কলকাতা: বিদেশি ফুটবলারদের যেমন জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকে, তেমনই তাঁদের সঙ্গে জনপ্রিয়তার দৌড়ে পাল্লা দেন কয়েকজন দেশীয় ফুটবলারও। এই প্রতিবেদনে তেমনই দশজন ভারতীয় তারকার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। আসন্ন আইএসএলে কলকাতার ২ প্রধান ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের জার্সিতে যাঁরা নজর কাড়তে পারেন। কে কে আছে সেই তালিকায়, দেখে নিন- 


বিশাল কায়েথ (মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট)


ফুটবলে গোলকিপারদের বলা হয় যে কোনও দলের রক্ষণের সর্বশেষ সীমা। সবুজ-মেরুন শিবিরের রক্ষণ এমনিতেই যথেষ্ট শক্তিশালী। তার ওপর বিশাল কায়েথের মতো দুর্ভেদ্য গোলকিপার থাকা মানে প্রতিপক্ষের রাতের ঘুম উড়ে যাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। গতবার তিনি ১৯টি গোল হজম করেছিলেন এবং ৬৭টি গোল বাঁচান। তাঁর সেভ পার্সেন্টেজ ছিল ৭৭.৯%। টানা একাধিক মরশুমে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা গোলকিপারদের পক্ষে মোটেও সোজা নয়। এ বার বিশালের সামনে তাই বিশাল চ্যালেঞ্জ। গতবারের ছন্দ বজায় রাখার।  


আনোয়ার আলি (মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট)


দলের খেলার স্টাইলে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছেন আনোয়ার আলি। শুধু যে দলের রক্ষণেই তিনি বড় সম্পদ, তা নয়। অ্যাটাকিং থার্ডেও নিজেকে প্রায়ই বিপজ্জনক করে তোলেন ২৩ বছর বয়সী এই তারকা ফুটবলার। মরশুমের শুরুতেই মোহনবাগানের হয়ে তিনটি গোল করা হয়ে গিয়েছে তাঁর। আসন্ন আইএসএলে নিজেকে আরও কতটা মেলে ধরবেন এই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার, তা নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে এখনও।


লালচুঙনুঙ্গা (ইস্টবেঙ্গল)


গতবার ১৯টি ম্যাচে খেলেছিলেন নুঙ্গা (দলে সবাই এই নামেই ডাকেন তাঁকে)। মরশুম শেষে ৬৭টি ট্যাকল, ২৫টি ইন্টারসেপশন, ৮৬টি ক্লিয়ারেন্স ও ৪৩টি ব্লক জমা হয় তাঁর খতিয়ানে। তা সত্ত্বেও সারা লিগে ৩৮টি গোল খায় ইস্টবেঙ্গল এফসি। আসলে সতীর্থ ডিফেন্ডারদের সাহায্য পেলে দূর্গরক্ষার কাজটা আরও ভাল ভাবে করতে পারেন চুঙনুঙ্গা। এ বার হোসে পার্দো, হরমনজ্যোৎ, মন্দাররা সঙ্গে থাকায় আশা করা যায় চাপমুকিত হয়ে আরও ভাল খেলা দেখাতে পারবেন তিনি। ডুরান্ড কাপে তার ঝলকও দেখিয়েছেন।


আশিস রাই (মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট)


গত মরশুমে মোট ৫৩টি ক্রস দিয়েছিলেন সতীর্থদের। ১৭টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন। একজন সাইড ব্যাকের এই পরিসংখ্যান দেখে যে কোনও কোচই খুশি হবেন। আক্রমণে যেমন সাহায্য করেন, তেমনই রক্ষণেও নিজের কাজটা খুবই ভাল ভাবে করেন আশিস। বিশেষ করে তাঁর পরিচ্ছন্ন সাইড ট্যাকল প্রশংসার যোগ্য। গত আইএসএলে এতগুলো ম্যাচ খেলেও মাত্র দুটি হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। এ বারও সবুজ-মেরুন শিবিরে তাঁকে সম্ভবত একই ভূমিকায় দেখা যাবে। 


শুভাশিস বোস (মোহনবাগান সুপারজায়ান্টস)


২০১৫ থেকে পেশাদার ফুটবল খেলছেন। আইএসএলে ১১৭টি ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে তাঁর। এই অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারই তাঁকে ক্রমশ দুর্ভেদ্য করে তুলেছে। তিনি মাঠের যে দিকে থাকেন, সে দিক দিয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণে ওঠা বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। বিপক্ষের বক্সের সামনে থেকে ফ্রি কিক হোক বা কর্নার কিক, শুভাশিসকে ছেড়ে রাখা মানে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের বড় ভুল।


