সন্দীপ সরকার, কলকাতা: টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আদর্শ চিত্রনাট্য যেন।


প্রায় পঞ্চাশ হাজারের গ্যালারি মুখরিত কেকেআর... কেকেআর... ধ্বনিতে। ইডেন গার্ডেন্সের কর্পোরেট বক্সে হাজির শাহরুখ 'কিংগ' খান। কলকাতায় আইপিএলের বোধনে ঝুমে জো পাঠানের মঞ্চ তৈরি।


আর সেখানে কিনা জেতা ম্যাচ কার্যত হারতে বসেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স! তাও এমন একটা পরিস্থিতি থেকে, যখন সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ম্যাচ জিততে শেষ ৩ ওভারে তুলতে হতো ৬০ রান! ম্যাচের পাল্লা কখনও গেল কলকাতা নাইট রাইডার্সের দিকে, কখনও ঝুঁকল সনরাইজার্স হায়দরাবাদের দিকে। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হল শেষ ওভারে। আরও নিখুঁতভাবে বললে, শেষ বলে। প্রয়োজন ছিল ৫ রান। হর্ষিত রানা শেষ বলটি ডট করলেন। ৪ রানে ম্যাচ জিতল কেকেআর। সেই সঙ্গে ঘরের মাঠে জয় দিয়ে সপ্তদশ আইপিএলে অভিযান শুরু করলেন শ্রেয়স আইয়ারের নাইটরা।


পেন্ডুলামে মতো দুলল ম্যাচের ভাগ্য। টস জিতে কেকেআরকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। আর শুরুতেই কি না ব্যাটিং বিপর্যয় নাইটদের। ৭.৩ ওভারে স্কোর ৫১/৪। ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়েছেন সুনীল নারাইন, বেঙ্কটেশ আইয়ার, অধিনায়ক শ্রেয়স ও নীতীশ রানা। ফিল সল্টের সঙ্গে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন রামনদীপ সিংহ। এদিনই কেকেআরের জার্সিতে অভিষেক হল দুজনেরই। সল্ট ৪০ বলে করলেন ৫৪। ১৭ বলে ৩৫ রান রামনদীপের। তবে তাঁরা দুজনে ফিরে যাওয়ার পর ১৩.৫ ওভারে যখন কেকেআরের স্কোর ১১৯/৬, গ্যালারিও যেন রক্তাল্পতায় ভুগছে। কোথায় সেই মেক্সিকান ওয়েভ? যা ইডেনের গর্ব। এমনকী, তিনি, শাহরুখ খানও বি ব্লকের ব্যালকনি ছেড়ে ঢুকে গেলেন কাচের ঘরে। যেন উদ্বিগ্ন বাদশাও।


টিম মালিকের এহেন কালো চোখমুখ দেখে কি প্রতিশোধ স্পৃহা জ্বলে উঠল আন্দ্রে রাসেলের? গতবার এই ইডেনে কেকেআরকে হারিয়ে দিয়ে গিয়েছিল হায়দরাবাদ। গোটা টুর্নামেন্টে যারা কুৎসিত খেলেছিল। সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার মঞ্চ ছিল শনিবারের ইডেন। পাল্টা আঘাত হানলেন রাসেল। ২৫ বলে অপরাজিত ৬৪ রান। সাতটি বিশাল ছক্কা। যার মধ্যে চারটি উড়ে গিয়ে পড়ল শাহরুখের বক্সের ঠিক সামনে। যেন মালিককে আশ্বাসের বার্তা, ম্যায় হুঁ না... ২০ বলে রাসেলের হাফসেঞ্চুরি দেখে দাঁড়িয়ে হাততালি দিলেন শাহরুখও। চেনা মেজাজে ছিলেন রিঙ্কু সিংহ। ১৫ বলে করলেন ২৩ রান। কেকেআর ইনিংস শেষ করল ২০৮/৭ স্কোরে।


রান তাড়া করতে নেমে হায়দরাবাদের শুরুটা ভাল হয়েছিল। তবে পরপর উইকেট হারিয়ে ১৪৫/৫ হয়ে যান কামিন্সরা। রাসেল বল হাতেও কার্যকরী। নিলেন ২ উইকেট। যখন মনে হচ্ছিল, ম্যাচের বর্ণনায় রাসেল-বন্দনাই শুধু লিখতে হবে, তখনই ভোলবদল। তুমুল প্রত্যাঘাত শুরু করলেন হেনরিখ ক্লাসেন। রাসেলের সাত ছক্কার জবাব দিলেন আট ওভার বাউন্ডারিতে। সঙ্গী বাংলার শাহবাজ আমেদ। ১৮তম ওভারে বরুণ চক্রবর্তী খরচ করলেন ২১ রান। হতাশ করলেন ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার পেসার মিচেল স্টার্ক। ১৯তম ওভারে দিলেন ২৬ রান। ছক্কাই হজম করলেন চারটি। তিনটি মারলেন ক্লাসেন। একটি শাহবাজ।


শেষ ওভারে দরকার ১৩ রান। শ্রেয়স বল তুলে দিলেন তরুণ হর্ষিতের হাতে। প্রথম বলেই ছক্কা ক্লাসেনের। ৫ বলে বাকি ৭ রান। হর্ষিত দিলেন মাত্র ২ রান। নিলেন দুটি উইকেট। যার মধ্যে রয়েছে ক্লাসেনের উইকেটও। ২৯ বলে ৬৩ রান করে ফিরলেন ক্লাসেন। চাপের মুখে শর্ট থার্ড ম্যানে পিছনের দিকে দৌড়ে তাঁর ক্যাচ তালুবন্দি করলেন সূয়স শর্মা। উত্তেজনায় ক্লাসেনকে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বললেন হর্ষিত।


উত্তেজনা স্বাভাবিক। ৪ ওভারে ৩৩ রানে ৩ উইকেট। শেষ ওভারে তাঁকে মন্থর গতিতে বল করার নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল। অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন। ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা দামের বোলারের ব্যর্থতার রাতে তিনি, ২০ লক্ষ টাকা দরের অজানা অনামী তরুণ যে ম্যাচ জেতাবেন, ঘুণাক্ষরেও কেউ ভেবেছিলেন!


ভেবেছিলেন হয়তো একমাত্র শাহরুখই। তিনিই তো শিখিয়েছেন ছক ভেঙে সফল হওয়ার মন্ত্র। চকোলেট বয় ইমেজ না থাকলেও যে নায়ক হওয়া যায়, সেই তত্ত্ব এতদিনে তাঁর সৌজন্যেই প্রতিষ্ঠিত।


হর্ষিত আর শাহরুখের আর একটা মিলও কাকতালীয়। দুজনই যে দিল্লির। যা দেখে হয়তো স্বস্তি পাবেন দিল্লিরই আর এক তারা। যিনি এবার ফিরেছেন কেকেআর শিবিরে। অন্য ভূমিকায়। মেন্টর হয়ে। সেই গৌতম গম্ভীরের সামনেই উদয় হল এক তরুণ নাইটের। দোলের আগেই রঙিন হল কেকেআর ড্রেসিংরুম।


আরও পড়ুন: Venkatesh Iyer Exclusive: নিজের পারফরম্যান্স নয়, দলের সাফল্যই প্রধান, গম্ভীর-মন্ত্রে দীক্ষা কেকেআর অলরাউন্ডারের


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে