কলকাতা: ২০১৪ সালের পর ফের একবার মরুশহরে আইপিএলে নামতে চলেছেন তিনি। তবে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব নয়, এবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিতে। ২০১৪-র আইপিএল তাঁর কাছে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। সেবার ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে তাঁর সেঞ্চুরি এখনও লোকের মুখে মুখে ফেরে। প্রায় ৬ মাস পরে মাঠে নামছেন। প্রস্তুতি কীরকম? করোনা আবহে কিটব্যাগে নতুন কী যোগ হল? বাইশ গজে ঝড় তুলতে কটা ব্যাট সফরসঙ্গী হচ্ছে? দলের নিষেধাজ্ঞায় স্ত্রী-সন্তানদের কলকাতায় রেখে যেতে হচ্ছে বলে কতটা মন খারাপ? জৈব সুরক্ষা বলয়ে অবসর সময় কাটাতে কী করবেন? মুম্বই হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে রওনা হবেন আগামী সপ্তাহে। তার আগে এবিপি আনন্দ-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে খোলামেলা জাতীয় টেস্ট দলের উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা

প্রশ্ন: মার্চ মাসের গোড়ায় বাংলার জার্সিতে রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটে আপনার খেলা শেষ ম্যাচ। তার প্রায় ৬ মাস পর ক্রিকেটে ফেরা। অনুভূতিটা কীরকম?

 

ঋদ্ধিমান সাহা: মাঠে ফিরতে পারাটা দারুণ আনন্দের। সব মানুষই চায় তার প্রিয় কাজকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে। ক্রিকেট শুধু আমার পেশাই নয়, আমার প্যাশনও। আমার যেটুকু পরিচিতি সবটাই ক্রিকেটের জন্য। যা প্রাপ্তি সবই এই খেলাটা থেকে। তাই ফের মাঠে ফিরতে পারব ভেবে আমি ভীষণ খুশি।

 

প্রশ্ন: আরব আমিরশাহিতে ২০১৪ সালে আইপিএল খেলেছেন। সেই অভিজ্ঞতা কতটা সাহায্য করবে? ওখানকার পিচের চরিত্র কীরকম হতে পারে?

ঋদ্ধিমান: আরব আমিরশাহিতে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটই হয়। ব্যাটসম্যানরা বড় রান পাবে। তবে প্রায় সকলেরই ব্যাটে-বলে কনট্যাক্ট দীর্ঘদিন ছিল না। সেটাকে ঝালিয়ে নিতেই হবে। শুধু আমি নয়, সব ক্রিকেটারদেরই। তা নাহলে এমনি এমনি বড় রান আসবে না। তবে আগেরবার ওখানে খেলার সুবাদে উইকেট বা পরিবেশ নিয়ে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে।



প্রশ্ন: উইকেটকিপারদের কাছে রিফ্লেক্সকে সেরা সম্পদ মনে করা হয়। সেখানে প্রায় ৬ মাস মাঠের বাইরে কাটানো। রিফ্লেক্স ধরে রাখাটা কতটা কঠিন? রিফ্লেক্সে যাতে আঁচ না পড়ে, তার জন্য কী করছেন?

ঋদ্ধিমান: মাঠে নেমে প্র্যাক্টিস করার তো কোনও বিকল্প হয় না। সেটা করতে পারিনি। বাড়িতে যতটুকু সম্ভব সেটাই করেছি। টেনিস বলে ক্যাচিং, ডিউস বলে লোফালুফি। শুধু স্নায়ুর অনুভূতিগুলো তাজা রাখার জন্য। যাতে আচমকা মাঠে নেমে মনে না হয় যে, ও ডিউস বল ধরতে এরকম লাগে! আরব আমিরশাহিতে গিয়ে ২০-২৫ দিন পাব। সেই প্রস্তুতি শিবিরে পরিশ্রম করে বাকিটা ঘষামাজা করে নিতে হবে।

প্রশ্ন: করোনা আবহে নানারকম বিধিনিষেধ এসেছে। প্রচুর সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হচ্ছে। আপনার কিটব্যাগে কী কী নতুন সঙ্গী হচ্ছে?

