কলকাতা: নাগপুরে বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থার (VCA) পেস বোলিং অ্যাকাডেমিতে পেটানো চেহারার কিশোরকে দেখেই মনে ধরে গিয়েছিল সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Subroto Banerjee)। জাতীয় দলের প্রাক্তন পেসার বুঝে গিয়েছিলেন, এ ছেলে লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। পরের কয়েক বছর ধরে চলল ঘষামাজা। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটালেন তরুণ ফাস্টবোলার। তাঁর বলের গতিতে মুগ্ধ হলেন সকলে।


কিন্তু টেস্টে প্রভাব ফেললেও সেদিনের সেই তরুণ পেসার উমেশ যাদব (Umesh Yadav) সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যেন কিছুটা বর্ণহীন ছিলেন। লাল বলে গতি ও স্যুইংয়ের ভেল্কি দেখালেও সাদা বলে ততটা কার্যকরী হয়ে উঠতে পারছিলেন না। ফের শুরু বাঙালি কোচের ক্লাস। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে এবারের আইপিএলে (IPL)। আগুনে গতি আর চকিত স্যুইংয়ের যুগলবন্দিতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন বিদর্ভের পেসার। লাগাতার ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে বল করছেন। ৩ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে আইপিএলে পার্পল ক্যাপের দৌড়ে শীর্ষে উমেশ। যা দেখে তৃপ্ত সুব্রত।


ক্ষুব্ধ কোচ


ছাত্রের সাফল্যের মুহূর্তেও জাতীয় দল থেকে উমেশের বারবার বাদ পড়া নিয়ে খুশি নন সুব্রত। একসময় বাংলার হয়ে খেলা পেসার নাগপুর থেকে ফোনে এবিপি লাইভকে বললেন, 'অভিজ্ঞতা ওর বিরাট অস্ত্র। ১০-১২ বছর ধরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলছে। কোন ব্যাটারকে কীভাবে বল করতে হবে, স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে।' তবে সুব্রতর কথায়, 'ওকে আরও সুযোগ দিতে হবে। ও চ্যাম্পিয়ন বোলার। আরও ধারাবাহিকভাবে খেলাতে হবে। জাতীয় দলে এক বছর খেলছে তো পরের বছর বাইরে থাকছে। উইকেট নিয়েও বাদ পড়েছে। অন্যান্য়দের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। উমেশের ক্ষেত্রেই হয়। অধিনায়ক যদি ঠিকমতো সামলাতে পারে, উমেশ নিজেকে নিংড়ে দেবে।' যোগ করছেন, 'যে কোনও পেশাতেই বাদ পড়ে ফেরার পর ফের প্রতিষ্ঠিত হওয়া সহজ নয়। ও ফাস্টবোলিং করে। বাদ পড়লে চাপ বাড়ে। অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সেটা মাথায় থাকলে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ে। ওকে যদি বলা হয়, ভাই তুই বল কর। আর কিছু ভাবতে হবে না, তাহলে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।'


গতির দোসর বাউন্স


কী পরিবর্তন চোখে পড়ছে ছাত্রের বোলিংয়ে? 'অনেক পরিণতিবোধ দেখা যাচ্ছে ওর বোলিংয়ে। এত অভিজ্ঞতা, সেটা কাজে লাগাচ্ছে। মুম্বই বা পশ্চিম ভারতের উইকেটে ঘাস থাকছে। বাড়তি বাউন্স পাচ্ছে। ওর গতির সঙ্গে এই বাউন্সটা দরকার। আইপিএল হয় পাটা উইকেটে। বোলারদের জন্য পিচে কিছুই থাকে না। তবে এবার আইপিএল একটু তাড়াতাড়ি হচ্ছে। আগে মাঝ এপ্রিলে শুরু হতো। এবার মার্চের শেষে শুরু হয়েছে। ফলে উইকেটে সতেজ ভাব রয়েছে। উমেশের লাইন লেংথের ওপর নিয়ন্ত্রণ এখন আরও বেশি। সেটাই টার্নিং পয়েন্ট,' বলছিলেন সুব্রত।


প্রাথমিক পাঠে জোর


জাতীয় দল থেকে যখনই বাদ পড়েছেন, উমেশ ফোন করেছেন সুব্রতকে। 'প্রায়ই নাগপুরে আমার কাছে প্র্যাক্টিস করতে আসে। দল থেকে যতবার বাদ পড়েছে, আমাকে ফোন করে বলেছে, স্যার আমাকে প্র্যাক্টিস করান। ওকে নিয়ে প্র্যাক্টিস করি। সব সময় নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করে। ক্যাপ্টেন ভাল ভাবে সামলালে ও অনেক ম্যাচ জেতাবে,' বলছিলেন বাঙালি গুরু। সুব্রত যোগ করলেন, 'টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এমনিতেই বোলারদের জন্য কঠিন ফর্ম্যাট। তার ওপর এবার শিশিরের জন্য সমস্যা হচ্ছে। বোলাররা ঠিক করে বল গ্রিপই করতে পারছে না। উমেশ দিল্লিতে প্রস্তুতি নিয়েছে। আমি চারমাস অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম। তিনদিন হল ফিরেছি। ও ফোন করেছিল দুবার। বলেছিল, স্যার জায়গায় বল পড়ছে। নিয়ন্ত্রণ ও সিম পোজিশন ভাল লাগছে। আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি। ওকে ভীষণ ইতিবাচক লাগছিল। দারুণ প্রস্তুতি নিয়েছে। বেশি পরামর্শ দিলে দ্বিধা তৈরি হয়। আমি শুধু ওর সঙ্গে প্রাথমিক ব্যাপারগুলো নিয়েই কথা বলেছিলাম।'


আত্মবিশ্বাসী কোচ


আইপিএলে উমেশের বোলিং দেখে সন্তুষ্ট সুব্রত। বলছেন, 'আমার পরামর্শ মেনে বল করছে। তার ফল ওর পারফরম্যান্সে ধরা পড়েছে। ক্রস সিমে কীভাবে বল করবে, বল কীভাবে গ্রিপ করলে কীরকম আচরণ করবে, লেগকাটার, কাটার সবই প্র্যাক্টিস করিয়েছি। বল হাতে উমেশ এখন ভরসা হয়ে উঠেছে। এখন যেরকম বোলিং করছে তাতে যে কোনও বলে উইকেট পেতে পারে বলে মনে হচ্ছে। প্রত্যেক সুযোগ কাজে লাগায়। ভীষণ ইতিবাচক ছেলে। উমেশের দক্ষতায় আস্থা রাখলে ও দলকে আরও ম্যাচ জেতাবে।'


লখনউ ম্যাচে এই ২ তারকা ক্রিকেটারদের দিল্লি একাদশে দেখতে চাইছেন রিকি পন্টিং