বিশকেক: পর্বত অভিযানে গিয়ে বিপদে মহিলা পর্বতারোহী। ভারী তুষারপাতের মধ্যে গত ১২ দিন ধরে আটকে রয়েছেন তিনি। তাঁকে উদ্ধার করে আনতে দফায় দফায় অভিযান চালানো হলেও, একটিও সফল হয়নি। আবহাওয়ার এত অবনতি হচ্ছে যে উদ্ধারকার্য বাতিল করতে হয়েছে। যত সময় যাচ্ছে, মহিলা পর্বতারোহীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করার সম্ভাবনী ক্ষীণ হচ্ছে। তাঁর জন্য় প্রার্থনা করছেন পরিবারের লোকজন ও শুভাকাঙ্খীরা। (Mountaineer Stuck in Icy Mountain)

চিন ও কিরগিস্তান সীমান্তে অবস্থিত তিয়ান শান পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, জেঙ্গিস চোকুসু তথা ভিক্টরি পিক ছুঁতে গিয়েছিলেন রুশ পর্বতারোহী নাতালিয়া নগোভিৎসিনা। গত ১২ অগাস্ট সেখানে পা ভেঙে যায় তাঁর। সেই থেকে আটকে রয়েছেন তিনি। কিরগিস্তানের জরুরি পরিষেবা মন্ত্রক জানিয়েছে, বার বার উদ্ধারকার্য চালানো হলেও নাতালিয়াকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে ইতিমধ্যে আর এক পর্বতারোহী মারা গিয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে। (Natalia Nagovitsyna)

আমেরিকার CNN জানিয়েছে, পর্বতারোহীদের একটি দল নাতালিয়ার কাছে পৌঁছতে সম্ভব হলেও, ভাঙা পা নিয়ে নামতে পারেননি তিনি। প্রতিকূল আবহাওয়ায়  ফলে তাঁকে নামিয়ে আনার পরিবর্তে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে নেমে আসতে হয়েছে সকলকে। এমনকি নাতালিয়াকে ফিরিয়ে আনতে গিয়েই গত ১৫ অগাস্ট প্রাণ হারিয়েছেন ইতালির লুকা সিনিগাইয়া। খারাপ আবহাওয়ার জন্যই এমন পরিস্থিতি বলে জানিয়েছে কিরগিস্তান সরকার।

শেষ বার, গত ১৯ অগাস্ট ড্রোন উড়িয়ে নাতালিয়ার অবস্থান জানা গিয়েছিল। পর্বতশৃঙ্গে  সামান্য নীচেই রয়েছেন তিনি। তখনও জীবিতই ছিলেন নাতালিয়া। কিন্তু এখন নাতালিয়া আদৌ বেঁচে আছেন কি না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি কিরগিস্তান সরকার। কিন্তু লাগাতার আবহাওয়ার অবনতি হচ্ছে যেভাবে, তাতে নাতালিয়ার বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ হচ্ছে ক্রমশ। ভারী তুষারপাত হচ্ছে সেখানে। শনিবারও নাতালিয়াকে খোঁজার অভিযান স্থগিত রাখতে হয় তার জেরে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪ হাজার ৪০০ ফুট উঁচু ‘ভিক্ট্রি পিক’-ই তিয়ান শান পর্বতমালার উচ্চতম শৃঙ্গ। ভৌগলিক অবস্থানের জন্যই ওই শৃঙ্গ অভিযান অত্য়ন্তই দুরূহ কাজ। এত ঠান্ডা যে শরীর জমে যায় সাধারণ অবস্থাতেই। ওই পর্বতশৃঙ্গকে ‘তুষার চিতা’ও বলা হয়। এর অন্তর্গত ৭০০০ শৃঙ্গ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত। এর মধ্যে পাঁচটি জয় করতে পারাই মাইলফলক হিসেবে গণ্য হয়। ৩০ মহিলা-সহ এখনও পর্যন্ত ৭০০ জনই সেই কাজে সফল হয়েছেন। 

নাতালিয়ার স্বামী সেরগেই পর্বত অভিযানে গিয়েই মারা যান। ‘তুষার চিতা’র অংশ, খান টেংরি শৃঙ্গ জয় করতে গিয়ে মারা যান তিনি। প্রচণ্ড ঠান্ডা কাবু করে ফেলে সেরগেইকে। সেই অভিযানেও সেরগেইয়ের সঙ্গী ছিলেন নাতালিয়া। স্বামীকে ছেড়ে সেই সময় নামতে রাজি হননি নাতালিয়া। তাঁর পরিণতি যাতে সেরগেইয়ের মতো না হয়, তার জন্য প্রার্থনা করছেন সকলে। এখন উদ্ধার করতে না পারলে বসন্তকাল পর্যন্ত নাতালিয়ার দেহ পেতে অপেক্ষা করতে হতে পারে।