বেঙ্গালুরু: সারা ম্যাচে তাঁকে সে ভাবে খুঁজে পাওয়া না গেলেও আসল সময়ে আসল কাজটি করে ফেললেন অস্ট্রেলিয়ান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। শনিবার তাঁর গোলেই বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়াম থেকে তিন পয়েন্ট জিতে নিজেদের শহরে ফেরার বিমান ধরছে এটিকে মোহনবাগান (ATK MohunBagan)।


প্রথমার্ধে একটিও শট গোলে রাখতে না পারা এটিকে মোহনবাগান এ দিন সারা ম্যাচে একটিই গোলমুখী শট নেয় ৬৬ মিনিটের মাথায়। পেট্রাটসের এই দূরপাল্লার শটেই গোল করে ম্যাচ জিতে নেয় তারা। এই জয়ের ফলে আট ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে নিজেদের জায়গাটা ধরে রাখল এটিকে মোহনবাগান। অন্য দিকে, বেঙ্গালুরু সাত ম্যাচে ন’পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে নয় নম্বরে। 


প্রতিপক্ষ শিবিরে তাদের চার প্রাক্তন সতীর্থ থাকলেও তাঁদের একেবারেই রেয়াত করেনি সবুজ-মেরুন বাহিনী। সুনীল ছেত্রীর দল এ দিন ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে গতিময় ফুটবল খেললেও বিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে বারবারই ব্যর্থ হন। দলের দুই প্রধান স্কোরার সুনীল ও রয় কৃষ্ণর ধারাবাহিক ব্যর্থতাই তাদের ফের হারের মুখ দেখতে বাধ্য করল এ দিন।    


দলে দু’টি পরিবর্তন করে এ দিন প্রথম এগারো নামায় এটিকে মোহনবাগান। আক্রমণে মনবীর সিংহের জায়গায় নামেন পেট্রাটস এবং মাঝমাঠে দীপক টাঙরির জায়গায় লেনি রড্রিগেজ। অন্য দিকে, বেঙ্গালুরুর প্রথম দলে দেখা যায় চার প্রাক্তন সবুজ-মেরুন তারকা প্রবীর দাস, সন্দেশ ঝিঙ্গন, হাভিয়ে হার্নান্ডেজ ও রয় কৃষ্ণকে। 


শুরুর দিকে বেঙ্গালুরু এফসি সবুজ-মেরুন ডিফেন্সকে যথেষ্ট চাপে রাখে। পাঁচ মিনিটের মাথাতেই কার্ল ম্যাকহিউ নিজেদের বক্সের মধ্যে গোলের সুবর্ণ সুযোগ তুলে দেন হার্নান্ডেজের পায়ে। ম্যাকহিউয়ের পা ফস্কানো বল পেয়ে ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে গোলের সুযোগ পেয়ে যান গত ম্যাচে জোড়া গোলের নায়ক হার্নান্ডেজ। কিন্তু সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর শট বাঁচান গোলকিপার বিশাল কয়েথ।


এটিকে মোহনবাগান তাদের প্রথম ভাল সুযোগটি পায় ২২ মিনিটের মাথায়। বাঁ দিকের উইং থেকে লেনির মাপা ক্রসে লিস্টন কোলাসো ঠিকমতো হেড করতে পারলে গোল পেয়ে যেতেন। কিন্তু তাঁর মাথার ওপর দিকে বল লেগে বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। এ ছাড়া বেঙ্গালুরুর গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুকে সে ভাবে পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারেনি তারা। 


এ দিন প্রথমার্ধে ডানদিক দিয়ে উঠতে দেখা যায় কোলাসোকে। বাঁ দিক দিয়ে উঠতে দেখা যায় আশিক কুরুনিয়ানকে। পেট্রাটসকে একটু নীচে নেমে খেলতে দেখা যায়। তাঁর সামনে ওপরে উঠে খেলতে দেখা যায় কোলাসোকে। প্রথ ৪৫ মিনিটে এটিকে মোহনবাগান একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি। যেখানে বেঙ্গালুরু দু’টি গোলমুখী শট নেয়। 


দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গতিময় ফুটবল দেখা গেলেও আক্রমণে দু’পক্ষই ছন্দ হারাচ্ছিল বারবার। দুই দলেরই রক্ষণ প্রতিপক্ষকে বক্সে ঢুকতে দিতে নারাজ ছিল। সুনীল ছেত্রী দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটা নীচে থেকে খেলেন। ফলে তাদের আক্রমণে কার্যত একা পড়ে যান রয় কৃষ্ণ। তিনি কড়া পাহাড়ায় থাকায় কৃষ্ণরও তেমন কিছু করার ছিল না। 


অন্য দিকে, মনবীর না থাকায় দিক বদল করে খেলতে হওয়ায় কোলাসোকে তেমন ছন্দে পাওয়া যায়নি এ দিন। কোলাসোর মধ্যে যাও বা তৎপরতা দেখা যায়, দিমিত্রিয়স পেট্রাটসকে ৬৫ মিনিট পর্যন্ত খুবই কম বিপক্ষের গোল এরিয়ায় দেখা যায়। কিন্তু তিনি যখনই সেই সুযোগ পান, তখনই কাজের কাজটি করে ফেলেন। অস্ট্রেলীয় তারকার গোলেই এগিয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। হুগো বুমৌসের পা থেকে বল পেয়ে ৬৬ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকেই গোলার মতো শট নেন পেট্রাটস, যা গুরপ্রীতের মতো অভিজ্ঞ গোলকিপারও রুখতে পারেননি (১-০)। বিপক্ষের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে বুমৌসকে তা দিয়েছিলেন আশিক। 


গোল শোধ করতে মরিয়া বেঙ্গালুরু এফসি ৬৯ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ পায়। এই সুযোগটিও তারা পায় এটিকে মোহনবাগানের ভুল থেকে। বক্সের সামনে হ্যামিলের মিস পাস থেকে বল পেয়ে কৃষ্ণা গোলে শট নিলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। 


গত কয়েকটি ম্যাচের মতোও এই ম্যাচেও চেনা ছন্দে খেলতে না পারা সুনীল ছেত্রীকে ৭৩ মিনিটের মাথায় তুলে নেন বেঙ্গালুরুর কোচ সাইমন গ্রেসন।


আরও পড়ুন: নক আউটের আগেই ফিট নেমার! প্র্যাক্টিস করতে দেখেই গর্জন গ্যালারিতে