কলকাতা : ফিরে দেখার পাতা সবসময় কি শুধু সুখ-স্মৃতিই বয়ে আনে? স্বপ্নভঙ্গের হতাশা, কষ্ট, ব্যর্থতাও সেখানে কোথাও গিয়ে একই রকমভাবেই হয়তো জায়গা করে নিয়ে বসে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়ে ভুল-ভ্রান্তির ময়নাতদন্ত ও প্রতিপক্ষের শ্রেষ্টত্বকে কুর্নিশ করাই হয়তো শ্রেয়।


১৯৮৩ সালে বিশ্বজয়ের পর ক্রিকেটে বিশ্বসেরা হতে ভারতের সময় লেগেছিল পাক্কা ২৮ বছর। ২০১১ সালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত আসমুদ্রহিমাচলকে উপহার দিয়েছিল একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিশ্বসেরা হওয়ার স্বাদ। কিন্তু ঠোঁটে ট্রফির ছোঁয়ার মতো মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল তার বছর আটেক আগেই। ২০০৩ বিশ্বকাপ (2003 World Cup)। দক্ষিণ আফ্রিকা। বঙ্গসন্তান তথা বর্তমান ভারতীয় বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) নেতৃত্বাধীন মেন ইন ব্লু।


২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে কার্যত হতাশার ঝুলি উপুড় হয়ে এসে পড়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের ওপরে। ফাইনালের মঞ্চে ভারতীয় পেসারদের ব্যর্থতা, বড় রান তাড়া করতে নেমে ব্যাটারদের প্রয়োজনীয় ছন্দে নিজেদের না মেলে ধরার মতো একাধিক কারণ ছিল। কিন্তু সেদিনের সেই ম্যাচে আসলে পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছিলেন একজন। ভারতকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ফের একবার বিশ্বসেরা হওয়ার রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলেন তাদের অধিনায়ক। রিকি পন্টিং (Ricky Ponting)।


এবারে ফিরে দেখা যে সুখ স্মৃতি নয়, সেই উল্লেখ তাই শুরুতেই ছিল। বরং এবারের ফিরে দেখা ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়ে ক্লাসিক এক ইনিংসকে, এক ব্যাটারকে, এক ক্রিকেটে অতি শক্তিশালী দলকে কুর্নিশ জানানোর। সঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া, আমরাও ক্রিকেটে বিশ্বসেরা হতে পারি এই বোধটা তৈরি করে দেওয়ার হোঁচট পর্বে ফিরে দেখা।


২০০৩ সালের প্রতিযোগিতায় ফাইনালে ওঠার পথে একটা মাত্র ম্যাচে হেরেছিল ভারত (India)। সেটাও ছিল অস্ট্রেলিয়ারই বিরুদ্ধে। টসে জিতে তাই প্রতিপক্ষকে বার্তা দিতে তাদের ব্যাটিং করতে পাঠিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়। তবে তৎকালীন তরুণ তুর্কি জাহির খান বা অভিজ্ঞ জাভাগাল শ্রীনাথ কেউই ফাইনালের মঞ্চে সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার (Australia) দুই মারকুটে ওপেনার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও ম্যাথু হেডেন ঝোড়ো শুরুটা করে দিয়ে গিয়েছিলেন। তারপরের মঞ্চটা জুড়ে শুধু পন্টিং ম্যাজিক।


১২১ বলে ৪ টি বাউন্ডারি ও ৮ টি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে অপরাজিত ১৪০ রানের ক্লাসিক ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলিয়া খাড়া করেছিল ৩৫৯ রানের বিশাল স্কোর। জবাবে ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টি বিঘ্ন থেকে ব্যাটারদের পাল্টা জবাবে যতই ঘাটতি থাক। যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমীই জানেন, ফাইনালের মঞ্চে এরকম দাপুটে ইনিংসে বিশাল স্কোর খাড়া করার পর মানসিকভাবে কার্যত এভারেস্টের সামনে ভারতীয় ব্যাটারদের দাঁড় করিয়ে দিয়ে তাদের ইনিংস শেষেই বিশ্বকাপ কার্যত পাকা করে ফেলেছিল অজিরা। তারপর গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি সমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়ান পেস আক্রমণ রিকি পন্টিংয়ের হাতে তৎকালীন অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় বিশ্বকাপ তুলে নিতে বাকি সাহায্য করে দিয়েছিল।






ফাইনালের মঞ্চে ভারত ব্যর্থ হয়েছিল বলাটা তাই ভুল হবে, বরং বলা ভাল রিকি পন্টিংয়ের ওস্তাদের মারে সেই দিনটা ও বিশ্বকাপ ট্রফিটা গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার দখলে।


আরও পড়ুন- ঝড়ের তাণ্ডব ইডেনজুড়ে, প্লে-অফের প্রাক্কালে ছুটে এলেন মহারাজ