কলকাতা: ইম্ফল থেকে ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরের এক গ্রাম নম্বোল নাওরেম-এ আর কেউ কি দেশের জার্সি গায়ে ফুটবল মাঠে নেমেছেন? কী করেই বা নামবেন? যে গ্রামের বেশির ভাগ পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, যে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা হয় চাষবাস, নয় দিনমজুরি, সেই গ্রামের কোনও ছেলে কী করেই বা জীবন-জীবিকার ভাবনা ছেড়ে দিনরাত খেলাধুলা নিয়ে পড়ে থাকার দুঃসাহস দেখাবে?



তবু সেই স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সে গ্রামের এক কাঠ মিস্ত্রি ইনগো সিং। তিনি তাঁর ছেলকে সেই স্বপ্ন দেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন বলেই ভারতীয় ফুটবলে আজ এক নতুন তারকার জন্ম হয়েছে। তাঁর নাম মহেশ সিং। ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা তো বটেই, বাংলার ফুটবলপ্রেমীরাও তাঁর জন্য গর্বিত। কারণ, তিনি যে এই বাংলারই এক ক্লাবের এক নির্ভরযোগ্য ফুটবলার। ইস্টবেঙ্গল এফসি হয়তো গত মরশুমে তেমন সাফল্য পায়নি। কিন্তু এই দলের হয়ে খেলে মহেশের প্রতিভার ছটার বিচ্ছুরণ যে ভাবে হয়েছে, তা তাঁকে আন্তর্জাতিক ফুটবলের আঙিনাতেও উজ্জ্বল করে তুলেছে। সে জন্যই এখনও বোধহয় অনেকে বিশ্বাস করে, সত্যিকারের প্রতিভাকে কখনও আটকে রাখা যায় না।

ভারতীয় ফুটবলের নয়া তারকা

এ বারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালের বিরুদ্ধে ভারত যে দু’গোলে জেতে, সেই দুই গোলেই মহেশের অবদান ছিল। একটি তো তিনি নিজেই করেন, অন্যটি তাঁর পাস থেকেই করেন সুনীল ছেত্রী। সে দিন ম্যাচের ৬১ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে উঠে মহেশ বক্সের মধ্যে মাপা ক্রস দেন কার্যত অরক্ষিত সুনীল ছেত্রীকে। মুক্ত সুনীল জালে বল জড়াতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি। এর দশ মিনিট পরে প্রতি আক্রমণে ওঠা সহাল আব্দুল সামাদ প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে সুনীলকে সোজা পাস বাড়ান। সুনীল বক্সে ঢুকে গোলে শট নিলেও তা নেপালের গোলকিপারের হাতে লেগে বারে ধাক্কা খায়। বার থেকে ফিরে আসা বল অনুসরণ করে তা জালে জড়িয়ে দেন সুযোগসন্ধানী মহেশ।

এমন পারফরম্যান্সের পর মহেশকে নিয়ে হইচই হবে না, তাই কখনও হয়? এর আগের দুই ম্যাচেও পরিবর্ত হিসেবে নেমে ভারতীয় দলের কোচ স্টিমাচকে যথেষ্ট খুশি করেছিলেন তিনি।  ফুটবল মাঠে যতটা আক্রমণাত্মক ও ছটফটে ২৪ ভছর বয়সী এই লেফট উইঙ্গার, মাঠের বাইরে ততটাই লাজুক ও কম কথার মানুষ এই মহেশ। নিজের সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে বরাবরই নারাজ। যা বলেন, নিজের খেলার মাধ্যমে বলেন। যেমন বলেছিলেন গত হিরো আইএসএল মরশুমে।