কলকাতা:গোল করে দলকে তিন পয়েন্ট এনে দিতে না পারলেও মুম্বই থেকে এক পয়েন্ট অর্জন করার ক্ষেত্রে কিন্তু তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নাওরেম মহেশ সিং (Naorem Mahesh)। মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে সম্প্রতি ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal FC) গোলশূন্য ড্রয়ের নেপথ্যে যে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, যারা মন দিয়ে সে দিন খেলাটা দেখেছেন এবং ফুটবলটা অল্পবিস্তর বোঝেন, তাঁদের নিশ্চয়ই আলাদা করে বুঝিয়ে দিতে হবে না।


মুম্বই সিটি এফসি-র (Mumbai City FC) আধিপত্য সত্ত্বেও বাঁদিকের উইং দিয়ে মাঝে মাঝে যে ভাবে উঠছিলেন ও জায়গা তৈরি করে নিচ্ছিলেন তিনি, যে ভাবে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি, তাতে শুধু তাঁর আক্রমণের দক্ষতা নয়, রক্ষণের দক্ষতারও পরিচয় পাওয়া যায়। ফুল ব্যাকরা যে ভাবে খেলেন, সে দিন অনেকটা সে ভাবেই নিজেকে মেনে ধরেন মণিপুরের মহেশ।



ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের অনেকেরই হয়তো মনে থাকবে, গত মরশুমে এই মুম্বই এরিনায় তাঁর গোলেই প্রথম মুম্বই সিটি এফসি-কে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের ৫২ মিনিটের মাথায় ডানদিক থেকে ক্লেটন সিলভা ক্রস দেন বক্সের মাঝখানে থাকা মহেশের উদ্দেশ্যে। তিনি গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে জালে বল জড়াতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি। মুম্বইয়ের বক্সে তখন তিন-চারজন ডিফেন্ডার থাকলেও তাঁরা মহেশকে আটকাতে পারেননি।


লাল-হলুদ বাহিনীর প্রথম একাদশে এখন কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতের প্রথম পছন্দ ২৪ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। ন’টি ম্যাচে দু’টি করে গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। প্রতিপক্ষের বক্সে যেখানে ২৩বার বল ধরেছেন তিনি, সেখানে মোট ৩৭৩ বারের মধ্যে ২৬২ বার প্রতিপক্ষের অর্ধে বলে পা লাগিয়েছেন। গত মরশুমে যেখানে ১৯ ম্যাচে প্রতিপক্ষের অর্ধে ২৩বার ড্রিবল করেছিলেন তিনি, সেখানে চলতি মরশুমে ন’টি ম্যাচেই প্রতিপক্ষের অর্ধে ২৬বার ড্রিবল করা হয়ে গিয়েছে তাঁর।


এ জন্য তাঁর নিজের কৃতিত্ব তো রয়েছেই, কৃতিত্ব প্রাপ্য ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতেরও। আক্রমণভাগে নিজের দায়িত্ব সামলে রক্ষণেও কী ভাবে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারবেন, এই শিক্ষা তাঁকে মূলত দিয়েছেন কুয়াদ্রাত। নিজেই এ কথা জানিয়ে মহেশ বলেন, "কোচ কার্লসের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। রক্ষণে কী ভাবে খেলতে হবে। দল হিসেবে কোচ চান আমরা রক্ষণ ও আক্রমণে সমান দক্ষতা নিয়ে খেলি। ফুটবলার হিসেবে ওঁর কাছ থেকে আমি আরও অনেক কিছুই শিখেছি। যেমন আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে রক্ষণেও কী ভাবে জায়গা নিতে হবে। আরও শিখতে চাই, যাতে দলকে আরও ভাল ফল এনে দিতে পারি।"


মহেশের ধারণা, রক্ষণে তারা অনেক উন্নতি করেছে বলেই ক্রমশ ভাল পাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "সম্প্রতি আমাদের ফল ভাল হওয়ার অন্যতম কারণ দলের রক্ষণে উন্নতি হওয়া। এর আগে গোল করছিলাম। কিন্তু ৬০-৭০ মিনিটের পরে গোল খেয়েও যাচ্ছিলাম। এর পরে প্রতি ম্যাচের শেষ ২০-২৫ মিনিটে আমরা যেরকম কঠোর ভাবে মনোনিবেশ করেছি, এটাই শেষ পর্যন্ত কাজে দিয়েছে।"