কলকাতা: আইপিএল শুরু হতে আর তিন সপ্তাহ বাকি। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে গিয়ে অনুশীলনে নেমে পড়েছে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। কে এল রাহুলের নেতৃত্বে আইপিএল অভিযান শুরু করার আগে প্রস্তুতিতে খামতি রাখতে চায় না প্রীতি জিন্টার দল। ম্যাচে বল করার জন্য ছটফট করছেন অধরা আইপিএল ট্রফি জয়ের স্বপ্নে বুঁদ পঞ্জাব শিবিরের সেরা বোলিং অস্ত্র মহম্মদ শামি। প্র্যাক্টিসের ফাঁকে দুবাই থেকে মোবাইল ফোনে একমাত্র এবিপি আনন্দ-কেই দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিলেন বাংলার ২৯ বছরের ডানহাতি পেসার। কোচ অনিল কুম্বলে থেকে শুরু করে করোনা-কালে ক্রিকেট, রিভার্স স্যুইং, উত্তরপ্রদেশের ফার্মহাউসে প্রস্তুতি শিবির, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার, সব ব্যাপারেই খোলামেলা আড্ডায় জাতীয় দলের তারকা।


 


প্রশ্ন: আপনিও সম্ভবত ভাবেননি যে, করোনা আবহে এবারের আইপিএল হবে। তব সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু হতে চলেছে। আর কয়েকদিন মাত্র বাকি। কতটা উত্তেজনা টের পাচ্ছেন?

মহম্মদ শামি: সকলেই খুব উত্তেজিত। সত্যিই একসময় ভাবিনি যে, এবারের আইপিএল হবে। গোটা বিশ্বে যা চলছে। করোনার ধাক্কায় সব কিছু বদলে গিয়েছে। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়েছে। খেলাধুলোর জগৎ আমূল পাল্টে গিয়েছে। অনেক বিধিনিষেধ মেনে চলতে হচ্ছে। তবে তার পরেও মাঠে ফিরতে পারাটা দারুণ অনুভূতি। খুব আনন্দ হচ্ছে। উত্তেজনায় ফুটছি ভেতর ভেতর।



প্রশ্ন: প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটে আপনার শেষ ম্যাচ ছিল মার্চ মাসের গোড়ায়। ক্রাইস্টচার্চে, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে। তারপর প্রায় ৬ মাস মাঠের বাইরে কাটাতে হল। তারপরই আইপিএলের মতো টুর্নামেন্টে মাঠে নামা কতটা চ্যালেঞ্জিং?

শামি: এতদিন পর মাঠে নামতে হলে সমস্যা তো হয়ই। যদিও আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। লকডাউনের প্রায় পুরো সময়টাই ছিলাম উত্তরপ্রদেশের আমরোহায় আমার গ্রামের বাড়িতে। সেখানে আমার ফার্মহাউসে পিচ, নেট প্র্যাক্টিসের ব্যবস্থা, জিম সবই রয়েছে। সেখানেই নিয়মিত প্র্যাক্টিস করেছি। ফিটনেস ট্রেনিং করেছি। তাই প্রস্তুতির মধ্যেই ছিলাম। তবে সকলের তো সেই সুবিধা নেই। মোটের ওপর বেশিরভাগ ক্রিকেটারেরই এতদিন পর প্রতিযোগিতামূলক আবহে ফিরতে একটু অসুবিধা হবে।



প্রশ্ন: ২০১৫ বিশ্বকাপ চলাকালীন আপনার হাঁটুতে চোট লাগে, অস্ত্রোপচার করাতে হয়। তারপর দীর্ঘদিন ছিলেন মাঠের বাইরে। আর এবার করোনার কারণে প্রায় ৬ মাস মাঠ থেকে দূরে থাকতে হল। কোনটা বেশি কঠিন?

শামি: অবশ্যই চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকাটা অনেক বেশি কঠিন ছিল। করোনার জন্য আমাদের রোজনামচা বিপর্যস্ত। দীর্ঘদিন খেলাধুলো বন্ধ ছিল। তবে অতিমারির জন্য আমার ক্রিকেট প্রস্তুতিতে ছেদ পড়েনি। ফার্মহাউসে নিজস্ব পরিকাঠামোয় প্র্যাক্টিস করতে পেরেছি বলে খেলার মধ্যেই রয়েছি। কিন্তু চোটের ধাক্কায় মাঠের বাইরে থাকার সময় নিজের প্রিয় কাজটাই করতে পারিনি। ওটা অনেক বেশি কঠিন অধ্যায়।



প্রশ্ন: চোটের জন্য যখন মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে, তখন আপনার জায়গায় জাতীয় দলে খেলেছেন ভুবনেশ্বর কুমার-সহ একাধিক পেসার। কখনও দুশ্চিন্তা হয়নি যে, যদি পরিবর্ত কেউ সফল হয়ে যায়, আপনার দলে ফেরাটা আরও কঠিন হয়ে যাবে?

শামি: দেখুন, চোটআঘাতের কারণে কেউ দল থেকে ছিটকে গেলে কাউকে তো সেই জায়গায় খেলাতেই হবে, তাই না? আমি বরাবর বিশ্বাস করে এসেছি যে, দলে থাকতে গেলে পারফর্ম করতেই হবে। নিজের দক্ষতায় আস্থা রয়েছে। বোলিংটা ঠিক মতো করতে পারলে, উইকেট তুলতে পারলে, আর কিছু নিয়ে ভাবার প্রয়োজন হয় না। পারফর্ম করাটাই চাবিকাঠি। অন্য কিছু ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। কখনও ভাবিনি আমার জায়গা চলে যাবে।



প্রশ্ন: ২০১৪ সালে যখন আইপিএলের প্রথম পর্ব সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে হয়েছিল, দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে খেলেছিলেন আপনি। ৫ ম্যাচে ১৮০ রান খরচ করে পেয়েছিলেন মাত্র ৩ উইকেট। কতটা কঠিন ওই প্রবল গরমে বল করা?

