কলকাতা: আইপিএলের আগে নতুন জার্সি উন্মোচন কেকেআরের। ইডেনে পৌনে দু'ঘণ্টা প্র্যাক্টিস অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারের (Shreyas Iyer)। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স শিবিরে যোগ দিলেন রোহিত শর্মা। খেলার দুনিয়ার সারাদিন।


প্র্যাক্টিসে সাবলীল শ্রেয়স


কলকাতায় আসার পথে মুম্বই বিমানবন্দরে শ্রেয়সের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, মুম্বই বিমানবন্দরের বাইরে গাড়ি থেকে নামছেন শ্রেয়স। ব্যাগপত্তর নামাচ্ছেন। কিন্তু তার ফাঁকে ফাঁকে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। পিঠে হাত দিয়েও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল মুম্বইয়ের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা ব্যাটারকে। তাহলে কি মুম্বই শিবিরের দাবিটাই ঠিক? শ্রেয়স টানা ৩০-৪০ মিনিটের বেশি ব্যাট করতে পারছেন না, সেই উদ্বেগ কি সত্যি?


শনিবার রাতে কলকাতায় পৌঁছেছেন শ্রেয়স। রবিবার ইডেনে নিজেদের মধ্যে দুটি দল করে যে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে কেকেআর, সেই ম্যাচে খেলেন শ্রেয়স। তবে মাঠে তাঁর নড়াচড়া দেখে খুব একটা আশাব্যাঞ্জক মনে হয়নি। ফিল্ডিং করার সময় শরীর নীচে নামাতেই পারছিলেন না।


তবে কেকেআর ভক্তদের জন্য আশার খবর বয়ে আনল সোমবার। ইডেনের নেটে দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং করলেন শ্রেয়স। প্রায় পৌনে দু'ঘণ্টার সেশনে বেশ সাবলীল দেখিয়েছে তাঁকে। এমনকী, বাউন্সারে স্কুপ শটও খেললেন। যা দেখে উচ্ছ্বসিত নাইট ভক্তরা। 


সুপারফ্যানকে উপহার


কলকাতা থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। ঘণ্টা তিনেকের পথ পেরিয়ে আসতে হয়। রেল, সড়ক ও জলপথ - কোনওটাই বাদ যায় না। তবু ক্রিকেটের টানে তিনি ছুটে ছুটে আসেন। শুধু আসেনই না, নিজেকে রাঙিয়ে আনেন বেগুনি-সোনালিতে। প্রিয় দলের জার্সির রঙ।


তিনি, অশোক চক্রবর্তী (Ashoke Chakraborty)। নবদ্বীপের অশোকের মধ্যে যেন সচিন তেন্ডুলকর প্রেমী সুধীর গৌতমের ছায়া। হয়তো বা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভক্ত রামবাবুর প্রতিলিপি। কলকাতা নাইট রাইডার্সের খেলা থাকলে যিনি সারা শরীরে বেগুনি-সোনালি রঙ করে আসেন। মাথায় পরেন শোলার টুপি। শাহরুখ খান-জুহি চাওলাদের নাইটদের আদলে তৈরি করেছেন নিজেই। একহাতে কেকেআরের বিশাল পতাকা। অন্য হাতে শঙ্খ। কেকেআর (KKR) ব্যাটাররা চার-ছক্কা মারলে বা বোলাররা উইকেট তুললেই শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গ্যালারি। দল জিতলেই স্লোগান দেন, 'দিল সে কেকেআর, জান সে কেকেআর, প্যায়ার সে কেকেআর।'


সেই অশোকের জন্য এবার সারপ্রাইজ নিয়ে হাজির শাহরুখ-জুহির দল। কেকেআরের সুপার ফ্যানকে দেওয়া হল গোল্ডেন পাস। যে পাস দিয়ে তিনি এই মরশুমে নাইটদের সব ম্যাচ মাঠে গিয়ে দেখতে পারবেন। কেকেআর যে সমস্ত অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলবে, সেই সব ম্যাচের টিকিটের পাশাপাশি যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করে দেবে কেকেআর কর্তৃপক্ষ। সোমবার বাইপাসের ধারে একটি অনুষ্ঠানে অশোকের হাতে সেই পাস তুলে দেওয়া হল। এদিনের অনুষ্ঠানে উন্মোচিত হল কেকেআরের নতুন জার্সিও।


রোহিতে আস্থা হার্দিকের


তিনি কোনওদিন ভাবেননি, যে দলের হয়ে আইপিএল (IPL 2024) অভিষেক হয়েছিল, সেই দলকেই একদিন নেতৃত্ব দেবেন। তিনি, হার্দিক পাণ্ড্য (Hardik Pandya)। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (Mumbai Indians) অধিনায়ক হিসাবে নতুন ইনিংস শুরু করতে চলেছেন তিনি। সপ্তদশ আইপিএলে নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে বঢোদরার অলরাউন্ডারকে। 


টুর্নামেন্ট শুরুর আগে হার্দিক বলেছেন, 'দারুণ অনুভূতি। এই দল থেকেই আমার সফর শুরু হয়েছিল। দশ বছর পর সেই দলকেই আমি নেতৃত্ব দেব। দারুণ লাগছে।'


২০১৫ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়েই আইপিএলে অভিষেক ঘটান হার্দিক। মুকেশ ও নীতা অম্বানির দলের হয়ে চার-চারটি ট্রফি জেতেন। তবে ২০২২ সালে তিনি গুজরাত টাইটান্সের অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব নেন। সেবার তিনি দলকে চ্যাম্পিয়নও করেন। গত আইপিএলেও নজর কেড়ে নিয়েছিলেন অধিনায়ক হার্দিক। তাঁর নেতৃত্বে গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল গুজরাত টাইটান্স। ফাইনালেও উঠেছিল। তবে ফাইনালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় গুজরাতের।


এই মরশুমে হার্দিক ফিরেছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে। তাঁকে ট্রেডিং উইন্ডো মারফত দলে নেয় মুম্বই। আর পুরনো দলে ফিরেই গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন হার্দিক। তাঁকে অধিনায়ক ঘোষণা করে দিয়েছে পাঁচবারের আইপিএল চ্যাম্পিয়নরা।


যদিও রোহিত শর্মাকে সরিয়ে হার্দিককে দায়িত্ব দেওয়ায় কম জলঘোলা হয়নি। বিশেষ করে জাতীয় দলের অধিনায়ক ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে পাঁচবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করা রোহিতকে সরিয়ে দেওয়া হল কোন যুক্তিতে ভর করে, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। মরশুম শুরুর আগে প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে হার্দিকের দিকেও ধেয়ে এল সেই প্রশ্ন। 


হার্দিক অবশ্য বিতর্ক বাড়ানোর রাস্তায় হাঁটেননি। বলেন, 'আমি সাফল্যের সময় নিজেকে নিয়ে মাতামাতি করি না। ব্যর্থতার সময় নিজের ওপর আস্থা হারাই না। সেটাই আমার পদ্ধতি আর আমি বিশ্বাস করি গোটা কেরিয়ারে এই ব্যাপারটা আমাকে খুব সাহায্য করেছে।' তারপরই হার্দিক বলেন, 'আলাদা কিছু হবে না কারণ ও (পড়ুন রোহিত) তো আছেই। ও জাতীয় দলেরও অধিনায়ক আর সেই ব্যাপারটা আমাদের পক্ষে ভাল হবে কারণ ও এই দলকে সমস্ত সাফল্য দিয়েছে। ও যেটা শুরু করেছিল, সেটাকেই আমি এগিয়ে নিয়ে যাব। আমি জানি গোটা মরশুমে ওর ভরসার হাত আমার কাঁধে থাকবে।'


মুম্বইয়ে রোহিত


ছবি আর তার সঙ্গে যুতসই ক্যাপশন, আইপিএল (IPL 2024) শুরু হওয়ার আগে সব দলই সমর্থকদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া সাজিয়ে দিচ্ছে। ব্যতিক্রমী নয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সও (Mumbai Indians)। তাদের শিবিরের বেশিরভাগ খবর সোশ্যাল মিডিয়াতেই জানিয়ে দিচ্ছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।


তবে ব্যতিক্রম হল সোমবার। এদিন বিকেলের দিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি পোস্ট করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। আলোআঁধারি ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তিকে। পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আর চেয়ে রয়েছেন জানালার বাইরে। বাইরে দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্র। মেরিন ড্রাইভ। বহুতল। ছবিটিতে কোনও ক্যাপশন দেয়নি মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ভক্তরা যা দেখে জল্পনা শুরু করে দেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স শিবিরে কে এই আগন্তুক। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তরা জানতে চান, কেন ক্যাপশন দেওয়া হয়নি? এই ব্যক্তি কে?


তবে ভক্তদের বুঝতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। ওই রহস্যময় ছবিটি আসলে রোহিত শর্মার। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে পাঁচবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করা অধিনায়ক। ভারতীয় দলের নেতৃত্বের ব্যাটনও তাঁর হাতে। সদ্য টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৪-১ দুরমুশ করে সিরিজ জিতেছেন। তবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তাঁকে সরিয়ে অধিনায়ক করেছে হার্দিক পাণ্ড্যকে। সেই হার্দিক, ২০২২ সালের আইপিএলের আগে যাঁকে রিটেন করেনি মুম্বই। শোনা গিয়েছিল, মুকেশ ও নীতা অম্বানির দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে হার্দিকের। হার্দিক সেবার যোগ দেন গুজরাত টাইটান্সে। সেবার তিনি দলকে চ্যাম্পিয়নও করেন। গত আইপিএলেও নজর কেড়ে নিয়েছিলেন অধিনায়ক হার্দিক। তাঁর নেতৃত্বে গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল গুজরাত টাইটান্স। ফাইনালেও উঠেছিল। তবে ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে হেরে যায় গুজরাত টাইটান্স।


মুশফিকুরের কাণ্ড


৫০ ওভারের বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে চার মাস কেটে গিয়েছে। তবে সেই বিশ্বকাপে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার রেশ কাটছেই না। বাংলাদেশ অধিনায়ক শাকিব আল হাসানের আপিলে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার শ্রীলঙ্কান তারকা ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ় টাইমড আউট হন। তাঁর হেলমেটে গোলযোগের জেরে নির্ধারিত সময়ে স্ট্রাইক নিতে ব্যর্থ হন ম্যাথিউজ় সেই নিয়ে কম তর্ক-বিতর্ক হয়নি। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে (BAN vs SL) ওয়ান ডে সিরিজ় জয়ের পরে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের (Mushfiqur Rahim) এক কর্মকাণ্ডে ফের একবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল সেই ঘটনার স্মৃতি।


শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজ়ে ২-১ জয় পায় বাংলাদেশ। সিরিজ় জয়ের পর টিম ফটোসেশনের জন্য সব বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা জড়ো হন। চ্যাম্পিয়ন লেখা বোর্ডের আগে বাংলা টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সিরিজ়ের ট্রফিটি রাখেন। পাশ থেকে হেলমেট হাতে নিয়ে হেঁটে আসেন মুশফিক। হেলমেট হাতেই সতীর্থদের উদ্দেশে কিছু অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায় মুশফিকুরকে। তাঁকে দেখে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা হেসে উঠেন। তারপরেই তিনি সতীর্থদের সঙ্গে টিম ফটোসেশনে যোগ দেন।