‘তাঁবুতে থাকার সুযোগ পেয়ে যাই। আজাদ ময়দানে রোজ বিকেলে খেলা দেখতে গিয়ে পাপ্পু স্যারকে বলতাম, একদিন আমাকে সুযোগ দিন। একদিন স্যার আচমকাই ডেকে বললেন, আজ তুই খেলবি। ভাল খেলতে পারলে তাঁবুতে থাকার বন্দোবস্ত করে দেব। ব্যাট হাতে নেমে পড়লাম আজাদ ময়দানে। ভাল খেললাম। স্যার থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। সেটাই তখন আমার কাছে হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। তারপর নিয়মিত খেলতে থাকলাম,’ মোবাইল ফোনে বলছিলেন যশস্বী।
আজাদ ময়দানে খুদে যশস্বীর ব্যাটিং দেখে ভাল লেগে যায় কোচ জ্বালা সিংহের। তিনিই এরপর যশস্বীর ক্রিকেটের সমস্ত দায়িত্ব নেন। ক্রিকেট কিটস কিনে দেওয়া থেকে শুরু করে তালিম দেওয়া, সবেতেই জ্বালা। মুম্বইয়ের হয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নজরকাড়া পারফরম্যান্স। লিস্ট এ ম্যাচে (ঘরোয়া ওয়ান ডে) ডাবল সেঞ্চুরি! অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় দলে ডাক। যুব বিশ্বকাপে চারশোর ওপর রান করে সেরা ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি যশস্বীকে।
ত্রয়োদশ আইপিএলে বাঁহাতি ওপেনারের দিকে সকলের নজর। হবে নাই বা কেন? নিলামের টেবিলে যশস্বীর ন্যূনতম মূল্য (বেসপ্রাইস) ছিল মাত্র ২০ লক্ষ টাকা। রাজস্থান রয়্যালস তাঁকে দলে নিয়েছে ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকায়! কোনওদিন ভেবেছিলেন আইপিএলে এত দাম পাবেন? যশস্বী বলছেন, ‘আমার কাছে টাকার অঙ্কটা বড় বিষয় নয়। ওটা আমার কোচ জ্বালা স্যারই দেখছেন। তবে আইপিএলে যে বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাব, সেটা ভেবে আমি রোমাঞ্চিত।’
কেরিয়ারের প্রথম আইপিএলের আগে কতটা উত্তেজনা টের পাচ্ছেন? ১৮ বছরের যশস্বী বললেন, ‘আমি মুখিয়ে রয়েছি। স্টিভ স্মিথ, বেন স্টোকস, জোফ্রা আর্চারের মতো ক্রিকেটার রয়েছে আমাদের দলে। রাজস্থান রয়্যালস আশা করছি খুব ভাল ক্রিকেট উপহার দেবে।’
সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে পৌঁছনোর পর ৬দিন কোয়ারেন্টিনে কাটিয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসের ক্রিকেটারেরা। দুবাইয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বুধবার রাত থেকে অনুশীলনে নেমে পড়েছেন ক্রিকেটারেরা। প্রবল গরমের কথা মাথায় রেখে ভারতীয় সময় রাত দশটায় প্র্যাক্টিস রাখা হচ্ছে। রাজস্থান রয়্যালসের পক্ষ থেকে এবিপি আনন্দকে জানানো হয়েছে যে, দলের বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলার পৌঁছে গিয়েছেন। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে শুধু ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে। দুবাই পৌঁছনোর পর প্রত্যেকের তিনবার করে করোনা পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। সব রিপোর্টই নেগেটিভ।
কোয়ারেন্টিনে কী করলেন? প্রস্তুতি নিচ্ছেন কীভাবে? যশস্বী বললেন, ‘আমি সচিন তেন্ডুলকরের বড় ভক্ত। সময় পেলেই সচিন স্যারের খেলা নানা ইনিংসের পুরনো ভিডিও দেখি।’ যোগ করলেন, ‘সচিন স্যারের সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে। উনি সব সময় বলেন, একজন ক্রিকেটারের কাছে মানসিক প্রস্তুতিটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বলেন, আগের ম্যাচে কী হয়েছে দ্রুত ভুলে পরের ম্যাচে মনোনিবেশ করাটা ভীষণ জরুরি।’
অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় দলে খেলার সময় কোচ হিসাবে পেয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়কে। তাঁর দেওয়া কোনও পরামর্শ? ‘রাহুল স্যার মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্য অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। আমি এখন নিয়মিত ধ্যান করি। পাশাপাশি টেকনিক্যাল ব্যাপার নিয়ে তো অনেক পরামর্শ পেয়েছি। রাহুল স্যারের কথা শুনে ভীষণ উপকৃত হয়েছি,’ বলছিলেন যশস্বী। আইপিএলে দর্শকশূন্য মাঠে খেলতে হবে। বাঁহাতি ব্যাটসম্য়ান বলছেন, ‘গ্যালারির সমর্থন দারুণ ব্যাপার তো বটেই। তবে এটা তো অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। ক্রিকেট যে ফিরছে সেটাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
বাবা উত্তরপ্রদেশে ছোটখাট দোকান চালান। আইপিএল মেটার পর বাবার ব্যবসার জন্য কিছু করা ইচ্ছে আছে যশস্বীর। সেই শেন ওয়ার্নের আমল থেকে রাজস্থান রয়্যালস তরুণ প্রতিভা তুলে আনা ও তাদের সুযোগ করে দেওয়ার ব্য়াপারে বিশেষ উদ্যোগী। যশস্বীও তাই আশাবাদী। বলছেন, ‘রাজস্থান রয়্যালসের কোচ ও সাপোর্ট স্টাফরা ভীষণ ভাল। সারাক্ষণ উৎসাহ দিচ্ছেন। প্রথম একাদশে সুযোগ পেলে আমি নিজের সেরাটা দেব। দলকে চ্যাম্পিয়ন করাটাই আমার প্রাথমিক লক্ষ্য।’ যশস্বীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে গোটা দেশ। বিশেষজ্ঞরাও একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন, এবারের আইপিএলে নতুন মুখেদের মধ্যে সেরা চমক হতে পারেন যশস্বীই। আর আপনার স্বপ্ন? ‘আইপিএলে ভাল খেলা। পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে রান করে যাওয়া। যাতে ভারতীয় দলে সুযোগ আসে,’ বলছেন আত্মবিশ্বাসী তরুণ।