 

ঋদ্ধিমান: কিটব্যাগে মাস্ক ও স্যানিটাইজার থাকবেই। করোনার থেকে বাঁচার জন্য দলের তরফে অন্য কিছু দেওয়া হবে কি না জানি না। পাশাপাশি যতটা সম্ভব পারস্পরিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে। সকলেরই করোনা টেস্ট হতেই থাকবে। তবে নিজেদের সচেতন হতে হবে। যতটা বিধি মনে চলা যায় ততই ভাল।



প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মারকাটারি শট খেলার প্রয়োজন হয়। সেটা মাথায় রেখে আইপিএলের জন্য কোনও আলাদা ব্যাট আনালেন? কটা ব্যাট নিয়ে যাচ্ছেন ইউএই-তে?

ঋদ্ধিমান: তিনটি নতুন ব্যাট এসেছে। টুর্নামেন্টের মাঝপথে তো আর ফেরার ব্যাপার থাকছে না। তাই বেশি নিয়ে যাওয়াই ভাল। কিটব্যাগে কতটা জায়গা থাকে তার ওপর নির্ভর করছে আর কটা ব্যাট নেব। তবে পুরনো ব্যাটও থাকবে কিটব্যাগে। সব মিলিয়ে ৫-৬টা ব্যাট নিয়ে যাচ্ছি।



প্রশ্ন: ছেলে অনভয়ের সদ্য অন্নপ্রাশন হল। মেয়ে আনভিও খুব ছোট। স্ত্রী রোমি আর সন্তানদের কি কলকাতাতেই রেখে যাচ্ছেন?

ঋদ্ধিমান: সানরাইজার্স হায়দরাবাদ কর্তৃপক্ষ পরিবার নিয়ে যেতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। বোর্ড থেকে ব্যাপারটা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের ওপরই ছাড়া হয়েছিল। আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি মনে করছে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হলে পরিবারের সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। প্রায় ৫-৬ মাস পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। তারপর এতদিনের জন্য বাইরে যাওয়া শুধু আমার জন্য নয়, পরিবারের সকলের কাছেই কষ্টকর হবে। হয়তো এরকমও হতে পারে যে, ছেলে আমাকে খুঁজছে। মন খারাপ হবে। তবে কোনও বিকল্প নেই। যে পেশায় আমরা আছি তাতে পরিবার ছেড়ে যেতে তো হয়ই। আইপিএলের পরই অস্ট্রেলিয়া সফর রয়েছে। তবে মনে হয় অস্ট্রেলিয়া রওনা হওয়ার আগে এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের জন্য দেশে ফিরতে পারব।

ঋদ্ধিমানের ছেলে অনভয়ের অন্নপ্রাশন

প্রশ্ন: জৈব সুরক্ষা বলয় নিয়ে কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের তরফে?

 

ঋদ্ধিমান: বোর্ড থেকে যে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে, ফ্র্য়াঞ্চাইজিও সেটাই পাঠিয়েছে আমাদের।

 

প্রশ্ন: আইপিএলের আগে ও টুর্নামেন্ট চলাকালীন বারবার করোনা পরীক্ষা হবে। আপনার প্রথম পরীক্ষা কবে আর কোথায়?

ঋদ্ধিমান: দুবাই যাওয়ার আগে আমাদের দুবার পরীক্ষা হবে। আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি, একবার কলকাতায় করোনা পরীক্ষা হবে। তারপর মুম্বইয়ে একবার হবে। সব ব্যবস্থাই করছে ফ্র্যাঞ্চাইজি। মুম্বইয়েই আমরা একত্রিত হচ্ছি। তারপর ওখান থেকে বেরিয়ে যাব। তবে কবে রওনা হব সেসব কিছু এখনও চূড়ান্ত হয়নি।



প্রশ্ন: সানরাইজার্স হায়দরাবাদ দলটা এবার কেমন হয়েছে বলে মনে হয়? অধিনায়ক হিসাবে ডেভিড ওয়ার্নারকে পাবেন...

 

ঋদ্ধিমান: এবারের হায়দরাবাদ দলের একটা ভাল দিক হল, কয়েকজন দারুণ অলরাউন্ডারকে নেওয়া হয়েছে। ফলে লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যাটিং অনেক শক্তিশালী হবে। তবে খাতায় কলমে দল যেমনই হোক, মাঠে নেমে পারফর্ম করতে হবে। ডেভিড ওয়ার্নার খুব আগ্রাসী অধিনায়ক। আশা করছি ওর নেতৃত্বে আমরা ভালই খেলব।

প্রশ্ন: ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী দলের কোচ ট্রেভর বেলিস এবার আপনাদের দায়িত্বে। কী প্রত্যাশা ওঁর কাছে?

