টুর্নামেন্টের আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
অর্জুনের পাশে
আইপিএল অভিষেকে ম্যাচে উইকেট পাননি। কিন্তু নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই উইকেট পেয়েছিলেন। প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু গতকালের ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে এক ওভারে বল করে ৩১ রান খরচ করেছিলেন। ৩ ওভার বল করে ৪৮ রান খরচ করেছিলেন। তাঁকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। অনেকেই সোশ্য়াল মিডিয়ায় খোঁচা দিয়েছিলেন অর্জুনকে কোটার প্লেয়ার হিসেবে উল্লেখ করে। তবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স কোচ মার্ক বাউচার অবশ্য পাশে দাঁড়ালেন অর্জুনের।
সচিন পুত্রের পাশে দাঁড়িয়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কোচ বলছেন, ''ক্রিকেটে সবদিন নিজের জন্য হয় না। কোনওদিন ভাল যায় তো কোনওদিন খারাপ যেতেই পারে। আমার মনে হয় অর্জুন কিছুটা চাপে ছিল। ডেথ ওভারের দিকে অর্জুনের মত অনভিজ্ঞ বোলার সাহস দেখিয়েছে, বল করার এর জন্য় বাহবা দিতেই হয়। তবে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে ভালবাসে অর্জুন। আমি জানি যে ও ঠিক ভালভাবে ফিরে আসবে আবার। আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবে। দলের প্রত্যেকে এমনকী সাপোর্ট স্টাফরা ওকে সমর্থন করছে প্রত্যেক মুহূর্তে।''