ঢাকা: এএফসি কাপের (AFC Cup) গ্রুপ পর্বের লড়াই কঠিন হয়ে উঠল মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের (Mohun Bagan Super Giant) কাছে। মঙ্গলবার ঢাকায় তারা গ্রুপ পর্বের চতুর্থ ম্যাচে হার মানল বসুন্ধরা কিংসের (Basundhara Kings) কাছে। এ দিন ২-১-এ জেতে বাংলাদেশের সেরা ফুটবল ক্লাব। লিস্টন কোলাসোর ১৭ মিনিটের গোলে মোহনবাগান এগিয়ে যাওয়ার পরেও ৪৪ মিনিটে মিগুয়েল ফিগুয়েরা ও ৮০ মিনিটে রোবিনহোর গোলে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশের দল। এ জয়ের ফলে দুই দলেরই পয়েন্ট সমান (৭) হয়ে গেল। তবে তাদের দুই মোকাবিলায় মোহনবাগান কোনও জয় না পাওয়ায় বসুন্ধরা লিগ টেবলের এক নম্বরে উঠে গেল।
মলদ্বীপে এ দিন অন্য ম্যাচে ওডিশা এফসি দু’গোলে পিছিয়ে থাকার পরও মাজিয়া এসআরসি-র বিরুদ্ধে ৩-২-এ জেতায় ছ’পয়েন্ট পেয়ে ‘ডি’ গ্রুপের তিন নম্বরে উঠে এল। প্রথম দুই দলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে তারা। ২৭ নভেম্বর তারা কলকাতায় খেলবে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এবং বসুন্ধরা ঘরের মাঠে খেলবে মাজিয়ার বিরুদ্ধে। এর পরেও মোহনবাগানের ম্যাচ বাকি থাকবে মাজিয়ার বিরুদ্ধে মালে-তে ও ওডিশা ঘরের মাঠে খেলবে বসুন্ধরার বিরুদ্ধে। দক্ষিণ এশিয়ার তিন দলের কাছেই বাকি দুই রাউন্ডের খেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল।
গত মরশুমের এএফসি কাপে ইন্টারজোনাল সেমিফাইনালে কুয়ালা লামপুর এফসি-র কাছে হারের পর এ মরশুমে এই প্রথম এই টুর্নামেন্টে হার মানল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার বসুন্ধরা ফুটবল এরিনায় রীতিমতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় দুই দলের মধ্যে। কিন্তু মোহনবাগান এসজি তাদের সেরা পারফরম্যান্স দিতে পারেনি। এএফসি কাপের নিয়ম অনুযায়ী ছয় বিদেশি খেলানোর উপায় থাকলেও এ দিন পাঁচজনের বেশি বিদেশি মাঠে নামাতে পারেনি মোহনবাগান। দিমিত্রিয়স পেট্রাটস পরিবর্তদের তালিকায় থাকলেও তাঁকে নামাননি সবুজ-মেরুন কোচ হুয়ান ফেরান্দো।
বসুন্ধরা অবশ্য ছয় বিদেশি নিয়েই নিজেদের ঘরের মাঠে খেলে এবং মোহনবাগান রক্ষণকে রীতিমতো চাপে রেখেছিল। সারা ম্যাচে এ দিন মোট ১৭টি শট নেয় বসুন্ধরা। মোহনবাগান তাদের চেয়ে একটি বেশি শট নেয়। কিন্তু বসুন্ধরা যেখানে গোলের লক্ষ্যে সাতটি শট মারে, সেখানে মোহনবাগানের ছ’টি শট লক্ষ্যে ছিল। বল দখলেও এ দিন হোম টিম এগিয়ে (৫৪-৪৬) ছিল। এমনকী পাসের সংখ্যা (৩৭৩-৩১৪) এবং পাসিং অ্যাকিউরেসিতেও এগিয়ে (৭৮-৭৭) ছিল বাংলাদেশী ক্লাব।
এ দিন তিন ব্যাকে খেলা শুরু করে মোহনবাগান। সেন্টার ব্যাক হেক্টর ইউস্তেকে মাঝখানে রেখে দু’পাশে শুভাশিস বোস ও ব্রেন্ডান হ্যামিল। আক্রমণে আরমান্দো সাদিকু ও জেসন কামিংস এবং মাঝখানে লিস্টন কোলাসো, সহাল আব্দুল সামাদ, হুগো বুমৌসো, অনিরুদ্ধ থাপা ও মনবীর সিং। দিমিত্রিয়স পেট্রাটসকে তারা এ দিন রিজার্ভ বেঞ্চে রাখে। বসুন্ধরা কিংস অবশ্য ছয় বিদেশিকে নিয়েই শুরু করে।
অনিরুদ্ধ থাপা, মনবীরকে এ দিন বিবর্ণ লেগেছে। সহাল শুরুর দিকে ছন্দে না থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে ক্রমশ ছন্দে ফেরেন। কিন্তু অ্যাটাকিং থার্ডে ফের দিশাহারা হওয়ার মাশুল দিতে হয় তাদের। সাদিকুকেও এ দিন কড়া পাহাড়ায় রেখেছিল বসুন্ধরা। কামিংস এ দিন গোলের সামনে থেকে একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করেন, যার ফল ভুগতে হয় দলকে।
শুরু থেকেই এ দিন দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে দফায় দফায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে শুরু করে। রেফারি অবশ্য কোনও কার্ড না বার করেই কড়া হাতে তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন। দুই দলই শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়ে খেলা শুরু করে এবং আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে ক্রমশ উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকে। প্রথমার্ধে দুই দলই চারটি করে শট গোলে রাখে। মোহনবাগান যেখানে মোট দশটি শট নেয়, সেখানে বসুন্ধরা ন’টি শট নেয়।
