দুবাই: বুড়ো হাড়ের ভেল্কি? নাকি বয়স নিছকই একটা সংখ্যা?


সিনিয়র ক্রিকেটারে ঠাসাঠাসি। একটা ম্যাচ হারা মানে বিশেষজ্ঞরা অবধারিতভাবে প্রশ্ন তুলবেন দলের গড় বয়স নিয়ে।


সেই চেন্নাই সুপার কিংসই ফের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন। চতুর্থবারের জন্য ট্রফি গেল চেন্নাইয়ে। শুক্রবার চতুর্দশ আইপিএলের ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ২৭ রানে হারিয়ে দিল সিএসকে। সেই সঙ্গে ভেঙে গেল আইপিএল ফাইনালে কেকেআরের মিথ। এতদিন পর্যন্ত আইপিএল ফাইনালে অপরাজেয় ছিল শাহরুখ খান-জুহি চাওলার দল। দুবার ফাইনালে উঠে দুবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কেকেআর। তৃতীয়বার অবশ্য সেই রেকর্ড আর অক্ষুণ্ণ রইল না। প্রথমবার ফাইনালে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেতে হল নাইট শিবিরকে। আর সিএসকে পৌঁছে গেল চার ট্রফির দুর্গে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের চেয়ে আর মাত্র একটি খেতাব দূরে তারা। রোহিত শর্মাদের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।


অধিনায়কের বয়সও চল্লিশ পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ নেতৃত্ব হোক বা চাপের মুখে ম্যাচ জেতানোর দক্ষতা, ধোনি রয়েছেন ধোনিতেই। হয়তো ব্যাটের ধার কমেছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা আর ক্ষুরধার মস্তিষ্ক নিয়ে একের পর এক শিরোপা জিতে চলেছেন ক্যাপ্টেন কুল।


শুক্রবার কার্যত একপেশেভাবে কেকেআরকে হারাল সিএসকে। অথচ এই ম্যাচে ঠিক যেন ৯ বছর আগের চিত্রনাট্য হাজির ছিল। আইপিএলের ফাইনাল। মুখোমুখি কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংস। ফের সিএসকে-র প্রথমে ব্যাটিং। আবারও চেন্নাই ওপেনারদের ভাল শুরু। ম্যাচের প্রথমার্ধে আলোচনা হচ্ছিল, ফলাফলেও কি ফিরবে ৯ বছর আগের স্মৃতি?


শুক্রবার আইপিএলের ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাটিং করে চেন্নাই সুপার কিংস তুলেছিল ১৯২/৩। তৃতীয় আইপিএল ট্রফি জয়ের জন্য নাইটদের সামনে লক্ষ্য ছিল ১৯৩ রানের। কিন্তু অইন মর্গ্যানরা পারলেন না ২০১২ সালের গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বাধীন দলের নস্ট্যালজিয়া ফেরাতে। ১৬৫/৯ স্কোরে আটকে গেল কেকেআর।


২০১২ সালে চেন্নাইয়ের হয়ে ঝোড়ো ব্যাটিং করেছিলেন দুই ওপেনার মাইকেল হাসি ও মুরলী বিজয়। মিডল অর্ডারে বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছিলেন সুরেশ রায়না। শুক্রবার সিএসকে-র হয়ে শুরুতেই ঝড় তুললেন দুই ওপেনার ফাফ ডুপ্লেসি ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ২৭ বলে ৩২ রান করে রুতুরাজ আউট হলেও আগ্রাসী ব্যাটিং করে গেলেন ডুপ্লেসি। আইপিএলের মরুদেশ পর্বে নাইটদের ফর্মুলাই হল প্রথমে ফিল্ডিং করে প্রতিপক্ষকে অল্প রানে বেঁধে ফেলো। তারপর অঙ্ক কষে পৌঁছে যাও লক্ষ্যে। শুক্রবার অবশ্য সুনীল নারাইন ছাড়া নাইট বোলারদের বাকিরা নজর কাড়তে ব্যর্থ। নারাইন ৪ ওভারে ২৬ রানে নিলেন ২ উইকেট। বরুণ চক্রবর্তী থেকে শুরু করে লকি ফার্গুসন, বাকিরা সকলেই ছিলেন নিষ্প্রভ।


নাইট বোলারদের দুঃস্বপ্নের রাত উপহার দিলেন ডুপ্লেসি। ৫৯ বলে করলেন ৮৬ রান। রান তাড়া করতে নামার আগে নাইটদের উদ্বেগ বাড়িয়েছিল রাহুল ত্রিপাঠির চোট। ফিল্ডিং করার সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান কেকেআরের দিল্লি-বধের নায়ক। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। কিন্তু ৩ বলে ২ রান করে ফেরেন তিনি।


কেকেআর ব্যাটারদের মধ্যে রান পেয়েছেন একমাত্র দুই ওপেনার। বেঙ্কটেশ আইয়ার ৩২ বলে ৫০ রান করেন। যতক্ষণ তিনি ক্রিজে ছিলেন, ম্যাচে ছিল কেকেআর। তিনি আউট হতেই স্বপ্নভঙ্গ। শুভমন গিল ৪৩ বলে ৫১ রান করলেও ম্যাচে ফারাক তৈরি করে দিতে পারেননি। শেষ দিকে শিবম মাভি ১৩ বলে ২০ রান করে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ বেরিয়ে গিয়েছে।


কেকেআরকে গোটা মরসুম ভোগাল অধিনায়কের ব্যাটে রানের খরা। ফাইনালে ৮ বলে ৪ রান করে ফিরলেন মর্গ্যান। সিএসকে-র হয়ে বল হাতে সেরা শার্দুল ঠাকুর। ৩৮ রানে নিলেন ৩ উইকেট।