সন্দীপ সরকার, কলকাতা: রঞ্জি ট্রফির (Ranji Trophy) এক ম্যাচে তিন-তিনজন ক্রিকেটারের অভিষেকের সম্ভাবনা। এমনকী, সংখ্যাটা চারও হতে পারে বলে কারও কারও দাবি। বাংলার ক্রিকেটের সাম্প্রতিক অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না কেউই। রঞ্জি অভিযান শুরুর আগে বাংলার প্রথম একাদশ নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।


বৃহস্পতিবার বিশাখাপত্তনমে অন্ধ্র প্রদেশের (AP vs BEN) বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে এবারের রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার অভিযান। সেই ম্যাচে একসঙ্গে অভিষেক হতে পারে শ্রেয়াংশ ঘোষ, সৌরভ পাল ও মহম্মদ কাইফের। শ্রেয়াংশ ও সৌরভ - দুজনই হয়তো বাংলার ইনিংস ওপেন করবেন। গত মরশুমে ওপেনার সমস্যায় বারবার বিব্রত হতে হয়েছে বাংলাকে। এবার রঞ্জি ট্রফি শুরুর আগেও কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিমন্যু ঈশ্বরণের না থাকা। জাতীয় দলে থাকায় ডানহাতি ব্যাটারকে পাচ্ছে না বাংলা। অন্ধ্র প্রদেশের বিরুদ্ধে তাই জোড়া ওপেনারের অভিষেক হতে পারে।


বিশাখাপত্তনম থেকে মোবাইল ফোনে বাংলার কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী বলছিলেন, 'নতুন যারা এসেছে, তার কিন্তু কেউ এমনি এমনি সুযোগ পায়নি। স্থানীয় ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে বাংলা দলে ডাক পেয়েছে। ওদের বলে দিয়েছি, গোটা দল পাশে রয়েছে। নিশ্চিন্তে মাঠে নামতে। খেলা উপভোগ করতে।'


বেশি কৌতূহল তৈরি হয়েছে ডানহাতি পেসার মহম্মদ কাইফকে নিয়ে। হবে না-ই বা কেন! কাইফের দাদা জাতীয় দলের তারকা বোলার। সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটিশিকারি মহম্মদ শামি। ভারতীয় তারকার হাত ধরেই কলকাতায় এসেছিলেন কাইফ। দাদার সঙ্গে প্র্যাক্টিস করেই উত্থান। বাংলার জার্সিতে বিজয় হাজারে ট্রফি খেলেছেন। নজরও কেড়ে নিয়েছেন। অন্ধ্র প্রদেশের বিরুদ্ধে তাঁকে প্রথম একাদশে দেখার সম্ভাবনা প্রবল।


সৌরাশিস বলছেন, 'বিজয় হাজারে ট্রফিতে দুর্দান্ত বোলিং করেছে। ছন্দে রয়েছে কাইফ।' মুকেশ কুমার ভারতীয় টেস্ট দলের হয়ে কেপ টাউনে খেলছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে কাইফ ও আকাশ দীপই সম্ভবত বাংলার পেস বোলিং আক্রমণ সামলাবেন। দুই স্পিনার হিসাবে প্রদীপ্ত প্রামাণিক ও কর্ণ লালের খেলা কার্যত নিশ্চিত। দুজনেরই ব্যাটের হাতও ভাল। তাই লোয়ার মিডল অর্ডার শক্তিশালী হবে। পঞ্চম বোলার হিসাবে কে খেলবেন, তা নিয়ে সামান্য ধন্দ রয়েছে। তৃতীয় পেসার খেলানো হলে সম্ভবত ঈশান পোড়েল। স্পিনার খেলানো হলে প্রয়াস রায় বর্মন। কেউ কেউ কৌশিক মাইতির কথাও ভাসিয়ে দিচ্ছেন। বাংলার অন্যতম বোলিং কোচ শিবশঙ্কর পাল বলছিলেন, 'কৌশিক দুই হাতেই বল করতে পারে। ও একটা চমক হতে পারে।' বৃহস্পতিবার সকালে মাঠে গিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


রঞ্জি ট্রফিতে ধারাবাহিকতার নিরিখে বাংলার সাম্প্রতিক রেকর্ড ঈর্ষণীয়। গত তিনবারের টুর্নামেন্টে দু'বার ফাইনালে খেলেছে বাংলা। ট্রফি হয়তো আসেনি, কিন্তু দলের ছেলেদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে খুশি সৌরাশিস। বলছিলেন, 'ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলার মতো ধারাবাহিক দল খুব একটা দেখিনি। সব ধরনের ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম করছে ছেলেরা। কে নেই, কে আছে সেটা নিয়ে ভাবছি না। আমাদের কাছে পদ্ধতিটাই আসল। ব্যাটার হোক বোলার - বাংলা ক্রিকেট দলে একটা ঘরানা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে যে খেলবে সেই দায়িত্ব পালন করবে।'


দলে যেভাবে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেল রয়েছে, তা নিয়ে ইতিবাচক সৌরাশিস। বলছেন, 'মনোজ তিওয়ারি, অনুষ্টুপ মজুমদারের মতো সিনিয়র রয়েছে। আবার নবাগত এক ঝাঁক মুখ রয়েছে। বাংলা ক্রিকেট একটা সন্ধিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ছেলেরা মাঠে নামতে মুখিয়ে রয়েছে।'


একই সুর শিবশঙ্করেরও। বলছিলেন, 'দলের প্রত্যেকে আত্মবিশ্বাসী। খুব ভাল প্রস্তুতি হয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশ ভাল দল। তবে আমরা নিজেদের প্রস্তুতিতে জোর দিয়েছি।'


শোনা গেল, বিশাখাপত্তনমের উইকেট দু'রকম আচরণ করতে পারে। পেসারদের জন্য হাল্কা ঘাস রয়েছে। আবার স্পিনাররা যেখানে বল ফেলেন, সেই জায়গাটি বেশ শুকনো। ফলে স্পিনাররাও সাহায্য় পাবেন। সব মিলিয়ে অবশ্য ব্যাটিং সহায়কই হতে পারে পিচ। যেখানে টস জেতা মানেই আগে ব্যাট করে প্রতিপক্ষের ওপর বড় রান চাপিয়ে দেওয়া সহজাত কৌশল। 


সৌরাশিস বলছেন, 'অন্ধ্র প্রদেশ দলে হনুমা বিহারী-রিকি ভুঁইয়ের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রয়েছে। লড়াই সহজ হবে না। তবে আমাদের ছেলেরা নিজেদের প্রমাণ করতে মুখিয়ে রয়েছে। একটা ভাল ম্যাচ হবে বলেই মনে হচ্ছে।'


আরও পড়ুন: দু'দিনেই শেষ টেস্ট, ৭ উইকেটে জিতে ইতিহাস ভারতের, সিরিজ অমীমাংসিত


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে