কলকাতা: আইপিএল শুরু হয়ে গিয়েছে প্রায় একমাস হতে চলল। এতদিনে ক্রিকেটের নন্দনকাননে সাজো সাজো রব। কারণ, এবার ইডেন গার্ডেন্সে ধুন্ধুমার ক্রিকেট দ্বৈরথে নেমে পড়তে চলেছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, ডেভিড ওয়ার্নাররা। ৯ মে কোহলি বনাম ওয়ার্নার লড়াই দিয়ে শুরু হতে চলেছে আইপিএলের ইডেন পর্ব। ১৫ দিনে ১০টি ম্যাচ হবে কলকাতায়।
আর করোনা আবহে এবারের আইপিএলে ইডেনে ঘটতে চলেছে অভূতপূর্ব ঘটনা। ধোনির মতো জোড়া বিশ্বকাপজয়ী ক্যাপ্টেন হোক বা জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক কোহলি, কেউই দলবল নিয়ে ঐতিহ্যশালী ক্লাব হাউজ় দিয়ে ড্রেসিংরুমে ঢুকতে পারবেন না। পরিবর্তে ১৭ নম্বর গেট দিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হবে সকল ক্রিকেটারকে। কিন্তু কেন?
কারণ, দেশে করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের মধ্যে আইপিএল হচ্ছে জৈব সুরক্ষা বলয়ে। এবং দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার ফলে জৈব সুরক্ষা বলয়কেও আরও কঠোর নিয়মে বেঁধে ফেলা হয়েছে। ক্রিকেটারেরা চাইলে বাইরে থেকে খাবার আনাতেও পারছেন না।
আর এই পরিস্থিতিতে আইপিএলের ইডেন পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে তিনটি জোন। ইডেনের ১৪ নম্বর গেট থেকে শুরু হবে এক নম্বর জোন। ১৭ নম্বর গেট পর্যন্ত জোন ওয়ানের অন্তর্গত করা হচ্ছে। এই জোন ব্যবহার করবেন ক্রিকেটারেরা। মাঠে ঢোকার জন্য ১৭ নম্বর গেট ব্যবহার করবেন ধোনি-কোহলিরা। যার অর্থ, ক্লাব হাউস দিয়ে ক্রিকেটারেরা ড্রেসিংরুমে ঢুকতে পারবেন না। জোন ওয়ান দিয়ে ঢুকে ড্রেসিংরুমে যেতে হবে। যে গেট দিয়ে মাঠে অ্যাম্বুলেন্স ঢোকে সেখান দিয়ে ঢুকবেন কোহলি, ধোনি, রোহিত, ঋষভ পন্থরা। ৩ ও ৪ নম্বর গেট, লোয়ার টিয়ারের সিঁড়ি মিলিয়ে হবে জোন টু। ম্যাচ সম্প্রচারের কাজে যুক্তরা ওই জোন ব্যবহার করবেন। ওঁরাও বায়ো বাবলের অংশ। বি ও সি ব্লক হবে থার্ড জোন। সেখানে বোর্ড কর্তা বা সিএবি-র অ্যাপেক্স কাউন্সিলের সদস্যরা থাকবেন। ক্লাব হাউস বরাদ্দ থাকবে শুধু সিএবি-র পদাধিকারী ও কর্মীদের জন্য। এই প্রথম ঐতিহ্যশালী ক্লাব হাউস দিয়ে বিখ্যাত ড্রেসিংরুমে যেতে পারবেন না কোহলিরা।
ইডেনে মোট ১০টি ম্যাচ খেলবে ৬টি দল। আট দলের আইপিএলে এবারের নিরপেক্ষ ভেন্যুর নিয়মে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোনও ম্যাচ ইডেনে নেই। এছাড়া প্রীতি জিন্টার পঞ্জাবও কলকাতায় খেলছে না। অর্থাৎ, এবারের আইপিএলে বীর-জারা শো থেকে বঞ্চিত হবেন বাংলার মানুষ। বাকি ছটি দল অর্থাৎ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস, কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, ঋষভের দিল্লি ক্যাপিটালস, ওয়ার্নারের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও সঞ্জু স্যামসনের রাজস্থান রয়্যালস খেলবে ইডেনে। ৬টি দল কলকাতায় ৬টি আলাদা হোটেলে থাকবে।
শুক্রবার আইপিএলের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) হেমঙ্গ আমিন কলকাতায় এসে সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া, সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়-সহ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সমস্ত ব্যবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখার পাশাপাশি জৈব সুরক্ষা বলয় নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। যেদিন যে দলগুলির খেলা থাকবে না, তারা সল্টলেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে প্র্যাক্টিস করবে। যাদবপুর মাঠও বায়ো বাবলের অংশ। ওই মাঠে নেট প্র্যাক্টিসের জায়গায় অস্থায়ীভাবে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে সিএবি-র তরফে। এবিপি আনন্দকে সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া বললেন, 'হিরো কাপের সময় যে আলো ইডেনে ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই আলো সল্টলেকের মাঠে লাগানো হয়েছে। ইডেন সংস্কারের পর থেকে আলোগুলো পড়েছিল।'
করোনা পরিস্থিতিতে আইপিএলের আয়োজন অন্যতম কঠিন কাজ। তবে অভিষেক বলছেন, 'আমরা এর আগে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি করেছি। তাই অসুবিধা হবে না। বায়ো বাবলের তিনটে জোন রয়েছে। সমস্ত সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার রাখা হবে।' তিনি জানালেন, ৪ মে দমকল কর্তারা ইডেন পরিদর্শনে আসতে পারেন। দমকলকর্মী ও পুলিশ কর্মীরা বায়ো বাবলের জোন থ্রি-তে থাকবেন।