গ্লেন মার্তিন্স (মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট)


গতবার আইএসএলেও ১৭টি ম্যাচ খেলেন মার্টিন্স। তার মধ্যে ৭০টি ট্যাকল যেমন ছিল, তেমনই ১৭টি শটও নেন, সাতটি সুযোগ তৈরি করেন ও ছ’টি ক্রস দেন। প্রতিপক্ষের আক্রমণকে যেমন মাঝমাঠেই প্রতিহত করেন, তেমনই সেখান থেকে পাল্টা আক্রমণ তৈরির জন্য সতীর্থ মিডফিল্ডার বা ফরোয়ার্ডকে অসাধারণ ও নিখুঁত পাসও দেন। এ মরশুমে ইতিমধ্যেই এএফসি কাপ প্রাথমিক পর্বের দুটি ম্যাচ ও ডুরান্ড কাপের চারটি ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে তাঁর। 


অনিরুদ্ধ থাপা (মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট)


২৫ বছর বয়সী এই তারকা ইতিমধ্যেই ভারতীয় দলের মাঝমাঠে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘ সাত বছর চেন্নাইন এফসি শিবিরে কাটানোর পর সবুজ-মেরুন শিবিরে এসেও তিনি নিজেকে যথেষ্ট ভাল ভাবে মানিয়ে নিয়েছেন। কোচ হুয়ান ফেরান্দোর স্টাইল অনুযায়ী ক্রমশ মানিয়ে নিচ্ছেন। মোহনবাগানের মাঝমাঠকে এক নতুন মাত্রায় বেঁধে দিয়েছেন তিনি। 


সাহাল আব্দুল সামাদ (মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট)


মাঝমাঠ থেকে আক্রমণে গতি ও তীব্রতা বাড়ানোর মতো ভাল ভারতীয় খেলোয়াড় এতদিন মোহনবাগানের হাতে তেমন ছিল না। এ বার দল গড়ার আগেই তাই এই দিকটায় বেশি নজর দেন কোচ হুয়ান ফেরান্দো। দলের আক্রমণকে আরও তীব্র করে তুলতে, একেবারে রক্ষণ থেকে আক্রমণ গড়ে তোলার উদ্দেশ্য সফল করতে তাই মাঝমাঠে সহালের মতো ক্ষিপ্র ও সুযোগসন্ধানী ফুটবলার প্রয়োজন ছিল তাদের। সেই কারণেই কেরালা ব্লাস্টার্স থেকে তাঁকে নিয়ে আসে মোহনবাগান


নাওরেম মহেশ (ইস্টবেঙ্গল)


ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভা ও মহেশের জুটিই গতবার লাল-হলুদ শিবিরকে অধিকাংশ গোল এনে দেন। দলের ২২টি গোলের মধ্যে ১৩টিতে ক্লেটনের ও ন’টিতে মহেশের অবদান ছিল। লিগের পরে মহেশ ভারতীয় দলেও ডাক পান। গত বছর আইএসএলে তাঁর দল তেমন ভাল কিছু করতে না পারলেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান মহেশ। মোট ১৯টি ম্যাচে তিনি দুটি গোল করেন ও সাতটি গোলে অ্যাসিস্ট করেন। একই ম্যাচে তিনটি অ্যাসিস্টের রেকর্ডও আছে তাঁর, যা আর কোনও ভারতীয় ফুটবলারের নেই।


নন্দকুমার (ইস্টবেঙ্গল)


ডুরান্ড কাপে প্রথম কলকাতা ডার্বিতে জয়সূচক গোলটি আসে তাঁরই পা থেকে। এর পরে সেমিফাইনালে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে যখন হারের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল, তখন একেবারে শেষ মুহূর্তে তাঁর গোলেই সমতা আনে তারা এবং টাই ব্রেকারে জিতে ফাইনালে ওঠে। মরশুমের শুরু থেকেই নন্দকুমার শেখর লাল-হলুদ সমর্থকদের হৃদয় জিতে নিয়েছেন। এই দুই গোলের পর নন্দের ভক্তের সংখ্যা হু-হু করে বেড়ে গিয়েছে লাল-হলুদ সমর্থকদের মধ্যে। মূলত উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ফাটল ধরিয়ে গোল করার ক্ষমতা রয়েছে এই উইঙ্গারের।