কলকাতা: মুম্বই সিটি এফসি-র (Mumbai City FC) বিরুদ্ধে মূলত গোল না খাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। জানিয়েছেন লাল-হলুদ শিবিরের গোলকিপার প্রভসুখন সিংহ গিল (Prabhsukhan Singh Gill)। শনিবার লক্ষ্যপূরণও হয় তাঁদের। গোলশূন্য ড্র করে মুম্বই ছেড়েছে ইস্টবেঙ্গল। মুম্বই সিটি এফসি-র টানা দ্বিতীয় গোলশূন্য ড্র।

লাল-হলুদ গোলকিপার গিল আইএসএলের ওয়েবসাইটকে বলেছেন, “আমরা একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে মুম্বইয়ে এসেছিলাম। আমাদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল গোল না খাওয়া। সেই পরিকল্পনা ও কৌশল অনুযায়ীই খেলি আমরা। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য দলের প্রত্যেকেই যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে।”

দলের এই পরিকল্পনা নিয়ে গিল আরও বলেন, “আমাদের ডিফেন্ডারদের বলে দিই, ম্যাচের শেষ দিকে তারা যেন মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলে। সারা ম্যাচে যেভাবে মনোনিবেশ করে খেলি আমরা, ম্যাচের শেষ দিকেও সেরকমই মনোনিবেশ করতে হবে। বলের নিয়ন্ত্রণ হারানো চলবে না। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেই গুরুত্বপূর্ণ এই এক পয়েন্ট অর্জন করলাম আমরা।”

মুম্বই সিটি এফসি-র আক্রমণভাগের ফুটবলারদের দুর্দান্ত দক্ষতায় সামলায় ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ। জর্ডনের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিজাজি মাহের এই ম্যাচে দুরন্ত ফর্মে ছিলেন। তাঁকেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় বাছা হয়। এই ড্রয়ের ফলে ইস্টবেঙ্গল এফসি ন’টি ম্যাচে দশ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে রয়েছে।

যিনি এর আগে প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল পেয়ে এসেছেন, মুম্বইয়ের সেই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার পেরেইরা দিয়াজ ও তাদের সবচেয়ে বিপজ্জনক গোলমেকার গ্রেগ স্টুয়ার্টকে কড়া পাহাড়ায় রাখেন মাহের, লালচুঙনুঙ্গা, মন্দার রাও দেশাই, নিশু কুমাররা। মুম্বইয়ের ফুটবলাররা ইস্টবেঙ্গলের বক্সে ২৪ বার বলে পা লাগালেও একবারও বল জালে জড়াতে পারেননি।

এ ছাড়াও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তীকে যথেষ্ট তৎপর ভূমিকায় দেখা যায়। স্টুয়ার্টকে একবার পিছন থেকে আঘাত হলুদ কার্ডও দেখতে হয় তাঁকে। ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত স্টুয়ার্টকে যে কড়া পাহাড়ায় রাখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন শৌভিককে, তা স্পষ্ট বোঝা যায়। সেই দায়িত্ব দুর্দান্ত ভাবে পালন করেন বাংলার এই ফুটবলার। ম্যাচের ৭৩ মিনিট পর্যন্ত কোনও দলই একটিও শট ক্রসবারের নীচে রাখতে পারেনি। সারা ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র দু’টি ও ইস্টবেঙ্গলের মাত্র একটি শট লক্ষ্যে ছিল।

শনিবারের ম্যাচে নামার আগে যে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করেই নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল শিবির, তা গিলের কথাতেই স্পষ্ট ছিল। তিনি বলেন, “ম্যাচের আগে আমরা বিশ্লেষণ করে দেখি, উইং দিয়ে আক্রমণের ক্ষেত্রে মুম্বই সিটি এফসি বেশ দক্ষ। আমরা জানতাম, উইং থেকে প্রচুর ক্রস দেওয়ার চেষ্টা ওরা করবেই। সেই অনুযায়ীই আমাদের ডিফেন্ডার ও মিডফিল্ডারদের জায়গা নিতে বলা হয়েছিল। যার ফল ভালই হয়েছে”।

আইএসএলে এই প্রথম টানা তিন ম্যাচে ক্লিন শিট বজায় রাখতে পারল লাল-হলুদ বাহিনি। ফলে গিল ও তাঁর সতীর্থদের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। কুয়াদ্রাতের দলের গোলপ্রহরী মনে করেন, সেরা ছয়ের দৌড় লিগের শেষ রাউন্ড পর্যন্ত চলবে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের টিমস্পিরিট দারুন জায়গায় রয়েছে। আমার মনে হয়, এ বার শেষ লিগম্যাচ পর্যন্ত সেরা ছয়ের দৌড় বজায় থাকবে। কারণ, দলগুলোর মধ্যে খুব বেশি ফারাক নেই। অনেক দলের ক্ষেত্রেই তাদের শেষ পাঁচ ম্যাচ মরণ-বাঁচন লড়াই হয়ে উঠবে। সব দলই খুব ভাল খেলছে এবং ছ’নম্বর জায়গাটার জন্য খুব হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। তাই আমাদের প্রতি ম্যচে ইতিবাচক ফল পাওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা করতেই হবে”।

মুম্বইয়ে কঠিন পরীক্ষায় পাস করার পর এ বার ঘরের মাঠে আর এক কঠিন পরীক্ষার সন্মুখীন হতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল। আগামী শুক্রবার ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে নামবে তারা। সেই ম্যাচ নিয়ে প্রভসুখন সিংহ গিল বলেন, “আমাদের বেশ কঠিন ম্যাচ খেলতে হবে। আমরা যদি ছুটির আগে কয়েকটা ভাল ফল নিয়ে শেষ করতে পারি, তা হলে সেরা ছয়ে নিজেদের জায়গা করার দিকে এগিয়ে থাকব। এ মরশুমে এটাই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। আশা করি, আমরা ভাল খেলব।”


আরও পড়ুন: ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হলেন শাহেনশাহ, মুম্বইয়ের দলের মালিক অমিতাভ


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে