কলকাতা: নতুন কোচ। দলের খোলনলচে বদলে নতুন চেহারা। তবু আইএসএলের (ISL) প্রথম ম্যাচে আটকে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। এই পরিস্থিতিতে শনিবার আইএসএলের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামছে লাল-হলুদ শিবির। প্রতিপক্ষ, হায়দরাবাদ এফসি।
আইএসএলের প্রথম ম্যাচে তাঁর দল যেমন গোল পায়নি, তেমনই গোল হজমও করেনি। জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে গোলশূন্য অবস্থায় ম্যাচ শেষ করে মাঠ ছাড়ে। তবু দলের খেলায় অসন্তুষ্ট নন ইস্টবেঙ্গল এফসি-র স্প্যানিশ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত। দল যে ক্লিন শিট রেখে মাঠ ছাড়তে পেরেছে এবং প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছে, এতেই তিনি আশার আলো দেখছেন।
শনিবার দ্বিতীয় ম্যাচে লাল-হলুদ বাহিনি নামবে হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে। এবার তারা একেবারে নতুনভাবে দল সাজিয়ে আইএসএলে নামছে। দলে কোনও বিদেশি কোচও নেই। ভারতীয় কোচ থাঙবই সিংতোর প্রশিক্ষণে এই ম্যাচ দিয়েই এবারের আইএসএল শুরু করতে চলেছে তারা।
প্রথম ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পাওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট অর্জন করার লক্ষ্যেই যে নামবেন, তা যেমন স্পষ্ট জানান কুয়াদ্রাত, তেমনই বলে দেন, প্রয়োজন হলে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে কৌশলেও পরিবর্তন করবেন।
ম্যাচের আগের দিন, শুক্রবার, সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “আমরা কোন কৌশলে খেলব, তা আমাদেরই ঠিক করতে হবে। প্রয়োজন মতো তা বদলাতেও হতে পারে। তবে আমরা যে রকম খেলছি, তাতে আমি খুশি। মন্দার, মহেশ, নন্দ-রা দু দিক থেকে বল নিয়ে উঠছে, ক্রস দিচ্ছে, আমরা প্রচুর সুযোগও তৈরি করছি, সেই জন্য। আইএসএলে সব প্রতিপক্ষই কঠিন। কিন্তু আমরা কাল জেতার প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামব”।
গত ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল এফসি যে টানা ৯০ মিনিট একই ছন্দে খেলেছে, তা নয়। পারফরম্যান্সের রেখচিত্র প্রায়ই ওঠানামা করেছে। তা স্বীকার করে নিয়ে কোচ বলেন, “আমরা গত ম্যাচের ভিডিও দেখেছি। প্রথমার্ধের শেষ ১৫ মিনিট আমরা দুর্দান্ত খেলেছি। অনেকগুলো সুযোগ তৈরি করেছি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আমাদের একটা পেনাল্টি পাওয়ার কথা ছিল। পেনাল্টি থেকে আমরা গোল পেলে পরিস্থিতিটা সম্পুর্ণ পাল্টে যেত। আসলে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে আমাদের। যেটা সত্যিই আমরা পারছি না। তবে গোলের প্রচুর সুযোগ তৈরি করতে পারাটা অবশ্যই ইতিবাচক ব্যাপার”।
কুয়াদ্রাতের কথা শুনে অনেকেরই হয়তো মনে পড়বে গত মরশুমে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দোর বলা কথাগুলি। তাঁর দলের গোলখরার সময়েও তিনি একই কথা বলতেন, “গোল না এলে কী হবে, গোলের সুযোগ তো তৈরি হচ্ছে। গোলও আসবে”। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সারা লিগে মাত্র ২৪টি গোল করে তারা। সেমিফাইনালেও দু’টি ম্যাচে নির্ধারিত সময়ে কোনও গোল করতে পারেনি তারা। কুয়াদ্রাতও এ বার শুরু থেকে এই কথাই বলতে শুরু করেছেন। তাঁর দলেরও না গোলের সুযোগ হাতছাড়া করাটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
একাধিক সুযোগ হাতছাড়া হওয়া প্রসঙ্গে কোচ বলেন, “এটা ঠিকই যে আমাদের কনভারশন রেট ভাল নয়। কিন্তু সুযোগ তৈরি করতে পারাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে ফরোয়ার্ডদের সামনে সুবিধাজনক মুহূর্ত আসাটাও জরুরি। বলের সঙ্গে পায়ের ঠিকমতো সংযোগ হওয়াও প্রয়োজন। কিছু ম্যাচে ফরোয়ার্ডরা অনেক গোল করে, কিছু ম্যাচে আবার গোল পায়ই না। বিশ্বের সব ফরোয়ার্ডদের ক্ষেত্রেই এটা হয়”।
দলের খেলার স্টাইলও যথেষ্ট আকর্ষণীয় বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, “আমরা যে স্টাইলে খেলছি, সেটা কম আকর্ষণীয় নয়। আমরা আক্রমণে উঠছি, গোলের সুযোগ তৈরি করছি। অনেকে মিলে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকছি। ডুরান্ড কাপে আমরা সমর্থকদের যথেষ্ট আনন্দ দিয়েছিলাম। আইএসএলের প্রথম ম্যাচেও ভাল খেলেছি”।
সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রস্তুতি ম্যাচে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে খেলেছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই ম্যাচে জোনাথন মোয়ার গোলে জেতে হায়দরাবাদ। পেনাল্টির সুযোগ নষ্ট করেছিলেন ক্লেটন সিলভা। তবে সেই ম্যাচের সঙ্গে এই ম্যাচের কোনও তুলনা চান না লাল-হলুদের স্প্যানিশ কোচ। বলেন, “প্রস্তুতি ম্যাচের চেয়ে এই ম্যাচের পরিস্থিতি একদম আলাদা। ওদের বিদেশিরা বিশেষ করে যে মেক্সিকো থেকে এসেছে (ডিফেন্ডার অসওয়াল্দো অলেনিস), সে ওই ম্যাচে খেলেনি। আমাদের কঠিন ম্যাচের জন্য তৈরি হয়েই নামতে হবে। হায়দরাবাদ বরাবরই কম ব্যবধানে ম্যাচ জেতে বা হারে। ওদের ম্যাচে বেশি গোল হয় না। আমাদের সে কথা মাথায় রেখেই নামতে হবে”।
গত মরশুমে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা ব্রাজিলীয় ক্লেটন সিলভাকে দেখে অবাক সমর্থকেরা। প্রথম ম্যাচে মাত্র ৩৩ মিনিট খেলেন তিনি। মাঠে যে ছিলেন তিনি, তা প্রায় বোঝাই যায়নি। সে দিন ম্যাচের পর যা বলেছিলেন কোচ, এ দিনও প্রায় একই কথা বললেন, “ক্লেটন তৈরি হচ্ছে। ওকে আরও সময় দিতে হবে পুরোপুরি তৈরি হয়ে ওঠার জন্য। ওকে আমরা ফিট করে তোলার জন্য অনেক পরিশ্রম করছি”। সঙ্গে এও জানিয়ে দিলেন যে, জর্ডন থেকে যে নতুন ডিফেন্ডার যোগ দিতে চলেছেন, সেই হিজাজি মাহের শহরে এসে পৌঁছচ্ছেন শনিবারই।
প্রথম ম্যাচে ক্লিন শিট রাখতে পারার কৃতিত্ব দলের ডিফেন্ডারদের দিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “ওদের যথাযথ ভূমিকা পালনে আমি খুশি। আমাদের মিডফিল্ডাররাও ওদের অনেক সাহায্য করেছে। টিমওয়ার্ক ব্যাপারটা আমাদের খেলায় আছে। যখন আক্রমণে উঠি আমরা, তখন পিছন থেকেও অনেকে উঠে আসে। ঠিক সময়ে তারা নেমেও আসছে। খুশি না হওয়ার মতো খেলছে না ছেলেরা। ক্লিন শিট রাখাটা কম কৃতিত্বের নয়। গোলও আসবে। কারণ, দল দিশাহারা হয়ে উদভ্রান্তের মতো খেলছে না। যথেষ্ট সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খেলছে। এর ফল আমরা পাবই”।
আরও পড়ুন: ABP Exclusive: হাতে দইয়ের হাঁড়ি, মুরলীধরন বলছেন, বিশ্বকাপে গেমচেঞ্জার হবেন কোহলি-বুমরা
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন
https://t.me/abpanandaofficial