ভাস্কো: দু’মাস আগে মরসুমের প্রথম ডার্বিতে তিনি মাঠে নামার সুযোগ পাননি। এই দু’মাসে ধারাবাহিক ভাবে ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়ে নিজেকে ডার্বির (derby) প্রথম দলে থাকার যোগ্য প্রমান করে তুলেছেন হীরা মণ্ডল। হুগলীর বৈদ্যবাটিতে পাড়ার মাঠ থেকে দেশের এক নম্বর লিগের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ওঠার অভিযান, প্রথম ডার্বি খেলতে নামার অনুভূতি। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (isl) মিডিয়ার সামনে অকপট হীরা।


ছোটবেলার ডার্বির স্মৃতি


ছোটবেলা থেকে ডার্বি দেখেই আমরা বড় হয়েছি। তখন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান খেলা মানে বিশাল ব্যাপার। আমাদের পাড়ায় সবাই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। ইস্টবেঙ্গলের পতাকা, তারকাদের ছবি লাগানো, এগুলো আমিও করেছি। তখন এই ডার্বি ঘিরে খুব মাতামাতি হত। বাড়িতে বা ক্লাবে বড় টিভি আনা হত খেলা দেখার জন্য। যখন ইস্টবেঙ্গল জিতত, খুব আনন্দ হত। আমি যখন অনূর্ধ্ব ১৯ দলে যখন সুযোগ পাই, তখন ডার্বি খেলার সুযোগ এসেছিল। সেই ম্যাচে নামার আগে কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ডার্বি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই আমার প্রথম ডার্বি। সেই ম্যাচে আমরা একটা পেনাল্টি পেয়েছিলাম। সেই পেনাল্টি থেকে আমি গোল করেছিলাম। সেই গোলের কথা এখনও মনে আছে। জিতেন মুর্মূ দ্বিতীয় গোল করেছিল। আমরা সেই দু’গোলে জিতেছিলাম। সেটা একটা স্মরণীয় দিন। এখন আইএসএলের মতো বড় মঞ্চে আবার ডার্বি খেলব। সে জন্য খুবই ভাল লাগছে।


ডার্বির আগের কয়েকদিনের অনুভূতি


ডার্বি বাঙালিদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। ডার্বি খেলতে নামার আগে ভিতরে একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়ই। সেই বাঙালির ফুটবলে বাঙ্গাল-ঘটির খেলা। এ সব ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়। ডার্বির জন্য আমরা প্রস্তুত। ডার্বিতে নামার জন্য আমরা সবাই আগ্রহী। সে ভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই এই ভাবনাটা আছে যে, ডার্বিতে আমরা ভাল ফল করব।


হিরো আইএসএলে অভিজ্ঞতা


এ বছরই আমার আইএসএলে অভিষেক। প্রথম দিকে খুবই সমস্যা হচ্ছিল। কারণ, এখানে খেলার গতি অনেক বেশি। এখানে খেলোয়াড়রাও খুব উঁচু মানের। দেশি, বিদেশি সবাই। যখন সতীর্থ ও কোচেরা আমাকে সাপোর্ট দেন, তখন নিজেকে মানিয়ে নিই। এখন আইএসএলের মতো একটা জায়গায় এসে খেলতে খুবই ভাল লাগছে।


শিবিরের মেজাজ


প্রথম দিকে আমাদের ফল অতটা ভাল ছিল না। ক্রমশ আমরা উন্নতি করেছি। গত ম্যাচটা বাদ দিয়ে তার আগের তিন-চারটে ম্যাচে আমরা ভাল খেলেছি। এখন দলের সবার মধ্যেই একটা বিশ্বাস এসেছে যে আমরা ভাল কিছু করতে পারি। সেই বিশ্বাস নিয়েই এখন প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করছি। মোটিভেশনের স্তরও অনেকটা ভাল। শেষ ম্যাচটা আমাদের ভাল যায়নি ঠিকই। তবে আশা করি, ঘুরে দাঁড়াব আমরা।


নতুন কোচ রিভেরা সম্পর্কে


২০১৯-এ যখন ইস্টবেঙ্গলে ছিলাম, তখন থেকে আমি ওঁকে চিনি। ওঁর সঙ্গে যদিও বেশি অনুশীলন করার সুযোগ পাইনি। দু-তিন দিন সুযোগ পেয়েছিলাম। তখন থেকেই ওঁকে চিনি। ওঁকে এখন বললে হয়তো বুঝতে পারবেন। পরের বছর উনি প্রধান কোচ হয়ে দলটাকে ভাল জায়গায় নিয়ে যান। সেখান থেকে এখন আইএসএলে এসেছেন। মানুষ হিসেবেও খুব ভাল মানুষ। খেলোয়াড়দের সঙ্গে খোলাখুলি ভাবে মেশার চেষ্টা করেন। আমাদের সমস্যাগুলোর দিকে নজর রাখেন। শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও আমরা কী খাচ্ছি, না খাচ্ছি সে দিকেও ওঁর নজর থাকে। আমাদের সমস্যা উনি সবই সমাধান করে দেন। ভুলগুলো শুধরে দেন। কোচ হিসেবে যা যা করা দরকার সবই করেন উনি।


এটিকে মোহনবাগানের ধারালো আক্রমণ সামলাবেন কী ভাবে?


ওদের অ্যাটাকিং লাইন খুবই ভাল। আইএসএলের অন্যতম সেরা। আমরা সে ভাবেই প্রস্তুত হচ্ছি। আমাদের ডিফেন্স লাইন যে রকম, তাতে আমরা প্রত্যেকে যদি নিজেদের একশো শতাংশ দিতে পারি, তা হলে ওদের আটকাতে পারব। এমন কিছু নয় যে আমরা আটকাতে পারব না। প্রথম লক্ষ্য থাকবে ডিফেন্সকে আঁটোসাঁটো রাখা। বিশেষ করে মাঝখানের লাইনটা। তার পরে আক্রমণে উঠব। শুরুর দিকে রক্ষণাত্মকই থাকব। হুড়মুড় করে আক্রমণে যাব না। আগে নিজেদের ঘর বাঁচাতে হবে, তার পরে বিপক্ষের ঘর ভাঙতে যাব।                                                                                                        ----------- তথ্য সৌজন্য আইএসএল মিডিয়া