কলকাতা: আইপিএল নিলামের টেবিল থেকে যেদিন তাঁকে কিনেছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব, সেদিনই রঞ্জি ট্রফিতে কেরলের বিরুদ্ধে সরাসরি ম্যাচ জেতে বাংলা। টিমবাসে করে হোটেলে ফেরার পথে খবর পেয়েছিলেন, প্রথমবার আইপিএলে নামার সুযোগ এসে গিয়েছে তাঁর সামনে। সেই থেকে অপেক্ষার প্রহর গোণা শুরু। অবশেষে বৃহস্পতিবার দুবাই রওনা হয়ে গেলেন ঈশান পোড়েল। বাংলার পেসারকে স্বস্তি দিচ্ছে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট। তিনবার টেস্ট করে তিনবারই নেগেটিভ এসেছে তাঁর রিপোর্ট।

বেঙ্গালুরু থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে ঈশান বললেন, “কলকাতায় একটা করোনা পরীক্ষা করে এসেছিলাম। দিল্লিতে দুটো পরীক্ষা হয়। সব রিপোর্ট নেগেটিভ। দুবাই বিমানবন্দরে একবার পরীক্ষা হবে। আর একবার পরীক্ষা হবে হোটেলে পৌঁছে। তবে আর মনে হয় সমস্যা হবে না।”



জীবনের প্রথম আইপিএল খেলতে যাচ্ছেন। কতটা উত্তেজনা টের পাচ্ছেন? “কেরলের বিরুদ্ধে রঞ্জিতে সরাসরি ম্যাচ জিতে বাংলার টিমহোটেলে ফেরার সময় বাসে যখন নিলামে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবে সুযোগ পাওয়ার খবর পেয়েছিলাম, তখন থেকেই উত্তেজিত। তবে করোনা পরিস্থিতিতে ভাবিনি টুর্নামেন্টটা শেষ পর্যন্ত হবে বলে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আর সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিদের ধন্যবাদ। এই অবস্থাতেও টুর্নামেন্টটা করা যাচ্ছে বলে,” বলছিলেন বাংলার ডানহাতি জোরে বোলার। ঈশান যোগ করলেন, “তবে মনে সংশয় ছিল। এই যেমন বেঙ্গালুরু আসার সরাসরি বিমান পাইনি। লক্ষ্নৌ হয়ে দিল্লি। তারপর বেঙ্গালুরু। এখান থেকে দুবাই। বিমানে সহযাত্রীরাও ছিল। কখন যে কীভাবে সংক্রমণ হয়। তবে তিনটি পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হওয়ায় সাময়িকভাবে স্বস্তিতে।”



জীবনের প্রথম আইপিএলের আগে রোমাঞ্চিত হলেও, ফাঁকা মাঠে খেলা হবে ভেবে বিমর্ষ ঈশান। বলছেন, “ভাবতে পারিনি দর্শকশূন্য মাঠে আইপিএল খেলতে হবে।” আগে কখনও সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে খেলেননি। ঈশান বলছেন, “সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে উইকেট হয়তো একটু শুকনো, ব্যাটিং সহায়ক হবে। সেই সঙ্গে প্রবল গরম। তবে কলকাতায় আমরা প্রায় এই ধরনের পরিবেশ-পরিস্থিতিতে খেলে অভ্যস্ত। ভারতে আমরা তো আর সবুজ বাউন্স-ভরা উইকেট পাই না। আর ইউএই-তে তিনটি মাঠে খেলা। যদি একেবারে ঘাসহীন সাদা উইকেট দেয়, তাহলে টুর্নামেন্টের পরের দিকে পিচের বাঁধন ধরে রাখা মুশকিল হবে। উইকেট ভেঙে যাবে। ১২০ রানের ম্যাচ হবে। স্পিনারদের বল হয়তো বনবন করে ঘুরবে। তাই মনে হয় না একেবারে পাটা পিচ হবে না। ওখানে গিয়ে যাত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারব, তত ভাল।”

কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের এবারের দল কেমন হয়েছে বলে মনে হয়? “বেশ ভাল দল হয়েছে। দলের গড় বয়স অনেক কম। পাশাপাশি ক্রিস গেইল, মহম্মদ শামি, কে এল রাহুল, শেলডন কটরেল, নিকোলাস পুরান, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মতো অভিজ্ঞরা রয়েছে। সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের  দারুণ সংমিশ্রণ। বাংলা দলেও এবার এই জিনিসটা হয়েছিল। তিন-চারজন সিনিয়র। বাকিরা সবাই নতুন। দারুণ খেলে রঞ্জি ফাইনালে পৌঁছেছিলাম আমরা,” বলছেন ঈশান।



কোচ হিসাবে পাবেন অনিল কুম্বলেকে। সেটা কতটা প্রভাব ফেলবে? ঈশান বলছেন, “আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে খুব সক্রিয় কুম্বলে স্যার। সব সময় গ্রুপে লেখেন, ভাল থাকো। নিজের খেয়াল রাখো। উই উইল রক দিজ সিজন। ভীষণ উৎসাহ দেন। ওঁর মতো একজন কিংবদন্তিকে কোচ হিসাবে পাওয়াটা সৌভাগ্যের বিষয়। ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক অসাধারণ। আশা করছি ওঁর প্রশিক্ষণেই এবার প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হবে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব।”

করোনার জন্য এতদিন ক্রিকেটের বাইরে। সমস্যা হবে না? ঈশান বলছেন, “বেশিরভাগ ক্রিকেটারই ক্রিকেট থেকে পাঁচ-ছ মাস বাইরে। সকলেরই মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দেখছিলাম, ইমরান তাহির ফুলটস বল করছে। অনেকে ব্যাটিংয়ের সময় টাইমিং করতে পারছে না। তাই ঘাবড়াচ্ছি না।” তিনি আরও বলছেন, “নিজের দক্ষতায় আস্থা রয়েছে। বাংলার হয়ে ১৫-১৬টা টি-টোয়েন্টি খেলেছি। সেখানে আমার ইকনমি ৬.১১। খারাপ নয়। আশা করছি আইপিএলে সেটা ধরে রাখতে পারব।”



কিংস ইলেভেন পঞ্জাব দলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত থাকেন টিম মালকিন প্রীতি জিন্টা। তাঁর কোনও বার্তা পেলেন? ঈশান বলছেন, “এখনও কোনও বার্তা পাঠাননি ম্যাম। তবে উনি ভীষণরকম ইতিবাচক। হেরে গেলেও ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ান। টিম ম্যানেজমেন্ট এত সমর্থন করলে মাঠের পারফরম্যান্সে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েই।”

জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঢুকে পড়তে হবে বলে বাইরে খাওয়াদাওয়া, শপিং বন্ধ। অবসর সময় কাটাবেন কীভাবে? ২১ বছরের পেসার বলছেন, “প্লে স্টেশন খেলতে পছন্দ করি আমি। পিএস ফোর, ফিফা নিয়ে যাচ্ছি। বাইরে বেরতে পারব না। তবে এতে দলীয় সংহতি বাড়বে। একে অপরকে আরও ভাল করে চিনতে পারব। ম্যাচ নিয়ে অনেক কথা হবে।” ঈশান যোগ করলেন, “মহম্মদ শামি ভাই আমাদের দলে থাকায় খুব সুবিধা হবে। দর্শন নালকাণ্ডে, আর্শদীপ সিংহদের সঙ্গে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেছি। মনদীপ ভাই, কে এল রাহুল, মায়াঙ্ক অগ্রবাল ভাইদের সঙ্গে আলাপ রয়েছে। শামি ভাই অভিজ্ঞ। বাংলা দলের ক্রিকেটার। বোলিং নিয়ে যে কোনও পরামর্শের জন্য কথা বলতে পারি। পাশাপাশি বাংলার সায়ন ঘোষও রয়েছে। সায়নদাও দু বছর আইপিএল স্কোয়াডে ছিল। সমস্যায় পড়লেই কথা বলতে পারব। এগুলো স্বস্তির বৈকি।”



টুর্নামেন্টে কাকে আউট করলে সবচেয়ে বেশি আনন্দ হবে? ঈশান বলছেন, “ভাল ক্রিকেট খেলতে হলে সকলকেই বল করতে হবে। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই গুরুত্বপূর্ণ। নাম দেখে বল করব না। কিংবদন্তিদের উইকেট নিলে খুশি হব। তবে ভাল বোলিং করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”