কলকাতা: গুনে গুনে ৪৩৭ দিন। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটে এক বছরেরও বেশি সময় পরে প্রত্যাবর্তন ঘটালেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। শেষবার তাঁকে ম্যাচ খেলতে দেখা গিয়েছিল গত বছরের ১০ জুলাই। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।


৪৩৭ দিন পর ফের ম্যাচ খেললেন ধোনি। আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে তাঁকে দেখা গেল নতুন চেহারায়। গোঁফ-দাড়ি রেখেছেন অনেকটা বালাকোট সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের অন্যতম নায়ক, ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট অভিনন্দন বর্তমানের আদলে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে কিছু করার সুযোগ পাননি ধোনি। ২ বল খেললেন। কোনও রান না করে অপরাজিত রইলেন। তবু ম্যাচের শেষে ক্রিকেটমহলে ধোনিকে নিয়ে মুগ্ধতা।

কারণ, আবু ধাবিতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে প্রত্যাবর্তন ঘটল ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর। নির্লিপ্ত, পেশাদারি ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষের সমস্ত প্রত্যাঘাত নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে চেন্নাই সুপার কিংসকে দিলেন প্রথম ম্যাচেই জয়ের স্বাদ। ম্যাচে ধোনির ক্ষুরধার মস্তিষ্কের প্রয়োগ দেখে উচ্ছ্বসিত প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা।

ধোনির নেতৃত্বের প্রশংসা শোনা গেল মহম্মদ আজহারউদ্দিনের গলায়। ২২১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আজহার। কেমন দেখলেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’-কে? রবিবার হায়দরাবাদ থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বললেন, ‘ধোনির নেতৃত্বে সেই একইরকম ধার রয়েছে। ওর গেম রিডিং বরাবরই প্রশংসনীয়। পরিসংখ্যান ওর হয়ে কথা বলে।’

শনিবার যেভাবে রোহিত শর্মাকে ফাঁদে ফেলে আউট করেছেন ধোনি, তা দেখে আপ্লুত আজহার। লেগস্পিনারের বিরুদ্ধে রোহিতের রেকর্ড ঈর্ষণীয় নয়। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ইনিংসের পঞ্চম ওভারে তাই লেগস্পিনার পীযূষ চাওলাকে আক্রমণে আনেন ধোনি। তারপর? ‘চাওলা বল করার সময় লং অফ থেকে সরিয়ে ডিপ মিড উইকেট আর লং অন বাউন্ডারিতে ফিল্ডার রাখল ধোনি। রোহিতকে হাওয়ায় ড্রাইভ মারার প্রলোভন দেখাল। ৩০ গজের বৃত্তের মধ্যে ছিল মিড অফ ফিল্ডার। যার মাথার ওপর দিয়ে বল তুলে দিতে পারলেই বাউন্ডারি নিশ্চিত। চাওলার বলে সেই লফটেড ড্রাইভ মারতে গিয়েই মিড অফে ধরা পড়ল রোহিত। ধোনি বুঝেছিল, আবু ধাবির মন্থর উইকেটে মিড অফ ফিল্ডারকে পার করে শট খেলা ঝুঁকিপূর্ণ হবে রোহিতের পক্ষে। সেই ফাঁদেই পা দিল রোহিত,’ বললেন আজহার। যোগ করলেন, ‘নিজে ব্যাট করতে না নেমে রবীন্দ্র জাডেজা-স্যাম কারানদের আগে পাঠানোটাও প্রশংসনীয়। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের দিয়ে ক্রুণাল পাণ্ড্যর বাঁহাতি স্পিন অকেজো করল।’

আর উইকেটকিপার ধোনি? ‘দেখে মনে হল না ওর রিফ্লেক্স কমেছে। তা নাহলে এনগিডির বলে শরীর ডানদিকে শূন্যে ভাসিয়ে বাঁহাতি ক্রুণালের ওই ক্যাচ নিতে পারত না,’ বললেন সৈয়দ কিরমানি। জাতীয় দলের প্রাক্তন উইকেটকিপার আরও বললেন, ‘উইকেটের পিছন থেকে যেভাবে গোটা দলকে পরিচালনা করল, বোলারদের পরামর্শ দিল, তাতে মনে হল মাঠে কোথায় কী হচ্ছে সব ওর হাতের তালুর মধ্যে দেখতে পাচ্ছে। ধোনির নেতৃত্বে সিএসকে এবারও ভাল ক্রিকেট খেলবে।’