ঋদ্ধিমান: উনি দারুণ কোচ সেটা তো সকলেই জানে। আমি ওঁর কোচিংয়ের ধরন শুনেছি। সাফল্য়ের নেপথ্যে মূল মন্ত্রটা জানেন। কয়েকটা ম্যাচ খেললে বুঝতে পারব ওঁর কোচিং পদ্ধতি।

প্র্যাক্টিসে নামতে তর সইছে না বঙ্গ তারকার

প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শুকনো, ধুলো ওড়া পিচে টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের সেরা বোলার, আফগান লেগস্পিনার রশিদ খানকে কিপ করতে হবে? জাতীয় দলে আর. অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজা, কুলদীপ যাদবদের কিপ করেছেন? কাকে কিপ করা বেশি কঠিন?

ঋদ্ধিমান: অশ্বিন-জাডেজা-কুলদীপদের কিপ করতে হয় টেস্ট ম্যাচে। আইপিএল টি-টোয়েন্টি। দুটো ফর্ম্যাট সম্পূর্ণ আলাদা। বলও আলাদা ব্যবহৃত হয়। টি-টোয়েন্টিতে বেশিরভাগ বলেই ব্যাটসম্যান শট খেলে। উইকেটকিপারের হাতে খুব কম বলই এসে পৌঁছয়। তবে যে কটা আসে, গুরুত্বপূর্ণ হয়। প্রত্যেক বোলারেরই নিজস্বতা থাকে। তবে রশিদের অ্য়াকশন একটু ব্যতিক্রমী হওয়ায় ওর কোন বলটা লেগস্পিন আর কোনটা গুগলি অনেক সময় বোঝা যায় না। সে জন্যই স্পিনার হিসাবে ও ভয়ঙ্কর। বিশেষ করে এই ফর্ম্যাটে। তাই নেটে ওর বলে ভাল করে কিপিং প্র্যাক্টিস করতে হয়। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে অশ্বিনকে কিপ করা সবচেয়ে কঠিন। তারপর আসবে জাডেজা ও কুলদীপ। রশিদের সঙ্গে তো আর টেস্টে এক দলে খেলিনি। তবে টি-টোয়েন্টিতে রশিদকে কিপ করাটাই সবচেয়ে কঠিন।

 


প্রশ্ন: গতবারের আইপিএল ভাল কাটেনি। মাত্র ৫ ম্যাচ খেলেছিলেন। সব মিলিয়ে ৮৬ রান করেছিলেন। এবার কী সেই ছবিটা বদলানোর পালা?

ঋদ্ধিমান: আমাকে কটা ম্যাচ খেলানো হবে সেটা সম্পূর্ণ ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। কাকে প্রথম একাদশে খেলানো হবে সেটা টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক করবে।

প্রশ্ন: আইপিএলে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে বেশ নমনীয় মনে হয় আপনাকে। যে কোনও পোজিশনে ব্যাট করতে প্রস্তুত?

ঋদ্ধিমান: ব্যাটিং অর্ডারে আমি ফ্লেক্সিবল থাকি না, আমাকে ফ্লেক্সিবল রাখা হয়। টি-টোয়েন্টিতে ওপরের দিকে ব্যাট করতেই আমি পছন্দ করি। তবে ম্যানেজমেন্ট কী চাইছে সেটাই আসল।

 

সদ্যোজাতের সঙ্গে

প্রশ্ন: এবার করোনা আবহে সন্ধেবেলা কোনও একজন প্লেয়ারের ঘরে বসে সকলে মিলে প্লে স্টেশন খেলা বন্ধ। ঘরে ঘরে আড্ডা বন্ধ। পরিবারও সঙ্গে থাকছে না। মাঠের বাইরে অবসর সময় কাটাবেন কীভাবে?

ঋদ্ধিমান: হ্যাঁ, এবার যা করতে হবে সব একা। সন্ধেবেলা সময় পেলে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম বা হটস্টারে সিনেমা দেখব। তবে ওখানে সেগুলো চলবে কি না সেটা জানি না। আমি সায়েন্স ফিকশনের ওপর সিনেমা দেখতে পছন্দ করি। কন্টাজিয়ন দেখেছি। দেখি আর কী কী সিনেমা দেখা যায়।