কলকাতা: দুঃস্বপ্নের মধ্যে যেন কাটছিল সময়। দু'বছরের মধ্যে একের পর এক তিক্ত স্মৃতির ভিড়। অভিজ্ঞ দল নিয়ে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফেরা। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো, দেশের মাটিতেও একাধিপত্যের পাশে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন বসে যাওয়া। কারণ, ইংল্যান্ড এসে ভারতের মাটিতে ভারতকে টেস্ট সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে গিয়েছে। মন্টি পানেসর-গ্রেম সোয়ান স্পিন জুটিকে সামলাতে নাস্তনাবুদ হতে হয়েছে ভারতীয় ব্যাটিংকে।


কোথায় তখন ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বা তার চার বছর পরের ওয়ান ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সোনালি অধ্যায়? মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (MS Dhoni) ততদিনে নেতৃত্বের মুকুটে কাঁটা অনুভব করতে শুরু করে দিয়েছেন। সমালোচনার ক্ষতবিক্ষত হচ্ছেন ক্যাপ্টেন কুল। এতটাই যে, আপাত নির্লিপ্ত ধোনিও ভেতর ভেতর ধাক্কা খেয়েছেন।


ক্ষোভে, হতাশায় দুটি জিনিস জীবন থেকে সরিয়ে রেখেছিলেন মাহি। সংবাদপত্রের খেলার পাতা ও টেলিভিশন!


তারই মাঝে অগ্নিপরীক্ষা। কারণ, দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলতে হাজির অস্ট্রেলিয়া। প্রথম টেস্ট চেন্নাইয়ে। এই সিরিজে পরাজয় মানে, ধোনির নেতৃত্বের গদি নিয়েই যেন টানাহ্যাঁচড়া শুরু হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি।


তার ওপর চেন্নাইয়েও যেন বিধি বাম। অজিদের কোথায় স্পিন জালে নাজেহাল করার কৌশল সাজানো হচ্ছে, সেখানে কি না টস জিতে প্রথম ব্যাটিংয়ের সুবিধা পেয়ে গেলেন অজি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। অর্থাৎ কি না, টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করার ঝুঁকি সামলাতে হবে ভারতকেই। প্রথম ইনিংসে আবার সেঞ্চুরি করে বসলেন ক্লার্ক। প্রায় চারশোর কাছাকাছি (৩৮০) স্কোর তুলল অস্ট্রেলিয়া। ভারতের সামনে যতরকম প্রতিকূলতা থাকা সম্ভব ছিল, সবই যেন হাজির।


আর সেই মঞ্চকেই নিজের প্রত্যাবর্তনের সিঁড়ি হিসাবে বেছে নিলেন ধোনি। চার নম্বরে নেমে কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকর করলেন ৮১। বিরাট কোহলি করলেন ঝকঝকে সেঞ্চুরি। কিন্তু ছয়ে নেমে ধোনি যেন নিজেকে প্রমাণ করার মরিয়া তাগিদ নিয়ে মগ্ন। ২৬৫ বলে করলেন ২২৪ রান। একমাত্র ভারতীয় উইকেটকিপার হিসাবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি। নিজের টেস্ট কেরিয়ারের সর্বোচ্চ। এবং রান করলেন প্রায় পঁচাশি স্ট্রাইক রেট রেখে।


অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণে ছিলেন মিচেল স্টার্ক, পিটার সিডল, জেমস প্যাটিনসন, নাথান লায়নদের মতো রথী-মহারথীরা। ধোনির ব্যাটিং বিক্রমের সামনে সবাই তখন খড়কুটো। ধোনির পরাক্রম সামলাতে এমনকী, ক্লার্ক ও ডেভিড ওয়ার্নারকেও হাত ঘোরাতে হয়েছিল। লাভ হয়নি। প্রথম ইনিংসে ৫৭২ রানের বিশাল স্কোর করে ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ২৪১ রানে শেষ। ভারত ৫০/২ তুলে ৮ উইকেটে ম্যাচ জেতে।


সেই ম্যাচের পরই ধোনি জানিয়েছিলেন, সমালোচনায় এতটাই ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছিলেন যে, টিভি দেখা বা কাগজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ধোনি বলেছিলেন, 'টিভি দেখা ও সংবাদপত্রের খেলার পাতা পড়া বন্ধ করে দিয়েছি। সেটা আমাকে দারুণ সাহায্য করেছে। কারণ খেলার খবর পড়লেই জেনে যেতাম ভারতে কী হচ্ছে।' যোগ করেছিলেন, 'এই ইনিংসটা অন্যরকম। আমার কাছে নিজের কাজটাই সবচেয়ে বড়।'


সেই সিরিজ ছিল ক্যাপ্টেন কুলের পুনর্জন্ম। অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করে সিরিজ জিতেছিল ভারত।