ভুবনেশ্বর: কলিঙ্গ সুপার কাপে জয়ের ধারা বজায় রাখল কলকাতার দুই প্রধান মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও ইস্টবেঙ্গল এফসি। রবিবার ভুবনেশ্বরে মোহনবাগান ২-১-এ হারায় হায়দরাবাদ এফসি-কে এবং পরের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল এফসি একই ব্যবধানে হারায় আই লিগের ক্লাব শ্রীনিধি ডেকান-কে।



মোহনবাগান এসজি ২-১ হায়দরাবাদ এফসি

রবিবার এক গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত জোড়া গোল করে জেতে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। ম্যাচের প্রায় শেষ পর্যন্ত সবুজ-মেরুন বাহিনীকে ১-১-এ আটকে রাখে হায়দরাবাদ এফসি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অস্ট্রেলীয় তারকা দিমিত্রিয়স পেট্রাটস গোল করে দলকে কলিঙ্গ সুপার কাপের দ্বিতীয় জয় এনে দেন। এই হারের ফলে হায়দরাবাদ টুর্নামেন্ট থেকে কার্যত ছিটকে গেল।

টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী প্রথম এগারোয় ছ’জন পর্যন্ত বিদেশি ফুটবলার রাখতে পারলেও হায়দরাবাদের দলে কোনও বিদেশি নেই। প্রথমার্ধে বল পজেশনে মোহনবাগান এগিয়ে থাকলেও গোলের সুযোগ কিন্তু বেশি তৈরি করে হায়দরাবাদই। ২৫ মিনিটের মাথায় আব্দুল রাবির দুর্দান্ত শট আসাধারণ দক্ষতায় বাঁচান বাগান গোলরক্ষক। সবুজ-মেরুন বাহিনীর গোল এলাকায় বারবার বিপজ্জনক হয়ে ওঠেন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় রামলুনচুঙ্গা। ২৪ মিনিটের মাথায় পেট্রাটসের একটি ফ্রি কিক ছাড়া প্রথম ৪৫ মিনিটে আর কোনও সুযোগই তৈরি করতে পারেনি কলকাতার দল।

তবে দ্বিতীয়ার্ধে তেড়েফুঁড়ে ওঠে মোহনবাগান এবং ঘন ঘন আক্রমণ করতে শুরু করে। ৫০ মিনিটের মাথায় জেসন কামিংসকে গোলের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দেন সুহেল ভাট। কিন্তু কামিংস সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। গোলের সামনে থেকে নেওয়া শট বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন হুগো বুমৌস। ৬৬ মিনিটে রাজ বাসফোর ও ৭০ মিনিটের মাথায় পেট্রাটসের গোলমুখী শট দুর্দান্ত দক্ষতার সঙ্গে সেভ করেন হায়দরাবাদের গোলকিপার কাট্টিমনি।

কিন্তু হায়দরাবাদের দুঃসময় ঘনিয়ে আসে ৮৪ মিনিটের মাথায়, যখন রেফারির সঙ্গে অসংযত আচরণের জন্য লাল কার্ড দেখেন তাদের অধিনায়ক নিম দোরজি তামাং। একেই দশজনে খেলতে হচ্ছিল তাদের। তার ওপর সমানে তাদের চাপে রেখেছিল মোহনবাগান অ্যাটাকাররা। চাপ সহ্য করতে না পেরে চরম ভুল করে ফেলেন হায়দরাবাদের পরিবর্ত খেলোয়াড় জেরেমি জোমিংলুয়া। ৮৮ মিনিটে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের গোলের জালেই বল জড়িয়ে দেন তিনি।

সমতা এসে যাওয়ার পর আরও মরিয়া হয়ে ওঠে মোহনবাগান এবং প্রতিপক্ষের ওপর চাপ আরও বাড়ায় তারা। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে ফের চাপের মুখে আরও এক মারাত্মক ভুল করেন মার্ক জোথানপুইয়া। নিজেদের বক্সে হুগো বুমৌসকে ফাউল করেন তিনি এবং রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়ে দেন। এই পেনাল্টি থেকে গোল করেই দলকে তিন পয়েন্ট এনে দেন পেট্রাটস।

ইস্টবেঙ্গল এফসি ২-০ শ্রীনিধি ডেকান এফসি

রবিবার সন্ধ্যার ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে শ্রীনিধি ডেকানের ওপর এবং ১২ মিনিটের মাথাতেই প্রথম গোল পেয়ে যায়। সেন্টার লাইনের সামনে ফ্রি কিকে বল পেয়ে বক্সের বাইরে হিজাজি মাহেরের উদ্দেশ্যে লম্বা ক্রস পাঠান নিশু কুমার। দুর্দান্ত হেডে দ্বিতীয় পোস্টের দিক দিয়ে বল জালে জড়াতে কোনও ভুল করেননি জর্ডনের ডিফেন্ডার।

১৮ মিনিটের মাথায় হোসে পার্দোর কাছ থেকে বল পেয়ে বোরহা হেরেরাকে প্রায় গোলের বল সাজিয়ে দেন নন্দকুমার শেখর। কিন্তু বক্সের মাথা থেকে নেওয়া বোরহার শট বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। ২৪ মিনিটের মাথায় নন্দর গোলমুখী কোণাকুনি শট দ্বিতীয় পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

এ ভাবে ঘন ঘন আক্রমণ করতে থাকা ইস্টবেঙ্গলকে সামলাতে হিমশিম খেয়ে যায় ডেকানের রক্ষণ। তবে বেশিক্ষণ তাদের আটকে রাখতে পারেনি ডেকান। ৩১ মিনিটের মাথায় ইস্টবেঙ্গল তাদের দ্বিতীয় গোলটি পায় হাভিয়ে সিভেরিওর পা থেকে। মাহেরের কাছ থেকে উড়ে আসা বলে হেড করে পিছনে সিভেরিওর কাছে পাঠান ক্লেটন। তিনি কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ে ভলি মারেন, যা প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে জালে জড়িয়ে যায়।

দু’গোলে এগিয়ে যাওয়া লাল-হলুদ বাহিনী ম্যাচের বাকি সময় নিশ্চিন্তে ফুটবল খেলে এবং খেলাটা রীতিমতো উপভোগ করে তারা। তবে ৪৩ মিনিটের মাথায় ডেকানের ডেভিড কাস্তানেদা হেডে গোল করলেও সহকারী রেফারি জানিয়ে দেন তিনি অফসাইডে ছিলেন। যদিও তা মেনে নিতে রাজি ছিলেন না কাস্তানেদা। রিপ্লেতেও দেখা যায় সিদ্ধান্তটি বিতর্কিত ছিল।  দ্বিতীয়ার্ধে বলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রেখে ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে রাখার প্রবণতা দেখা যায় ডেকানের খেলায়। কিন্তু দশ মিনিট পর থেকে ফের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে নিয়ে নেয় কলকাতার দল। ৫৮ মিনিটে পায়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন বোরহা। তাঁর জায়গায় আসেন বিষ্ণু পুথিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে ডেকানের রক্ষণ বেশ তৎপর ছিল। প্রতিপক্ষের আক্রমণ বারবার প্রতিরোধ করে তারা।

৬৮ মিনিটের মাথায় সিভেরিওর জায়গায় শৌভিক চক্রবর্তী মাঠে নামার পর ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণে গতি আরও বাড়ে। কিন্তু ডেকানও আরও রক্ষণাত্মক হয়ে ওঠে। ৭৩ মিনিটের মাথায় কর্নার ক্লিয়ার হওয়ার পর বক্সের বাইরে থেকে জোরালো দূরপাল্লার শট নেন সল ক্রেসপো। যা আটকাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় আরিয়ান লাম্বাকে। তিনি কোনও রকমে বলকে বিপদসীমার বাইরে পাঠিয়ে দেন।

৮৭ মিনিটের মাথায় তৃতীয় গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল, যখন ক্লেটন সিলভার কোণাকুনি গোলমুখী শট প্রথমে লাফিয়ে উঠে বাঁচান লাম্বা। ফিরতি বলে নন্দকুমার গোলে শট নিলে তাও আটকে দেন লাম্বা। এ বার তাঁর হাত থেকে বল ছিটকে এলে তাতে হেড করে তা গোলে পাঠানোর চেষ্টা করেন মাহের। কিন্তু এ বার তা পোস্টে ধাক্কা খায়। তবে ইস্টবেঙ্গল এ দিন ক্লিন শিট বজায় রাখতে পারেনি স্টপেজ মিনিটে ডেকান পেনাল্টি পেয়ে যাওয়ায়। গোলমুখী বিয়াকতেয়াকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেন অজয় ছেত্রী। পেনাল্টি থেকে গোল করেন উইলিয়াম আলভেস অলিভিয়েরা। এই গোলের পরে সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ডেকান। শেষের কয়েক মিনিট তাদের আটকে রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় ইস্টবেঙ্গল।                                                                তথ্য সংগ্রহ: আইএসএল মিডিয়া