কলকাতা: বারবার এগিয়ে গিয়েও ম্যাচ হারার জন্য যে দলের ছেলেদের শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়াই করার মানসিকতার অভাব দেখা দিচ্ছে, তা মানতে রাজি নন ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) স্প্যানিশ কোচ কার্লোস কুয়াদ্রাত (Carloas Quadrat)। তাঁর মতে ছোটখাটো ভুলের জন্যই এগুলো হচ্ছে, যে ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য অনুশীলনে তাঁরা যথেষ্ট পরিশ্রম করেন। ফুটবলারদের মানসিকতা ও জেতার খিদে নিয়ে লাল-হলুদ (East Bengal FC) কোচের কোনও অভিযোগ নেই।


দিন দশেক আগে আগে ভুবনেশ্বরে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ৭৩ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকার পরেও দু’মিনিটের মধ্যে পরপর দু’টি গোল খেয়ে ১-২-এ হারতে হয় লাল-হলুদ বাহিনীকে। তার আগের ম্যাচেও বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথমে গোল করে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও হার মানে ইস্টবেঙ্গল। গত মরশুমে এ ভাবে ১১ পয়েন্ট খুইয়েছিল তারা। এই মরশুমে ইতিমধ্যেই এ ভাবে ছ’পয়েন্ট খুইয়েছে।


শনিবার ঘরের মাঠে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধেও এমন কোনও হার তারা মানবেন না, এমনই ইঙ্গিত দিলেন কোচ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “গতবারের মানসিকতার প্রভাব এ বারেও পড়ছে, এটা বলা ঠিক নয়। এ বার আমাদের নতুন দল, নতুন প্রকল্প। কিছু কিছু জায়গায় আমাদের এখনও শোধরাতে হবে। এ মরশুমে দশটার মধ্যে পাঁচটা ম্যাচে আমরা জিতেছি, এতে আমি খুশি। দলের মধ্যে জেতার মানসিকতা রয়েছে। জেতার জায়গায় যেতেও পারছি আমরা, এটা ভাল লক্ষণ। হারার জায়গা থেকেও আমরা জিতেছি, ড্র করেছি। সুতরাং প্রতিপক্ষ হিসেবে যে আমরা খারাপ, এ কথা বলা যায় না। এই অভিজ্ঞতা আমাদের ভবিষ্যতে উন্নতি করতে কাজে লাগবে। আমরা আরও সতর্ক হয়ে খেলতে পারব পরের ম্যাচগুলোতে”।


শনিবার কঠিন ম্যাচ। লিগ টেবলের তিন নম্বরে থাকা দল কেরালা ব্লাস্টার্স তাদের প্রতিপক্ষ, যারা এ পর্যন্ত সব ম্যাচই করেছে দ্বিতীয়ার্ধে। ইস্টবেঙ্গল দ্বিতীয়ার্ধেই হতোদ্যম হয়ে পড়েছে একাধিক ম্যাচে। এই ম্যাচে তাদের সম্ভাবনা নিয়ে কোচ বলেন, “কাল ভাল লড়াই হবে। আমাদের সমর্থকেরা নিশ্চয়ই আমাদের পাশে থাকবেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে হয়তো জিতব আমরা, যে ভাবে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জিতেছিলাম। সমর্থকদের সাহায্য নিয়ে কাল একটা ভাল সুযোগ রয়েছে জয়ে ফেরার”।


দলের ছেলেদের লড়াকু মানসিকতা নিয়ে যে তিনি যথেষ্ট খুশি, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে কোচ বলেন, “দলের ছেলেদের মানসিকতায় আমি খুশি। ওরা যে ভাবে পরিশ্রম করছে, তাও খুশি হওয়ারই মতো। আসলে প্রতিটি ম্যাচেই অন্য ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। একেক সময় একেক রকমের ফুটবল খেলতে হয়। গত ম্যাচে আমাদের ছেলেদের মানসিকতা যথেষ্ট ইতিবাচক ছিল। এটা মানসিকতা বা লড়াইয়ের প্রশ্ন নয়। এমন হয়। মাঠের মধ্যে খেলোয়াড়দের সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু”।


এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে কী সমস্যা হয়েছিল, তার ব্যাখ্যা দিয়ে গিয়ে কোচ বলেন, “সে দিন প্রথমার্ধের খেলায় যথেষ্ট খুশি হয়েছি আমি। দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুটা আমরা ভাল করি। কিন্তু দশ মিনিট পর থেকেই আমরা নিজেদের পা থেকে অযথা বল খোয়াতে শুরু করি। ওই সময়ে যদি প্রতিপক্ষের পায়ে বারবার বল তুলে দেওয়া হয়, তা হলে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করবেই এবং গোলও করবে। ওরা একটা ফ্রি কিক থেকে গোল করে এবং পরে আমরা নিজেদের বক্সের মধ্যে ভুল করি। আমাদের খেলোয়াড়দের এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং আমরা ভুলত্রুটিগুলো শোধরানোর কাজ করে চলেছি”।


আরও অনেক কাজ যে এখনও বাকি, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “আমাদের মাঠের মধ্যে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই ব্যাপারটা খেলোয়াড়দের মাথার মধ্যে ঢোকানোর চেষ্টা করে চলেছি। কারণ, আমাদের আরও বড় বড় ম্যাচ খেলতে হবে। অতিরিক্ত সময়ের খেলা খেলতে হবে, ফাইনালও খেলতে হবে। এমনি এমনি তো চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় না। বেঙ্গালুরু এফসি-কে যে ভাবে চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য তৈরি করেছিলাম, ইস্টবেঙ্গলকেও সে ভাবেই তৈরি করার চেষ্টা করছি”।


দলের খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে কোচের একটাই অভিযোগ, সেটপিসে তারা নিখুঁত হতে পারছেন না। এই প্রসঙ্গে বলেন, “আপনারা যদি আইএসএলে আমার অতীতের রেকর্ড দেখেন, তা হলে দেখবেন সেট পিসের ওপর বরাবরই জোর দিয়ে এসেছি আমি। আমার প্রশিক্ষণে থাকা দল সেটপিসে বরাবরই সফল হয়েছে। এখানেও সেটাই করার চেষ্টা করছি। অতীতে আমার দল অনেকগুলো ক্লিন শিট রাখতে পেরেছে। এই নিয়ে এখানেও কাজ করছি। দল কিন্তু সেট পিস থেকে পাওয়া প্রচুর সুযোগ হাতছাড়া করেছে”।


জর্ডনের ২৬ বছর বয়সী সেন্টার ব্যাক হিজাজি মাহের যে এখন মাঠে নামার জন্য পুরোপুরি তৈরি, সেই সুখবরও এ দিন দিয়ে রাখলেন লাল-হলুদ কোচ। জর্ডনের জাতীয় সিনিয়র দলের অন্যতম সদস্যকে মাঠে নামানোর প্রশ্নে তিনি উত্তর দেন, “আমরা গত দু’সপ্তাহে দুটো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। হিজাজি দুই ম্যাচেই ৯০ মিনিট খেলেছে। ও ক্রমশ ফিট হয়ে উঠেছে। আমাদের কৌশলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করেছে। এখন ও একশো শতাংশ খেলার জন্য তৈরি। আশা করি, কালকের ম্যাচে ওকে নামাতে পারব। তবে শুরু থেকে, না বেঞ্চ থেকে, তা এখন বলতে পারব না”।


দলের ২৭ বছর বয়সী স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সল ক্রেসপোও কোচের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, “কেরালা যে খুবই ভাল দল এবং ওরা যে ৯০ মিনিট পর্যন্ত লড়াই করার ক্ষমতা রাখে, তা জানি। তবে আমরা ওদের চেয়ে ভাল খেলব। কারণ, আমরা ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে খেলব। জেতার জন্যই মাঠে নামব”। দলের সমর্থখদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আমাদের সমর্থকেরাই ভারতীয় ফুটবলে সেরা। এই স্টেডিয়ামে যখনই আমরা খেলি, তারা আমাদের সমর্থন করতে আসেন। সে জন্য তাঁদের ধন্যবাদ। তাঁদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা কাল আমরা অবশ্যই করব”।


ম্যাচের শেষ দিকে দল মানসিক ভাবে সঠি জায়গায় থাকতে পারছেন কি না, জিজ্ঞাসা করায় ক্রেসপো বলেন, “এখন বাড়তি সময়-সহ ম্যাচ অনেক দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে মানসিক ব্যাপারটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ছে। তবে আমরা এই কঠিন সময়ের জন্য তৈরি। আশা করি, কাল মানসিক ভাবে শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত আমরা সঠিক জায়গাতেই থাকতে পারব”।