কলকাতা: তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভক্ত। জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ককে নিয়ে তাঁর উন্মাদনা এমন পর্যায়ে ছিল যে, বাড়ির লোকের সঙ্গে ঝগড়াও করেছেন। পরে তিনি নিজে পেশাদার ক্রিকেটার হয়েছেন। দিল্লির অধিনায়ক। আইপিএলে খেলেছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে। এখন কলকাতা নাইট রাইডার্সের অন্যতম প্রধান ব্যাটিং স্তম্ভ। সেই নীতিশ রানার আক্ষেপ, তিনি এখনও তাঁর প্রিয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার সাহস করে উঠতে পারেননি!


আবু ধাবিতে জোরকদমে চলছে কেকেআরের প্রস্তুতি। তারই ফাঁকে বৃহস্পতিবার বাছাই করা সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তর দিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সৌরভের কাছে কখনও ব্যাটিং নিয়ে পরামর্শ পেয়েছেন? দাদার টিপস অনুসরণ করেন? এবিপি আনন্দের প্রশ্নের উত্তরে নীতিশ বললেন, ‘শুনতে অবাক লাগবে, তবে আমি আজ পর্যন্ত দাদার সঙ্গে দেখা করিনি। কোনওদিন কথাও বলিনি। গত দুবছর ধরে ওঁকে মাঠে (ইডেনে) আসতে দেখেছি। তবে কখনও কথা বলার সাহস হয়নি। কেউ আমাকে সাহস জোগায়নি যে, চল আমি দাদার কাছে নিয়ে যাচ্ছি। আমিও লাজুক। নিজে থেকে ওঁর কাছে যেতে ভয় পাই এখনও। তাই দাদার সঙ্গে দেখা করা হয়নি।’



এবার কেকেআর দলে রয়েছেন অইন মর্গ্যানের মতো তারকা। নীতিশ বলছেন, ‘মর্গ্যান বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। খুব কম বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রয়েছে যারা সাদা বলের ক্রিকেটে দাপট দেখায়। ওর থেকে অনেক কিছু শিখতে পারব। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি দিল্লি দলের অধিনায়ক। মর্গ্যানের কাছে নেতৃত্বের পাঠও নিতে পারব।’ যোগ করলেন, ‘আমি চাইব টপ অর্ডার এত রান করে দিক যে, মিডল অর্ডারের দায়িত্বই কমে যায়। তবে সেটা তো সব সময় হয় না। যারাই রান করুক না কেন, দলের জেতাটাই আসল।’



এবারের আইপিএল সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে। যেখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতিতে স্পিনারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নীতিশ বল হাতেও পার্টনারশিপ ভাঙতে সিদ্ধহস্ত। বলছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে, স্থানীয় ক্রিকেটে ছোট থেকে বল করি। আমার কাছে এটা নতুন বিষয় নয়। কেকেআরের হয়েও গত দু মরসুমে বোলিং করেছি। এখানকার পিচে স্পিনাররা সুবিধা পাবে। আমি ক্রিকেটার হিসাবে তো বটেই, বোলার হিসাবেও অনেক উন্নত হয়ে এবারের আইপিএলে খেলতে এসেছি। প্রত্যেক ম্যাচে যত বেশি সম্ভব ওভার বল করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। যে কোনওভাবে দলকে সাহায্য করতে চাই।’



শাহরুখ খানের দলের হেড কোচ এবার ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। ক্রিকেটার হিসাবে যিনি আগ্রাসী ছিলেন। নীতিশ বলছেন, ‘আমি দিল্লির ছেলে। ছোট থেকে আগ্রাসী ক্রিকেটই খেলেছি। ব্রেন্ডন ম্যাকালামকে বরাবরই ভাল লাগে। এবার যখন জানতে পারি যে, ম্যাকালাম আমাদের কোচ হবে, দারুণ উত্তেজিত ছিলাম। ক্রিকেটার হিসাবে খুব আগ্রাসী ছিলেন। কোচ হিসাবেও ওঁকে আগ্রাসীই দেখতে চাই। তাতে আমাদের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।’ মরুদেশের দাবদাহের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেন? নীতিশ বলছেন, ‘ইউএই-র গরমে প্রথম ৩-৪ দিন খুব কষ্ট হয়েছে। ৬ মাস বাড়িতে ছিলাম। এখানে চড়া রোদে শুরুতে কষ্ট হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্র্যাক্টিস করতে সমস্যা হয়েছে। তবে কোয়ারেন্টিন পর্ব শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে সকলেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। আমরা পেশাদার ক্রিকেটার। মানিয়ে নিতেই হবে।’



দলের প্রয়োজনে যে কোনও পোজিশনে ব্যাট করতে তৈরি দিল্লির ক্রিকেটার। বলছেন, ‘গত বছর প্রথমদিকে দুটো ম্যাচে ইনিংস ওপেন করেছিলাম। তারপর তিন নম্বরে, চারে, পাঁচেও ব্যাট করেছি। নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় ব্যাট করতেই হবে এরকম কোনও ব্যাপার নেই।’ কাকে খেলা সবচেয়ে কঠিন? রানা বলছেন, ‘প্যাট কামিন্সের মুখোমুখি হওয়াই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। ভাগ্য ভাল যে, ও আমাদের দলেই রয়েছে।’



জৈব সুরক্ষা বলয়ের অভিজ্ঞতা? ২৬ বছরের ক্রিকেটার বলছেন, ‘প্রায় ৬ মাস ধরে তো বাড়িতেই বন্দি ছিলাম। বাবা-মা, পরিবারের জন্য বেরোইনি। তবে খেলার জগতে ব্যাপারটা আলাদা। আমরা কফিশপে গিয়ে কফি খেতে পারছি না। বেরতে পারছি না। তবে ক্রিকেট মাঠে যে ফিরতে পারছি, সেটাই বড় প্রাপ্তি।’ যোগ করলেন, ‘দর্শকশূন্য মাঠে খেলা আলাদা অভিজ্ঞতা তো হবেই। ইডেনে একটা বাউন্ডারি মারলে মনে হয় যেন হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেছি। এত লোক সমর্থন করেন, গলা ফাটান। তবে আমরা পেশাদার। মানিয়ে নিতে হবে।’