জয়পুর: ষোড়শ আইপিএল শুরুর আগে প্রতিটি দলের হাল হকিকত নিয়ে আলোচনা করছি আমরা। আজ সেই তালিকায় সংযোজন রাজস্থান রয়্যালস। টুর্নামেন্টের প্রথম মরসুমেই প্রয়াত শেন ওয়ার্নের নেতৃত্বে খেতাব ঘরে তুলেছিল রাজস্থান রয়্যালস। কিন্তু এরপর থেকে ১৪টি মরসুমে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি দলটি। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ৫ বার প্লে অফে উঠেছে তারা। গত বারের রানার্স আপও। কিন্তু বারবার তীরে এসে তরী ডুবেছে রাজস্থানের। আইপিএলে মোট ১৯৫টি ম্যাচ খেলে ৯৬ ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে এই দলটি। ৯৪ ম্যাচে হারতে হয়েছে তাদের। নতুন মরসুম শুরুর আগে কেমন দল সাজাল এই ফ্র্যাঞ্চাইজি, দেখে নেওয়া যাক -


এই তালিকায় সবার প্রথম নামটি অবশ্যই জস বাটলার। টি ২০ ফরম্যাট আর জস বাটলার যেন একে অপরের পরিপুরক। ২০১৬ সালে আইপিএলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নিজের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ বোলারের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ৮২ ম্যাচ খেলে ২৮৩১ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট ঈর্ষণীয় ১৪৯.৭০। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ৫টি সেঞ্চুরি ও ১৫টি অর্ধশতরান রয়েছে ঝুলিতে। গত মরসুমে ৮৬৩ রান করে অরেঞ্জ ক্যাপ জিতে নিয়েছিলেন। মরসুমে সর্বাধিক ৪টি সেঞ্চুরি করে ছুঁয়েছিলেন বিরাট কোহলির রেকর্ডও। দলের লিডারশিপ গ্রুপের অন্যতম সদস্য বাটলার। ওপেনিংয়ে তাঁর সঙ্গী হবেন যশস্বী জয়সওয়াল। এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টে ২৩টি ম্যাচ খেলে ৫৪৭ রান করেছেন। ঝুলিতে পুরেছেন ৩টি অর্ধশতরান। বাটলার-জয়সওয়াল জুটি বিধ্বংসী ব্য়াটিংয়ের মাধ্যমে পাওয়ার প্লে-তে ঝড়ের বেগে রান বোর্ডে যোগ করতে পারেন।


কেরালায় জন্ম হলেও এখন রাজস্থানের ঘরের ছেলে সঞ্জু স্যামসন। ১৩৮ ম্যাচে আইপিএলে সংগ্রহ ৩৫২৬ রান। ২০২১ সাল থেকে দলের দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন। তিন নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত রান তুলতে পারেন। আইপিএলে নিজের নামের পাশে একটি শতরানও রয়েছে। ঠান্ডা মাথার সঞ্জুর ক্যাপ্টেন্সিও প্রশংসা কুড়িয়েছে অনেক বড় বড় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের। তালিকায় রয়েছেন দেবদত্ত পড়িক্কলও। আরসিবির জার্সিতে নজর কেড়েছিলেন। এরপরই রাজস্থান নিলাম থেকে তুলে নিয়েছিল কর্ণাটকী এই ব্য়াটারকে। আইপিএলে শতরান হাঁকানো দেবদত্তের দিকেও নজর থাকবে। 
রাজস্থান শিবিরের বিদেশি ব্যাটারদের মধ্যে বাটলার ছাড়া যাঁর নাম উল্লেখযোগ্য, তিনি হলেন শিমরন হেটমায়ের। দেড়শোর ওপর স্ট্রাইক রেট। লম্বা লম্বা ছক্কা হাঁকাতে পারেন। চাপের মুখে বড় রান তোলার প্রয়োজন হলে হেটমায়েরের ব্যাটিং ভরসা জোগাবে রাজস্থানকে। 


ক্যারিবিয়ান অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার জেসন হোল্ডারকে নিলামে ৫ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা খরচ করে দলে নিয়েছে রাজস্থান রয়্যালস। একাদশে সুযোগ পেলে লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও গুরুত্বপূর্ণ ৪ ওভার করবেন হোল্ডার। 


বোলিং ব্রিগেড এই দলের অন্যতম শক্তি। পেস বিভাগে ট্রেন্ট বোল্ট নেতৃত্ব দেবেন। অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি কিউয়ি বোলার আইপিএলের ইতিহাসে প্লে অফে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন এখনও পর্যন্ত। স্পিন ডিপার্টমেন্ট পেস বিভাগের থেকেও শক্তিশালী। অশ্বিন, চাহালের মত ২ তারকা স্পিনার রয়েছেন শিবিরে। এই অফস্পিনার-লেগস্পিনার জুটির মোট ৮ ওভার সামলানো যে কোনও ব্য়াটিং লাইন আপের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা বাড়তি ভারসাম্য জোগাবেন দলকে। রাজস্থানের ঘরের মাঠ সোয়াই মানসিং স্টেডিয়াম মাঝের ওভারগুলোতে স্পিনারদের জন্য সহায়ক। 


দুর্বলতা- দলের পেস বোলিং বিভাগে বোল্ট ছাড়া নামকড়া তারকার অভাব। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ছিটকে যাওয়ার পর সন্দীপ শর্মাকে দলে নিয়েছে রাজস্থান। এছাড়া রয়েছেন নভদীপ সাইনি, কুলদীপ সেন ও ওবেদ ম্য়াকওয়ে। কিন্তু তিনজনের কেউই বিশ্বমানের জোড়ে বোলার নন। 


এক্স ফ্যাক্টর- যুজবেন্দ্র চাহাল হতে পারেন আসন্ন মরসুমে রাজস্থান রয়্যালসের এক্স ফ্য়াক্টর। ১৩১ ম্য়াচে মোট ১৬৬ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন। ইকনমি মাত্র ৭.৬১। আরসিবির জার্সিতে আইপিএল কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। দেশের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে এখন চাহালই সর্বাধিক উইকেট শিকারি। ৭৫ ম্যাচে মোট ৯১ টি উইকেট নিয়েছেন তিনি।


গেমচেঞ্জার- আসন্ন মরসুমে অ্যাডাম জাম্পা রয়্যালসের গেমচেঞ্জার হতে পারেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন অনেক পরিণত স্পিনার হয়ে উঠেছেন জাম্পা। জাতীয় দলের জার্সিতে প্রয়োজনের সময় উইকেট তুলতে পারদর্শী তিনি। বিরাট কোহলির মত বিশ্বমানে ব্যাটারকেও বেশ কয়েকবার ঘূর্ণির জাদুতে পরাস্ত করেছেন।


আগামী ২ এপ্রিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের আইপিএল অভিযান শুরু করছে সঞ্জু স্যামসন বাহিনী। গত মরসুমে তীরে এসে তরী ডুবেছিল। এবার কি সেই অধরা মাধুরী ঘরে তুলতে পারবে রাজস্থান রয়্যালস? কি মনে হয় আপনার? আইপিএলের সব দলের সব হাঁড়ির খবর জানতে চোখ রাখুন এবিপি লাইভের পর্দায়।