কলকাতা: ওপেনারদের সাফল্যই কি বিরাট কোহলি-স্টিভ স্মিথদের পায়ের তলার জমিটা শক্ত করে দেয়? যে ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে পরে বোলারদের শাসন করেন তাঁরা! কী হতো, যদি ওপেনারদের ঢাল না থাকত, আর প্রতিপক্ষের সেরা বোলারদের শুরু থেকেই সামলাতে হতো কোহলি-স্মিথদের! তাহলে কি ক্রিকেটবিশ্বের সেরা দুই ব্যাটসম্যান হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন তাঁরা?


ডেভিড ওয়ার্নারের মন্তব্য ক্রিকেট বিশ্বে এরকম হাজারো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে জোর বিতর্কও। যে বিতর্কে কোহলি-স্মিথরা পাশে পেয়ে যাচ্ছেন ভিভিএস লক্ষ্মণ-নভজ্যোৎ সিংহ সিধুদের মতো প্রাক্তন তারকাদের।

কী বলেছেন ওয়ার্নার? রোহিত শর্মার সঙ্গে ভিডিও চ্যাটে অস্ট্রেলিয়ার তারকা বলেছেন যে, তাঁরা, ওপেনারেরা নতুন বলের পালিশ তুলে দেন। শুরুর সময়টা পার করে দেন, যা কোহলি-স্মিথদের কাজ তুলনামূলকভাবে সহজ করে দেয়। আর সেই কারণেই বিশ্বসেরা হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন কোহলিরা।

যদিও ওয়ার্নারের এই মত সমর্থন করছেন না লক্ষ্মণ। হায়দরাবাদ থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে তিনি বললেন, ‘এটা হয়তো ওয়ার্নারের দৃষ্টিভঙ্গি। তবে ক্রিকেট টিম গেম। ১১জনের খেলা। ম্যাচ জিততে গেলে প্রত্যেকের অবদান জরুরি। হারলেও সকলে সমানভাবে দায়ী। ওপেনারদের জন্য মিডল অর্ডার বাড়তি সুবিধা পায় বলে মনে হয় না।’

লক্ষ্মণ নিজে টেস্টে মিডল অর্ডারে অবিশ্বাস্য সব ইনিংস খেলেছেন। ১৬টি সেঞ্চুরি করেছেন মিডল অর্ডারে ব্যাট করেই। যার মধ্যে রয়েছে ইডেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই ঐতিহাসিক ২৮১। তবে ওপেনিংও করেছেন তিনি। এবং ১৫টি টেস্টে ইনিংস ওপেন করে একটি সেঞ্চুরি ও চারটি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর। ২০০০ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি, শেন ওয়ার্নদের সামলে ১৬৭ করেছিলেন। তারও দুবছর আগে যে ইডেন গার্ডেন্স তাঁকে কখনও খালি হাতে ফেরায়নি, সেই মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৯৫ রান করে ভারতের জয়ের ভিত তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেটাও ছিল ওপেনার হিসাবে খেলে।

আইপিএলে ওয়ার্নার যে দলের হয়ে খেলেন, সেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মেন্টর লক্ষ্মণ। তিনি বলছেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটে সহজ বলে কিছু হয় না। ওপেনারদের নতুন বল খেলতে হয়। তবে মিডল অর্ডারকে পুরনো বলে স্পিন ও রিভার্স সুইং সামলাতে হয়। সেটাও ভীষণ চ্যালেঞ্জিং কাজ।’

সিধুর গলাতেও কার্যত একই সুর। বলে দিচ্ছেন, শুরুতে উইকেট চলে গেলে নতুন বল সামলাতে হয় মিডল অর্ডারকেই। সিধুর মত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, তিনি ওপেনার হিসাবে খেলে সাফল্য পেয়েছেন। তবে মিডল অর্ডারেও বহু ভাল ইনিংস খেলার নজির রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম, ১৯৮৮ সালে বেঙ্গালুরুতে জন রাইটের নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো ১১৬। মনে করিয়ে দেওয়া যাক, সেই ম্যাচে সিধুকে সামলাতে হয়েছিল কিংবদন্তি স্যার রিচার্ড হ্যাডলির বিষাক্ত সুইং।

ওপেনিং নাকি মিডল অর্ডার, কোন পজিশনে ব্যাট করা বেশি কঠিন? ক্রিকেট ছাড়ার পর এখন সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেন। অমৃতসর থেকে মোবাইল ফোনে সিধু বললেন, ‘সব ম্যাচে কি ওপেনারেরা শুরুর এক ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারে নাকি! ইনিংস তৈরি হোক বা কোনও লক্ষ্য তাড়া করা, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের অনেক বেশি অঙ্ক কষে এগতে হয়। শুরুতে উইকেট পড়লে মিডল অর্ডারকেই নতুন বল সামলাতে হয়। তাছাড়া উপমহাদেশে স্পিন বা পুরনো বলে রিভার্স সুইং খেলতে হয় মিডল অর্ডারকে। সেটা ভুলে গেলে চলবে না।’