তবে প্রথম গোলটি পায় মোহনবাগান এসজি-ই, যখন ১৭ মিনিটের মাথায় গোলকিপারের হাত থেকে ছিটকে আসা বলে শট নিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন লিস্টন কোলাসো। তার আগে গোলে শট নেন বাঁ দিক দিয়ে ওঠা জেসন কামিংস। এই শটই বাঁচাতে যান বসুন্ধরার গোলকিপার মেহদি হাসান শ্রবণ। কিন্তু বল হাতে রাখতে পারেননি। বক্সের মধ্যে কোলাসোর পায়ে বল পড়লে তিনি সরাসরি শটে গোল করেন (১-০)।
এর পরে মনবীর সিং ও জেসন কামিংস একাধিক গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি। অন্যদিকে, বসুন্ধরার ডোরি, মিগুয়েল ফিগুয়েরা, সাদ উদ্দিন, গাফুরভরাও বারবার গোলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। খেলা ২৫ মিনিট গড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করে বসুন্ধরা। এই সময়ে বল বেশিরভাগ বসুন্ধরার ফুটবলারদের দখলেই ছিল। প্রথমার্ধে তাদের বল পজেশন ছিল প্রায় ৫৮ শতাংশ। মোহনবাগান অবশ্য তাদের রক্ষণের সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষকে আটকানোর চেষ্টা করে।
কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে আটকে রাখতে পারেনি কলকাতার দল। ম্যাচের ৪৪ মিনিটের মাথায় দিদিয়ে ব্রসুর অসাধারণ পাস পেয়ে প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে সোজা গোলে শট নেন মিগুয়েল ফিগুয়েরা, যা গোলের বাঁ দিকের ওপরের কোণ দিয়ে জালে জড়িয়ে যায় (১-১)। মোহনবাগানের গোলরক্ষক বিশাল কয়েথ ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও তা বাঁচাতে পারেননি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে মোহনবাগান বল পজেশন বাড়িয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে আনার চেষ্টা করলেও ৫১ মিনিটের মাথাতেই বড়সড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে যায়, যখন বাঁ দিক দিয়ে ওঠা রবিনহো বক্সের বাইরে থেকে কোণাকুনি শট নেন এবং তা দ্বিতীয় পোস্টে লেগে ফিরে আসে। মাঝমাঠ থেকে তাঁকে বল জোগান মিগুয়েল। পরের মিনিটেই ফের মিগুয়েলের জোগানো বল বক্সের বাইরে থেকে সোজা গোলের উদ্দেশ্যে শট নেন দিদিয়ে ব্রসু, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
ফের বল দখল বাড়ানো শুরু করে বসুন্ধরা এবং মোহনবাগানের ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করে। ৬০ মিনিটের মাথায় রাকিব হোসেনের কোনাকুণি শট সেভ করেন বিশাল কয়েথ। মোহনবাগানের একাধিক ডিফেন্ডারও তাঁকে আটকাতে পারেননি। তার আগে সহাল ও বুমৌসের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ব্যবধান বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে কলকাতার দল।
রাকিবের গোলের চেষ্টার পরেই গ্ল্যান মার্টিন্স নামেন সাদিকুর জায়গায়। মাঝমাঠকে আরও সচল করার জন্যই সম্ভবত তাঁকে নামান মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো। ৬৮ মিনিটের মাথায় বুমৌসের ব্যাক পাস থেকে গোলে শট নেন সহাল, যা গোলকিপার শ্রবণের হাতে লেগে গোলের বাইরে চলে যায়। এই সময় থেকে ফের পজেশন বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করে মোহনবাগান। কিন্তু প্রায়শই হওয়া ভুল পাসের জন্য তা প্রতিপক্ষের দখলে চলে যায়।
দ্বিতীয় গোলের জন্য মরিয়া মোহনবাগান তাদের লক্ষ্য প্রায় পূরণ করে ফেলেছিল ৭১ মিনিটের মাথায়। বাঁদিক দিয়ে ওঠা কোলাসোর ফরোয়ার্ড পাস থেকে গোলে বল ঢুকিয়েও দেন জেসন কামিংস। কিন্তু তার আগেই অফসাইডের পতাকা তুলে দেন সহকারী রেফারি।
কিন্তু ৮০ মিনিটের মাথায় যে গোলের সুযোগ তৈরি করেন বসুন্ধরার তিন বিদেশি ডোরি, ব্রসু ও রোবিনহো, তা আটকাতে পারেনি মোহনবাগান রক্ষণ। বক্সে ডোরি থেকে ব্রসু হয়ে বল যখন রোবিনহোর পায়ে আসে, তখন তিনি সম্পুর্ণ অরক্ষিত ছিলেন। অথচ বক্সের মধ্যে মোহনবাগানের অন্তত পাঁচজন খেলোয়াড়কে দেখা যায়। রোবিনহো সোজা গোলে শট নেন এবং জালে বল জড়িয়ে দেন (১-২)।
আরও পড়ুন: ABP Exclusive: বিশ্বকাপের মাঝেই কলকাতায় প্র্যাক্টিসে নেমে পড়ছেন পন্থ? অপেক্ষায় গুরু সৌরভ-পন্টিং
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন