নয়াদিল্লি: একটা সময় মাঝেমধ্যেই টপ অর্ডারে ব্যাটিং করতে দেখা যেত ভারতীয় দলের প্রাক্তন ফাস্ট বোলার ইরফান পাঠানকে। ২০০৫-এ নাগপুরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৭০ বলে ৮৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ইরফান। তাঁর ইনিংস ভারতের ১৫২ রানের ব্যবধানে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিল। এরপর থেকে মাঝেমধ্যেই টপ অর্ডারে ব্যাট করতে দেখা যেত তাঁকে। এমনকি কয়েকবার ওপেনও করেছেন। ব্যাটিংয়ে ইরফানের এই প্রোমোশন তত্কালীন কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের মস্তিষ্কপ্রসূত বলেই অনেকে মনে করেন। যদিও ইরফান জানালেন, তাঁকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানোর ব্যাপারে ভূমিকা ছিল সচিন তেন্ডুলকরের।
চ্যাপেলের সিদ্ধান্তে ইরফান তাঁর বোলিংয়ে মনোনিবেশ হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। এভাবে ইরফানের কেরিয়ার ক্ষতিকারক প্রভাব চ্যাপেল ফেলেছিলেন বলে তাঁদের অভিযোগ। ইরফান কিন্তু বলেছেন, এক্ষেত্রে চ্যাপেলের কোনও ভূমিকাই ছিল না। ২০০৫-০৭ পর্যন্ত ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে গ্রেগ চ্যাপেলের মেয়াদ ছিল খুবই বিতর্কিত। ইরফান বলেছেন, এ কারণে সহজেই তাঁর দিকে আঙুল তোলা যায়। কিন্তু ইরফান জানিয়েছেন, তাঁর কেরিয়ারের গ্রাফ পড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যাপেলের কোনও ভূমিকা নেই।
এক সাক্ষাত্কারে ইরফান বলেছেন, অবসরগ্রহণের ঘোষণার সময়ও এ কথা বলেছিলেন। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামিয়ে চ্যাপেল আমার কেরিয়ার নষ্ট করে দিয়েছেন, বলে অনেকেই মনে করেন। আসলে এটা ছিল সচিন তেন্ডুলকরের আইডিয়া। তিনি বলতেন, ইরফানের ছয় মারার ক্ষমতা রয়েছে। নতুন বল খেলে দিতে পারে এবং ফাস্ট বোলারদেরও খেলতে পারে। মুরলীধরন যখন টপ ফর্মে তখন আমাকে ব্যাটিং অর্ডারে তুলে আনার পরীক্ষা করা হয়। আসলে তা ছিল মুরলীধরনকে আক্রমণ শানানোর কৌশল। দিলহারা ফার্নান্ডো সপ্লিট-ফিঙ্গার স্লোয়ার বল শুরু করেছিল। ব্যাটসম্যানরা ভালোভাবে তা বুঝতে পারত না। তাই মনে করা হচ্ছিল, আমি এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারি। বিশেষ করে, তা ছিল সিরিজের প্রথম ম্যাচ। চ্যাপেল আমার কেরিয়ার নষ্ট করেছিলেন, এমন ধারনা একেবারেই সত্যি নয়। যেহেতু তিনি ভারতের নন, তাই তাঁকে সহজেই দায়ী করা যায়।
সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাত্কারে ইরফান জানিয়েছেন, টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানাতে পারেনি।
কেরিয়ারের শুরুটা দুরন্ত করেছিলেন ইরফান। ভারতীয় বোলার হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে দ্রুততম ১০০ উইকেট (৫৯ ম্যাচ) সংগ্রহের রেকর্ড গড়েন তিনি। মহম্মদ শামি এই রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার আগে পর্যন্ত ১৩ বছর এই রেকর্ড অক্ষত ছিল। কিন্তু কেরিয়ার এগোনোর মধ্যেই ইরফানের ভূমিকা বদলে যায়। নতুন বলে আক্রমণের ভূমিকা থেকে প্রথম বা দ্বিতীয় পরিবর্ত বোলার হিসেবে নিয়ে আসা হতে থাকে। ৫৯ ম্যাচে ১০০ উইকেট থেকে পরের ৭৩ উইকেট পেতে তাঁর লেগে যায় ৬১ ম্যাচ।
ইরফান মনে করছেন, পরিবর্তিত ভূমিকায় টিম ম্যানেজমেন্টের যে ধরনের সমর্থন দেওয়ার দরকার ছিল, তা তাঁকে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেছেন, ২০০৮-এ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে ২৮ বলে ৬০ রানের প্রয়োজন ছিল। সাত উইকেট পড়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতি থেকে তিনি দলকে জেতাতে সাহায্য করেন। ওই ম্যাচে উইকেটও নিয়েছিলেন তিনি। ওই সিরিজে সনত্ জয়সূর্যকে দুবার আউট করেছিলেন।
ইরফান বলেছেন, এরপর নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে তাঁকে একটি ম্যাচও না খেলিয়ে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। আর এরপর এমনটাই ঘটতে থাকে। তিনি চোট পেয়েছিলেন। কিন্তু দলে ফেরার জন্য তাঁকে কোনও পথ নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি বলেও জানিয়েছেন ইরফান।