কলকাতা: মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হেলায় হারানোর পর যুদ্ধ লেগে গেল কলকাতা নাইট রাইডার্স (Kolkata Knight Riders) ক্রিকেটারদের মধ্যে!


বিস্ময়কর শোনালেও সত্যি। আর গোটা ঘটনার নেপথ্যে উঠে এল হরভজন সিংহের (Harbhajan Singh) নাম। তাঁর কথাতেই একে অপরের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন শুভমন গিল-নীতিশ রানারা!


হরভজনকে নিলামের টেবিল থেকে দলে নিয়েছিল কেকেআর। তবে আইপিএলের দ্বিতীয় পর্বে নাইটদের দুই ম্যাচের প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি তিনি। যদিও কিংবদন্তি অফস্পিনারকে নাইট শিবিরে দেখা যাচ্ছে অন্য ভূমিকায়। তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে তৎপর কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, অধিনায়ক অইন মর্গ্যানরা। হরভজন এখন শুধু কেকেআরের ক্রিকেটার নন, মেন্টরও। কখনও তিনি নেমে পড়ছেন চায়নাম্যান স্পিনার কুলদীপ যাদবের অ্যাকশন মেরামতিতে, কখনও আবার বিস্ময় স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী বা ক্যারিবিয়ান তারকা সুনীল নারাইনের সঙ্গে বসে পড়ছেন বোলিং কাটাছেঁড়া করতে।


তবে শুক্রবার হরভজন যেটা করেছেন, অভিনব। তাঁর কথায় 'মরম পিট্টি' শুরু হয়ে গেল কেকেআর শিবিরে। ক্রিকেটারেরা একে অপরের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। যে হাতের কাছে যা পারছেন ছুড়ে মারছেন। এমনকী, কারও ওপর ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকলে খুঁজে বেড়াচ্ছেন সেই রাগ মেটানোর জন্য।


আবু ধাবিতে কেকেআর শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, 'মরম পিট্টি' আসলে এক ধরনের মজার খেলা। যে খেলার নিয়ম হচ্ছে, যে হাতের কাছে যা পাবে তা ছুড়ে একে অপরকে আঘাত করা। তবে পুরোটাই খেলার ছলে। আর একে অপরের দিকে নিক্ষেপ করা হয় হাল্কা, নরম কোনও জিনিস। যাতে তা গায়ে লাগলে কারও চোট না লাগে।


আবু ধাবি থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে কেকেআর শিবিরের একজন এবিপি লাইভকে বললেন, 'গোটা ব্যাপারটাই হরভজনের মস্তিষ্কপ্রসূত। ক্রিকেটারেরা সকলে মরম পিট্টি নিয়ে মেতে উঠেছিল। খুব মজা করেছে সকলে। হরভজনের পাশাপাশি রাহুল ত্রিপাঠি ও সাপোর্ট স্টাফদের একজন খেলার নিয়ম সকলকে বুঝিয়ে দিয়েছে।'


কেকেআরের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায়, কেকেআর ক্রিকেটারেরা একে অপরের দিকে কিছু একটা জিনিস দেদার ছুড়ে চলেছেন। নীতিশ রানাকে বলতে শোনা যায় যে, তিনি শুভমন গিলকে খুঁজছেন। তাঁকেই নিশানা করে বল ছুড়বেন বলে। এবং সেই যুদ্ধে হাসিমুখে সকলকে প্রশয় জুগিয়ে চলেছেন কোচ ম্যাকালাম।


কেকেআর শিবিরের একজন এবিপি লাইভকে বলছিলেন, 'ক্রিকেটারদের হাতে ছিল স্মাইলি স্টেস বল। কেকেআরের জার্সির রংয়ের। সেই বলই একে অপরকে ছুড়ে মারছিল। আমরা প্রত্যেকেই মার খেয়েছি। তবে মজার কথা হচ্ছে, লাগছে না। ক্রিকেটারেরা সকলে খুব মজা করেছে। দলীয় সংহতি বাড়ানোর জন্য ও পরপর ম্যাচ খেলার ক্লান্তি কাটানোর জন্য এই উপায় বার করেছে হরভজন।'



আইপিএলের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হওয়ার সময় কেকেআরের ভাগ্য রীতিমতো সরু সুতোয় ঝুলছিল। শাহরুখ খান-জুহি চাওলার দলের বাকি ছিল সাত ম্যাচ। প্লে অফে ওঠার দৌড়ে থাকতে হলে যার মধ্যে ৫টিতে জিততেই হতো কেকেআরকে। তবে মরুদেশে পরপর দুই ম্যাচে দুই শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের চার নম্বরে উঠে এসেছে কেকেআর। বদলে গিয়েছে পুরো শিবিরের চরিত্রটা।


কেকেআর শিবিরের একজন বলছিলেন, 'দলের ছবিটা যে কতটা বদলেছে, সেটা আমরা যারা কেকেআর অন্দরমহলে রয়েছি খুব ভাল মতো টের পাচ্ছি। গোটা দলের শরীরী ভাষাটাই বদলে গিয়েছে। শক্তিশালী দুই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পরপর ম্যাচ জিতে গোটা দল মনে করতে শুরু করেছে যে, হ্যাঁ, আমরাও পারি। ট্রফির স্বপ্ন দেখা ভাল মতোই শুরু হয়ে গিয়েছে।'


করোনার ধাক্কায় আইপিএল বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় যে দল পয়েন্ট টেবিলে ধুঁকছিল, যাদের দেখে অতি বড় সমর্থকও প্লে অফের স্বপ্ন দেখা থামিয়ে দিয়েছিল, জোড়া জয়ের সঞ্জীবনী তাদের চনমনে করে তুলেছে। দলের মানসিকতার এই বদলের নেপথ্যে থেকে যাচ্ছে জাতীয় দলের হয়ে বহু যুদ্ধ জয়ের সৈনিক হরভজন সিংহের মেন্টর হিসাবে ভূমিকাও।


রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভারে ভারতকে হারিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া, জিতল সিরিজও