কলকাতা: আইপিএল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দিল্লি ক্যাপিটালস শিবিরে তখন প্রবল উদ্বেগ। কোয়ারেন্টিন পর্ব কাটিয়ে গত আইপিএলে দলের অন্যতম সেরা বোলার এনরিকে নোখিয়া মাঠে নামবেন, আচমকাই তাঁর করোনা রিপোর্ট এল পজিটিভ। নোখিয়া সুস্থ হলেন। হয়তো অবাকও। কারণ প্রথম একাদশে জায়গা পেলেন না! কী করেই বা পাবেন? বাইশ গজে তখন যে বল হাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ২৪ বছরের এক ভারতীয় পেসার।


আবেশ খান। আইপিএলে এবার বল হাতে তাঁর এমনই দাপট ছিল যে, অর্ধসমাপ্ত টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় দুই নম্বরে রয়েছেন। ৮ ম্যাচে ১৪ উইকেট। ইকনমি? আট রানেরও কম। আর উইকেটের ঝুলিতে বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের মতো ব্যাটিং গ্রহের সমস্ত মণিমাণিক্য় থরে থরে সাজানো।


যে পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি হিসাবে শুক্রবারই ঘোষিত ভারতীয় দলে স্ট্যান্ড বাই হিসাবে সুযোগ পেলেন। কোন দল? যাঁরা বিরাট কোহলির নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরের মাসে সাউদাম্পটনে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলবে। এবং তারপর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের মাঠে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে ভারতীয় দলের সদস্য হতে পেরেও উচ্ছ্বাসে ভাসছেন না মধ্যপ্রদেশের পেসার। ইনদওর থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভকে আবেশ বললেন, 'সুযোগ পাওয়াটা খুব ভাল অনুভূতি। তবে আমার তো কাজই এটা। উইকেট নেওয়া। তাই দলে ডাক পেয়ে অবাক হচ্ছি না।'


আইপিএলে যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, ট্রেন্ট বোল্ট, প্যাট কামিন্সদের চেয়েও বেশি প্রভাব বিস্তার করেছেন। আবেশ বলছেন, 'ম্যাচ ধরে ধরে এগিয়েছি। ঠিক করেছিলাম, ব্যাপারটাকে বেশি জটিল করে ফেলব না। আমার যেটা শক্তিশালী দিক, তাতে নজর দেব। প্রথম ম্যাচে সেভাবেই সাফল্য পেয়েছি। সেই ছন্দ পরের ম্যাচগুলোতেও ধরে রাখতে পেরেছি। ভুল করেছি হয়তো। তবে খেলতে খেলতেই সেটা শুধরেও নিয়েছি। মাঠে নেমে একটা ভাল অনুভূতি হচ্ছিল। বোলিং উপভোগ করছিলাম। সেই কারণেই হয়তো ধারাবাহিকভাবে ভাল বল করতে পেরেছি।'


টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই বোলারদের মরণফাঁদ। শুরু থেকে মার খেতে পারেন। আবার প্রথম তিন ওভার দাপুটে বোলিং করেও এক ওভারে সর্বস্ব খুইয়ে বসতে পারেন। যেমনটা চেন্নাই সুপার কিংস ম্যাচে টের পেয়েছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হর্ষল পটেল। প্রথম তিন ওভারে দুরন্ত বোলিং করার পর চতুর্থ ওভারে রবীন্দ্র জাডেজা ৩৭ রান নিয়েছিলেন! বোলারদের জন্য এরকম কঠিন এক ফর্ম্যাটে এত ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের নেপথ্যে কী? আবেশ বলছেন, 'নিজের লক্ষ্যটা এভাবে সাজিয়ে নিই যে, আমাকে ২৪টা বল করতে হবে। সেই বলগুলিতে আমার একশো শতাংশ দিতে হবে। বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে। ফিল্ডিং অনুযায়ী বল করতে হয়। ব্যাটসম্যান কী ভাবছে না ভাবছে, সেটা অনুযায়ী বল করতে হয়।' 


পরে টুর্নামেন্ট শেষ করা গেলে আইপিএলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে পার্পল ক্যাপ জেতার সুযোগ রয়েছে। আবেশ অবশ্য এখন থেকে অত কিছু ভাবতে নারাজ। বলছেন, 'পার্পল ক্যাপ পাব কি না, সেটা নিয়ে পরে ভাবব। টুর্নামেন্টের বাকি অংশ কবে হবে ঠিক নেই। সেটা চূড়ান্ত হোক, তখন দেখব। আপাতত ইংল্যান্ড সফরের দিকেই নজর। কীভাবে নিজের সেরাটা দিতে পারব, ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছি। নতুন কী কী শিখতে পারব, সেটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা শুরু করে দিয়েছি।'


দিল্লি ক্যাপিটালসে কোচ হিসাবে পেয়েছেন আর এক কিংবদন্তি রিকি পন্টিংকে। 'পন্টিং স্যার বলেন, বল করার সময় নিজের পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগাও। নিজের দক্ষতায় আস্থা রেখো। দলের প্রয়োজনে সব সময় নিজের সেরাটা দিতে হবে। মানসিকভাবে তৈরি থাকবে সব সময়। যাতে অধিনায়ক যখনই তোমার হাতে বল তুলে দেবে তুমি নিজের সেরা বোলিংটা করতে পারো। সব সময় মনে রাখবে, তোমার কাজ উইকেট নেওয়া। দলের প্রয়োজনে ২-১টা উইকেট যেন সব সময় তুলতে পারো। সেই কথা মেনে সফলও হয়েছি,' এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন আবেশ।


২০১৯ সালে বিশ্বকাপের সময় ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন ভারতীয় দলের নেট বোলার হিসাবে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে? আবেশ বলছেন, 'ওখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে ধারণা রয়েছে। জানি না এবার কীরকম আবহাওয়া থাকবে। দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে।'


যাচ্ছেন স্ট্যান্ড বাই হিসাবে। যার অর্থ, নিয়মিত পেসারদের কেউ চোট পেলে তিনি খেলতে পারেন। অস্ট্রেলিয়া সফরে এভাবেই ভাগ্য বদলে গিয়েছিল টি নটরাজন, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণদের। প্রধান বোলাররা চোট পাওয়ায় শুধু প্রথম একাদশে সুযোগই পাননি, রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। সেই পরিস্থিতিতে যদি আপনিও পড়েন? আবেশ বলছেন, 'প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়া আমার হাতে নেই। আমার হাতে যেটা রয়েছে সেটা হল পরিশ্রম করা আর নিজেকে তৈরি রাখা। সেটাই করছি।'



এবারের আইপিএলে সেরা প্রাপ্তি কী? 'বিরাট কোহলি আর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উইকেট। দুজনই কিংবদন্তি। ওদের উইকেট পেয়ে ভীষণ আনন্দ হয়েছে। মনে হয়েছে, আমিও সেরাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারব,' বলছিলেন আবেশ। যোগ করলেন, 'বায়ো বাবলের কড়াকড়ির জন্য কোহলি বা ধোনি ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়নি। ইংল্যান্ডে গিয়ে নিশ্চয়ই কোহলি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাব। সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি।'


আবেশকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ভারতীয় ক্রিকেট।