বাম্বোলিম: সেমিফাইনালের প্রথম লেগে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত হেরে যাওয়ায় যে ক্ষতিস্বীকার করতে হয়েছে সবুজ-মেরুন শিবিরকে, সেই ক্ষতি পূরণ করার সুযোগ তারা পাচ্ছে দ্বিতীয় লেগে। যেখানে জয় ছাড়া কোনও রাস্তাই নেই তাদের সামনে। ফাইনালে কেরালা ব্লাস্টার্সের মুখোমুখি হতে গেলে শুধু জিতলে হবে না, অন্তত তিন গোলে জিততে হবে তাদের। যা শুধু কঠিনই নয়, দুঃসাধ্যও বটে।


যে দল সবচেয়ে কম গোল খাওয়ার দিক থেকে দু’নম্বরে রয়েছে, সেই হায়দরাবাদ এফসি-র দুর্ভেদ্য রক্ষণের দেওয়াল ভেঙে তিন গোলে হারাতে পারলে এ বারের লিগে সবচেয়ে বড় অঘটনটি ঘটিয়ে ফেলবে গতবারের রানার্স আপ-রা। লক্ষ্য লক্ষ্য সবুজ-মেরুন সমর্থক সেই স্বপ্ন দেখলেও তা বাস্তব হওয়া মোটেই সোজা নয়। নির্ধারিত সময়ে দু’গোলে এগিয়ে থাকলে ম্যাচ গড়াবে টাই ব্রেকারে। সেখানে নিষ্পত্তি না হলে টাই ব্রেকারে ফয়সালা হবে। কিন্তু সে সবের প্রয়োজন হবে কি না, সেটাই দেখার। সবুজ-মেরুন কোচ ফেরান্দো অবশ্য বলেছেন, ফুটবলে সবই সম্ভব।  


প্রথম সেমিফাইনালে যে ভাবে ১-৩-এ হারে এটিকে মোহনবাগান, তা ছিল অপ্রত্যাশিত। প্রথমার্ধে ১৮ মিনিটে রয় কৃষ্ণার গোলে গতবারের রানার্স আপ-রা এগিয়ে গেলেও প্রথমার্ধের একেবারে শেষে এক মুহূর্তের জন্য সবুজ-মেরুন ডিফেন্সের ফোকাস নড়ে যাওয়ায় বার্থোলোমিউ ওগবেচে সমতা আনেন। দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র ছ’মিনিটের ব্যবধানে পরপর দু’টি গোল করে দলকে জয় এনে দেন ইয়াসির মহম্মদ ও সিভেরিও।


এটিকে মোহনবাগানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র রয় কৃষ্ণর জায়গা বদল করে খেলার প্রভাবও দলের খেলায় ভালমতো পড়ছে। ফিজিয়ান তারকার হিরো আইএসএল সেমিফাইনাল ও ফাইনালে যত গোলে (৬) অবদান রাখার ইতিহাস রয়েছে, নক আউট পর্বে এত গোলে আর কোনও ফুটবলার জড়িত থাকতে পারেননি। সেই রয়কে বরাবর মাঝখান দিয়ে আক্রমণ করতে দেখা গেলেও ইদানীং বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে ডানদিকের উইং দিয়ে আক্রমণে উঠতে দেখা যাচ্ছে। এ ভাবে পরপর দুই ম্যাচে দুই গোল তিনি পেলেও দলের আক্রমণে যতটা ধার থাকার কথা, তা থাকছে না।


এছাড়া চোট সারিয়ে ফেরার পর হুগো বুমৌসেরও ধারাবাহিকতা সমস্যায় ফেলছে দলকে। বরং জনি কাউকো, লিস্টন কোলাসোদের অনেক মরিয়া লাগছে। কিন্তু তাঁদের জন্য বিপক্ষের কড়া পাহাড়া থাকায় তাঁরা মোটেই সে ভাবে সুযোগকে গোলে পরিণত করছেন না। মনবীর সিংয়ের সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পরিমান অনেক গুন বেশি। তাই তাঁকে গত ম্যাচে প্রথম এগারোয় জায়গা দেওয়া হয়নি। কিন্তু ডেভিড উইলিয়ামস সে দিন তেমন কার্যকর না হওয়ায় তাঁকে দ্বিতীয়ার্ধে নামাতে বাধ্য হন কোচ।


এই অবস্থায় এমন দু-তিনজন ফুটবলার দরকার, যাদের চোরা গতি এবং থার্ড ম্যান মুভ বিপক্ষের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। প্রবীর দাস, শুভাশিস বোস, মাইকেল সুসাইরাজারা সে রকমই খেলোয়াড়, যাঁদের ঠিকমতো কাজে লাগালে হয়তো লাভবান হতে পারে এটিকে মোহনবাগান। তরুণ স্ট্রাইকার কিয়ান নাসিরি গত কয়েকটি ম্যাচে পরিবর্ত হিসেবে নেমে অসাধারণ কিছু ক্রস, সেন্টার করে গোল সাজিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেননি তাঁর সিনিয়ররা। তাই কিয়ানকে গোলের আরও কাছাকাছি রাখলেও ফল পাওয়া যেতে পারে। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কোচ ফেরান্দো জানিয়ে দেন, দ্বিতীয় লেগে পরিকল্পনায় বদল হবে। কী সেই পরিবর্তন, তার উত্তর পেতে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।


হায়দরাবাদ এফসি এই ম্যাচে দু’গোলে এগিয়ে থেকে নামবে। এই বড় সুবিধাটা যাতে তাদের আত্মতুষ্টিতে পরিবর্তিত না হয়, সে দিকে নিশ্চয়ই সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন ফেরান্দোরই স্বদেশীয় কোচ মানুয়েল মার্কেজ। তাঁর চিন্তা শনিবার এটিকে মোহনবাগান প্রথমার্ধে যে ভাবে তাঁর দলকে চেপে ধরেছিল, সে রকম যাতে আবার না হয়। গত ম্যাচে জয়ের নেপথ্যে হায়দরাবাদের ফুটবলারদের কৃতিত্ব অবশ্যই ছিল। তবে পাশাপাশি এটিকে মোহনবাগানের ভুল, ক্লান্তি এবং পরিকল্পনার গলদও ছিল। বুধবার যদি তাদের প্রতিপক্ষ এগুলো মাঠের বাইরে রেখে নামতে পারে, তখন কী হবে, সেটাই প্রশ্ন। তা ছাড়া বার্থোলোমিউ ওগবেচেরা সদ্য কোভিডের সঙ্গে লড়াই করে উঠেছেন। তার প্রভাব গত ম্যাচের প্রথমার্ধেই দেখা যায়। সেই শারীরিক অক্ষমতা যদি তাদের এই ম্যাচে ফের ভোগায়, তখন কী হবে?


                                                                                                                                                                           ----------- তথ্য সংগ্রহ আইএসএল মিডিয়া