শামি: বিশ্বের যে কোনও প্রান্তেই বল করার সময় চ্যালেঞ্জ থাকেই। তবে ইউএই-তে ফারাক হয়ে দাঁড়ায় দাবদাহ। প্রবল গরমে একই গতিতে বল করাটা কঠিন। পেসারদের জন্য সেরকম সুবিধা নেই উইকেটে। বোলিংয়ের সময় মাথায় রাখতে হবে সঠিক জায়গায়, অভ্রান্ত নিশানায় বল করছি কি না।



প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে এমনিতেই ব্যাটসম্যানদের খেলা মনে করা হয়। তার ওপর সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে পিচ ব্যাটিং সহায়ক হয়। এরকম বাইশ গজে বল করার সময় কীসে জোর দেবেন?

শামি: ঠিক জায়গায় বলটা রাখতে হবে। এলোমেলো বোলিং চলবে না। ওভারের ৬টা বলই সঠিক জায়গায় পিচ করাতে হবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এমনই যে আপনি ৫টি বল অসাধারণ করলেন, আর একটি আলগা ফেলে দিলেন, ব্যাটসম্যান বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দেবে। আগের বলগুলোতে শুধুমাত্র সিঙ্গলস বেরলেও শেষ বলে মার খেয়ে গেলে দেখা যাবে এক ওভারে ১০ রান উঠে গিয়েছে।



প্রশ্ন: আপনি রিভার্স স্যুইংয়ের অন্যতম সেরা শিল্পী। করোনা আবহে বল পালিশ করতে এখন আর থুতুর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অথচ রিভার্স স্যুইংয়ের মোদ্দা কথাই হল পালিশের হেরফেরে বলের ওজনের তারতম্য ঘটানো...

শামি: আপাতত ঘাম দিয়ে বল পালিশ করছি। তবে এখনও ম্যাচ খেলিনি। তাই. থুতু ছাড়া বল পালিশ করায় স্যুইং বা রিভার্স স্যুইংয়ে কোনও প্রভাব পড়ছে কি না, সেভাবে বুঝে উঠতে পারিনি। ম্যাচ খেললে সেটা বোঝা যাবে। দেখা যাক কী দাঁড়ায়।



প্রশ্ন: উত্তরপ্রদেশে আপনার ফার্মহাউসে আপনার সঙ্গেই প্র্যাক্টিস করেছিলেন সুরেশ রায়না, সরফরাজ খান, পীযূষ চাওলারা। কেমন ছিল সেই সেশনগুলো?

শামি: খুব ভাল প্র্যাক্টিস হয়েছে। রায়নার মতো বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানকে বল করতে পারলে প্রস্তুতি তো ভাল হবেই। আর সেই সময় বল করতে পারাটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওই সেশনগুলোর উপকার আশা করি আইপিএলে পাব।



প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফর্ম্যাট মিলিয়ে ৩৩৬ উইকেট। ওয়ান ডে-তে ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে কম, মাত্র ৫৬ ম্যাচ খেলে একশো উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছে যাওয়া। এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মঞ্চের অভিজ্ঞতা কেমন?

শামি: সত্যি কথা বলতে গেলে, আমি কখনও রেকর্ডের কথা ভাবিনি। যখনই নতুন বল হাতে পেয়েছি, নিজের একশো শতাংশ দিয়েছি। তবে সব সময়ই চাই দলকে জেতাতে। দলের জয়ে সামান্যতম অবদান রাখতে পারলেই খুশি হই। আর ক্রিকেট মাঠে যখনই নামি, সব সময় মনে হয় নতুন কিছু শিখব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে অনেক কিছু শিখেওছি। বোলার হিসাবে আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছি।



প্রশ্ন: কিংস ইলেভেন পঞ্জাব এখনও পর্যন্ত একবারও আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সেরা পারফরম্যান্স বলতে ২০১৪ সালের রানার আপ। এবারের পঞ্জাব দলটা কেমন?

শামি: কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের এবারের দলটা বেশ ভাল। দলে এক ঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার। গড় বয়স কম। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দলের অন্দরের পরিবেশটাও চমৎকার। বোঝাপড়া দারুণ। একে অপরের শক্তি-দুর্বলতাগুলো বুঝছি। দল হিসাবে এবার আমরা ভালই করব।



প্রশ্ন: এবার অনিল কুম্বলে আপনাদের কোচ। এর আগে জাতীয় দলেও কিংবদন্তি লেগস্পিনারের প্রশিক্ষণে খেলেছেন। কোচ কুম্বলের বিশেষত্ব কী?

শামি: অনিল ভাইয়ের সঙ্গে আগেও অনেক সময় কাটিয়েছি। জাতীয় দলের ওর প্রশিক্ষণে খেলেছি। আমাদের রসায়নটা দারুণ। একে অপরকে ভাল বুঝি। আমার বোলিংয়ের শক্তি-দুর্বলতাগুলো অনিল ভাই জানে বলে ওর পরামর্শ মেনে নিজেকে আরও ক্ষুরধার করে তুলছি। কোচ হিসাবে অনিল ভাই সব সময়ই জয়ের জন্য আগ্রাসী থাকে। ওর অধীনে আমরা এবারের আইপিএলে সকলের নজর কেড়ে নেব বলেই আমার বিশ্বাস।