কলকাতা: পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে ভারতে পৌঁছে গিয়েছে ইংল্যান্ড। চেন্নাইয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে ব্রিটিশ ক্রিকেটারদের প্রস্তুতি শিবির। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু প্রথম টেস্ট। তবে সিরিজের প্রথম বল গড়ানোর আগেই ভেসে উঠল সেই চিরাচরিত প্রশ্ন। কে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান? বিরাট কোহলি নাকি জো রুট? নাকি স্টিভ স্মিথ বা কেন উইলিয়ামসনদের মধ্যে কেউ?

আর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে স্বদেশীয় ক্রিকেটারকেই বেছে নিলেন মন্টি পানেসর। এবিপি লাইভকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন ব্রিটিশ স্পিনার সাফ জানিয়ে দিলেন, জো রুটই এখন বিশ্বসেরা। তারপর আসবে কোহলি বা স্মিথের নাম!

লন্ডন থেকে মোবাইল ফোনে পানেসর বললেন, ‘জো রুটের রেকর্ড দেখুন। ইংল্যান্ডে পেসাররা সাহায্য পায়, বল সুইং করছে, বাউন্স রয়েছে এমন পিচে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করছে। আবার উপমহাদেশের ঘূর্ণি পিচেও দুশো করছে। সব ধরনের বোলারদের বিরুদ্ধে সাবলীল। ওই এখন বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান। বিরাট, স্মিথ ও উইলিয়ামসন তালিকায় ওর পরে আসবে।’

রুটের সাম্প্রতিক রেকর্ড দুর্দান্ত। শ্রীলঙ্কাকে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে ভারতে পৌঁছেছেন তাঁরা। আর সেই সিরিজের দুই টেস্টে একটি ডাবল সেঞ্চুরি ও একটি সেঞ্চুরি-সহ ৪২৬ রান করেছেন রুট। ব্যাটিং গড়? ১০৬.৫! কার্যত একা হাতে শ্রীলঙ্কা বোলিংকে খুন করেছেন রুট। পানেসর বলছেন, ‘শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুই টেস্টে কিছু না হলেও তিনশো সুইপ-রিভার্স সুইপ খেলেছে রুট। উপমহাদেশে স্পিনের বিরুদ্ধে এত ভাল ব্যাট করতে অ্যালেস্টেয়ার কুকের পর আর কাউকে দেখিনি। রুটের সুইপ শট আটকাতে না পারলে ভারতীয় স্পিনারদের কপালে দুঃখ আছে।’

বলা হচ্ছে, সচিন তেন্ডুলকরের মোট রান ও সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড ভেঙে দিতে পারেন বিরাট-রুট-স্মিথ-উইলিয়ামসনদের কেউ। আপনারা বাজি কে? পানেসর বলছেন, ‘এদের মধ্যে কেউ নয়। এই চারজনের কেউ সচিনের রেকর্ড ভাঙলে আমি ভীষণ অবাক হব। সচিনের রেকর্ড ভাঙা আর মঙ্গল গ্রহে পা রাখা অনেকটা এক। মঙ্গলে যেমন এখনও পর্যন্ত কেউ পা রাখতে পারেনি, এরাও কেই সচিনের রেকর্ড ভাঙতে পারবে না। রুট হয়তো আরও ৭-৮ বছর খেলবে। টেস্টে ওর মোট রান এখন আট হাজারের ওপর। সেঞ্চুরি ১৯টি। সচিনের রেকর্ড ভাঙতে পারবে না।’

২০১২-১৩ মরসুমে ভারতের মাটি থেকে ইংল্যান্ডের সিরিজ জয়ের অন্যতম নায়ক অফস্পিনার মন্টি পানেসর।

শ্রীলঙ্কাকে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারিয়ে আসায় ভারতের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড কি সুবিধাজনক জায়গায় থাকবে? ২০১২-১৩ সফরে ভারতে এসে ২-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল অ্যালেস্টেয়ার কুকের ইংল্যান্ড। সেটাই ছিল দেশের মাটিতে ভারতের শেষ কোনও টেস্ট সিরিজে পরাজয়। আর সেই সিরিজে ইংল্যান্ডের জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন পানেসর। ব্রিটিশ অফস্পিনার সেই সিরিজে ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন। শিকারের তালিকায় ছিল কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকর থেকে শুরু করে বীরেন্দ্র সহবাগ, গৌতম গম্ভীর, চেতেশ্বর পূজারা, তাবড় ব্যাটসম্যানদের নাম। সেই পানেসর বললেন, ‘শ্রীলঙ্কা ও ভারতে আবহাওয়া অনেকটা একরকম ঠিক কথা। তবে টপ অর্ডার ব্যাটিং ইংল্যান্ডের মাথাব্যথার কারণ। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রুটের পারফরম্যান্স সরিয়ে রাখলে বাকিরা বলার মতো কিছুই করেনি। জ্যাক ক্রলি, ডম সিবলে-দের ভারতের মাটিতে খেলার সেরকম অভিজ্ঞতা নেই। টপ অর্ডার ভোগাবে ইংল্যান্ডকে। অন্তত ১২০ ওভার ব্যাট করতে হবে। তারপর টেস্ট জয়ের কথা ভাবা যাবে।’

টেস্ট সিরিজে ভারতকেই ফেভারিট বেছে নিচ্ছেন প্রাক্তন ব্রিটিশ স্পিনার। বলছেন, ‘ভারতই সিরিজ জয়ের দৌড়ে এগিয়ে। প্রথম টেস্টেও কোহলিরা ফেভারিট। মে মাসে যদি লর্ডসে খেলা হতো, বলতাম ইংল্যান্ড এগিয়ে।’ যোগ করছেন, ‘ইংল্যান্ডের ব্যাটিং বড় বেশি রুট-নির্ভর। ২০১২-১৩ সফরে আমাদের জয়ের নেপথ্যে ছিল কুক, কেভিন পিটারসেনদের ব্যাট হাতে দুরন্ত ফর্ম। একা কারও পক্ষে সিরিজ জেতানো সম্ভব নয়।’ বেন স্টোকসের অন্তর্ভুক্তিও ফারাক গড়বে না বলে মত পানেসরের। বলছেন, ‘লক্ষ্য করলে দেখবেন, আইপিএলের শুরুর দিকে স্টোকস ভাল খেলতে পারেনি। পরের দিকে ভাল খেলেছিল। ভারতের মাটিতে মানিয়ে নিতে ওর কিছুটা সময় লাগবে।’

তবে আত্মতুষ্টি কোহলিদের ডোবাতে পারে বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন পানেসর। বলছেন, ‘অস্ট্রেলিয়াকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হারিয়ে এসেছে বলে ভারত যদি আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ে, তাহলে কিন্তু ভুগতে হবে। ইংল্যান্ডকে দুর্বল ভাবলে ভরাডুবি হবে।’