ফতোরদা: ফের অল্পের জন্য মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হল তাদের। তবে হিরো আইএসএলের কঠিনতম প্রতিদ্বন্দীদের এই প্রথম জিততে দিল না এটিকে মোহনবাগান। বৃহস্পতিবার ফতোরদার পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে দুই দলের মধ্যে ফুটবলযুদ্ধের তীব্রতা ওঠে চরমে। দুই দলই প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করে এবং হাতছাড়াও করে। দু’পক্ষের আক্রমণ ও রক্ষণ বিভাগের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের শেষে ম্যাচ শেষ হয় ১-১-এ।
ন’মিনিটের মাথায় ভারতের সেরা লিগে ৫০ তম ম্যাচ খেলতে নামা ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে এটিকে মোহনবাগান এগিয়ে যায়। কিন্তু এই গোলের ১৫ মিনিট পরে তাঁরই সতীর্থ ডিফেন্ডার প্রীতম কোটালের নিজগোলে সমতা আনে মুম্বই সিটি এফসি। এর পরে দুই দল একের পর এক গোলের সুযোগ তৈরি করলেও (নীচে ম্যাচ পরিসংখ্যান দেখুন) ডিফেন্ডারদের তৎপরতায় এবং নিজেদের ব্যর্থতায় সেগুলি গোলে পরিণত করতে পারেনি কোনও পক্ষই। ডেভিড উইলিয়ামসের একটি হেড পোস্টে লেগে ফিরে না এলে বা দুই গোলকিপার একাধিক অবধারিত গোল না বাঁচালে এই ম্যাচের স্কোরলাইন হয়তো অন্যরকম হত। এই ড্রয়ের ফলে লিগ টেবলে দু’পক্ষেরই জায়গা অপরিবর্তিত রইল।
প্রথম লেগে বুমৌসকে যে ভাবে আটকে রাখতে সফল হয়েছিল মুম্বই রক্ষণ, এই ম্যাচে কিন্তু তা পারেনি। ডেভিড উইলিয়ামসের যে গোলে এগিয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান, তাতে বুমৌসের যথেষ্ট অবদান ছিল। মাত্র ৯ মিনিটের মাথায় মুম্বইয়ের বক্সের মধ্যে আহমেদ জাহুর ভুল পাস ধরে সোজা গোলে শট নেন ডেভিড (১-০)। বুমৌসের চাপেই ভুলটা করেন জাহু। প্রথম লেগের ম্যাচেও একমাত্র গোলটি ডেভিডই করেছিলেন।
এই গোলের পরেই ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগও পেয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। বাঁ দিক দিয়ে ওঠা লিস্টন কোলাসো বক্সের মধ্যে গোলের সামনে ক্রস দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি মনবীর সিং। ম্যাচের বয়স কুড়ি মিনিট হওয়ার আগেই দু’টি কর্নার ও আটটি ফ্রি কিক আদায় করে নেয় সবুজ-মেরুন শিবির। বল পজেশনেও এগিয়ে ছিল তারা।
কিন্তু এই সময়ের পর থেকেই মুম্বই ম্যাচে ফিরতে শুরু করে এবং ২৪ মিনিটের মাথায় সমতাও এনে ফেলে। বাঁ দিকের উইংয়ে বিপিন সিংয়ের পা থেকে বিক্রম সিংয়ের উদ্দেশ্যে উড়ে আসা বল হেড করে ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের গোলেই বল ঠেলে দেন অধিনায়ক প্রীতম (১-১)। অমরিন্দর বল ঠিকমতো অনুসরণ করতে না পারায় ব্যর্থ হন। গোল পাওয়ার পর থেকেই পজেশন বাড়িয়ে বিপক্ষকে চাপে রাখা শুরু করে মুম্বই সিটি এফসি এবং চাপের মুখে সবুজ-মেরুন রক্ষণে একাধিক ফাটল দেখা যায় এবং সেই সুযোগে পরপর হানা দিতে শুরু করেন জাহুরা।
তবে প্রতিআক্রমণ বন্ধ করেনি এটিকে মোহনবাগান। এমনই এক কাউন্টার অ্যাটাকে পাওয়া ফ্রিকিক থেকে হেড করে প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন ডেভিড। কিন্তু বল দ্বিতীয় পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৩৬ মিনিটের মাথায় হাওয়ায় ভাসানো এই মাপা ফ্রি কিকটি নিয়েছিলেন লিস্টন কোলাসো। তার দু’মিনিট পরই গোলের সামনে থেকে কোলাসোর নেওয়া শট গোলকিপার মহম্মদ নাওয়াজের গায়ে লাগে। এর ঠিক আগেই বক্স ছেড়ে বুমৌসকে আটকাতে গিয়েছিলেন নাওয়াজ। বিরতির বাঁশি বাজার ঠিক আগে মুম্বইয়ের বক্সের সামনে থেকে গোলে শট নেন ডেভিড, যা নাওয়াজ ডানদিকে ঝাঁপিয়ে অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেন। বিরতিতে দুই দলেরই বল পজেশন ছিল সমান। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আক্রমণের ধার বাড়াতে দিয়েগো মরিসিওর জায়গায় আট গোল করা ইগর অ্যাঙ্গুলোকে নামান মুম্বইয়ের কোচ ডেস বাকিংহাম। এই সিদ্ধান্ত কাজেও লাগে তাদের। মুম্বইয়ের আক্রমণের ধার আরও বাড়ে। তার আগে ৪৮তম মিনিটে অবশ্য ডান দিক থেকে মনবীরের ক্রস পেয়ে বুমৌস বল গোলের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন। ওই সুযোগ নষ্ট না হলে হয়তো তখনই ফের এগিয়ে যেতে পারত সবুজ-মেরুন বাহিনী। ৫৮ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে থেকে বিপিনের গোলমুখী শট আশুতোষ মেহতা ব্লক না করলে সেই সম্ভাবনা ছিল মুম্বইয়েরও।
শেষ পাঁচ মিনিটে জয়সূচক গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে দুই দলই। চার মিনিটের স্টপেজ টাইমে ডান দিক দিয়ে তৈরি হওয়া আক্রমণে প্রবীরের ফাইনাল পাস থেকে মনবীর গোলে কোণাকুনি শট নেন, কিন্তু এ বারও তা সেভ করেন নাওয়াজ। এটাই ছিল সবুজ-মেরুন শিবিরের জেতার শেষ সুযোগ। এ দিন দলের মাঝমাঠ ও রক্ষণ আরও কিছুটা সঙ্ঘবদ্ধ হলে হয়তো ম্যাচটা জিততে পারত তারা।
এটিকে মোহনবাগান দল: অমরিন্দর সিং (গোল), তিরি, আশুতোষ মেহতা (কিয়ান নাসিরি), শুভাশিস বোস, প্রীতম কোটাল (অধি), কার্ল ম্যাকহিউ, দীপক টাঙরি (প্রবীর দাস), ডেভিড উইলিয়ামস (জনি কাউকো), হুগো বুমৌস, মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো -- তথ্য সৌজন্য়ে আইএসএল মিডিয়া