শহরে তাঁর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে গৌতম গম্ভীর বলেছিলেন, সুনীল নারিনকে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে পাওয়া যাবে। মানে, আজ বুধবারের ম্যাচ থেকে। ঠিক ছিল, মঙ্গলবার সকালেই শহরে ঢুকে পড়বেন ক্যারিবিয়ান স্পিনার। কিন্তু টিমের সঙ্গে প্র্যাকটিসে তাঁকে দেখা গেল না। কেকেআরের এক কর্তা জানালেন, মঙ্গলবার রাতের মধ্যে নারিন চলে আসছেন। রাতের দিকে আবার জানা গেল, নারিনের আগমন পিছিয়ে গিয়েছে। সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বুধবার ভোরবেলা!
প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
কলকাতা নাইট রাইডার্সের ন’বছরের ইতিহাসে টিমে অনেক বদল হয়েছে। অধিনায়ক পাল্টেছে। ম্যানেজমেন্টে নতুন মুখ এসেছে। টিম লিস্ট ঢেলে সাজানো হয়েছে।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের ন’বছরের ইতিহাসে একটা জিনিসে কোনও পরিবর্তন হয়নি। আরও ভাল করে বললে, একটা ম্যাচের গুরুত্ব অপরিবর্তিত থেকেছে। সেটা, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচ। টিম মালিক শাহরুখ খান বহু বার তাঁর টিমকে বলেছেন, আর কোনও ম্যাচ জেতো না জেতো, মুম্বই ম্যাচটা জিততেই হবে। বলেছেন, এটা তাঁর কাছে সম্মানের ব্যাপার।
আজ, বুধবার তাঁর কেকেআরের সামনে সেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে দুটো টিম যেখানে দাঁড়িয়ে:
কলকাতা নাইট রাইডার্স: শহরে তাঁর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে গৌতম গম্ভীর বলেছিলেন, সুনীল নারিনকে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে পাওয়া যাবে। মানে, আজ বুধবারের ম্যাচ থেকে। ঠিক ছিল, মঙ্গলবার সকালেই শহরে ঢুকে পড়বেন ক্যারিবিয়ান স্পিনার। কিন্তু টিমের সঙ্গে প্র্যাকটিসে তাঁকে দেখা গেল না। কেকেআরের এক কর্তা জানালেন, মঙ্গলবার রাতের মধ্যে নারিন চলে আসছেন। রাতের দিকে আবার জানা গেল, নারিনের আগমন পিছিয়ে গিয়েছে। সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বুধবার ভোরবেলা!
ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে দীর্ঘ বিমান-যাত্রার পরে জেটল্যাগ নিয়ে প্রথম ম্যাচ খেলে দিয়েছিলেন আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু তিনি শহরে ঢুকেছিলেন ম্যাচের আগের রাতে। সেখানে সুনীল নারিন নামছেন ম্যাচের দিন ভোরে। সাধারণ বুদ্ধিতে এই অবস্থায় বুধবার তাঁর খেলা খুব কঠিন। কিন্তু সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য নারিন-প্রসঙ্গে নাইট শিবিরকে বিশেষ চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে না। গত বার তাঁকে ছাড়াই অনেক ম্যাচ খেলেছে কেকেআর। জিতেওছে।
পঁয়তাল্লিশের ব্র্যাড হগ যেখানে প্রতি ম্যাচে নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, সাফল্যও পাচ্ছেন, সেখানে নারিন গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই। কিন্তু অপরিহার্য নন। ব্র্যাড হগ এ দিন বলছিলেন, কোথা থেকে এত এনার্জি পান। বলছিলেন, স্ত্রীর কথা ভেবে ২০০৮-এ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়াটা এখনও তাঁকে তাড়া করে। বিশেষ করে যেখানে সেই বিয়েটাই তাঁর টেকেনি। ব্র্যাড বলছিলেন, নতুন সঙ্গিনী তাঁর মোটিভেশন। বলছিলেন, পঞ্চাশেও ক্রিকেট মাঠ ছাড়তে চান না!
নারিন ফিরে এলে প্রথম এগারোয় তাঁর জায়গা পাওয়া কঠিন, ভালই জানেন। কিন্তু নাইট-ধর্ম মেনে বলেও দেন, টিমে ‘মি’-র আগে সব সময় ‘উই’। তাই বুধবার বা অন্য কোনও দিন যদি তিনি খেলার সুযোগ না পান, মুখ গোমড়া করে থেকে মোটেও ড্রেসিংরুমের আবহাওয়া বিগড়ে দেন না। শুধু ব্র্যাড হগ নন। সোমবার টিম হোটেলে বসে পেসার জন হেস্টিংসও বলছিলেন, টিমের স্বার্থ আগে। তিনি বা অন্য কেউ টিমে সুযোগ পেলেন কি না, সেটা অপ্রাসঙ্গিক।
এখানেই হয়তো গৌতম গম্ভীরের সবচেয়ে বড় সাফল্য। টিম থেকে ‘ইগো’ শব্দটাকে চিরতরে বিতাড়িত করে সত্যিকারের একটা টিম তৈরি।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স: ঘরের মাঠে পুণের বিরুদ্ধে উদ্বোধনী ম্যাচ হারা মুম্বইয়ের কাছে এটা মরসুমের প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ। গম্ভীরের কলকাতাকে যেখানে খুব থিতু দেখাচ্ছে, রোহিত শর্মার মুম্বই সেখানে বরাবরের ‘লেট স্টার্টার’ হিসেবে পরিচিত। রোহিত নিজেও এ দিন স্বীকার করে নিলেন, কম্বিনেশন ঠিকঠাক করে ওঠা হয়নি। নিলামে কেনাবেচার পরে টিম কম্বিনেশন গুছিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে।
আপাতত টিম রোহিতের স্বস্তির চেয়ে দুশ্চিন্তা বেশি। প্রধান পেস অস্ত্র লাসিথ মালিঙ্গার চোট সারেনি। তাঁকে কবে পাওয়া যাবে, রোহিত জানেন না। অন্তত সপ্তাহদুয়েক মালিঙ্গাকে ছাড়া নামতে হবে, ধরেই নিয়েছে মুম্বই। উঠতি ভারতীয় পেসার জসপ্রীত বুমরাহর প্রশংসা করছিলেন রোহিত। কিন্তু এ দিন আবার প্র্যাকটিসে মাথায় চোট পেয়ে যান বুমরাহ। উঁচু ক্যাচ ধরতে গিয়ে বল এসে লাগে তাঁর মাথায়। মাটিতে পড়ে যান বুমরাহ। মুম্বইয়ের এক কর্তা রাতের দিকে বললেন, ‘‘বুমরাহ ঠিক আছে।’’ কিন্তু বুধবার বুমরাহ খেলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাইলেন না।
হাঁটুর চোট সারিয়ে ওঠা কায়রন পোলার্ড উদ্বোধনী ম্যাচে সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পারেননি। কিন্তু তাঁর অধিনায়ক মাত্র একটা ম্যাচ দিয়ে পোলার্ডের বিচার করতে চান না। প্রথম ম্যাচের হার নিয়ে ভাবাটাও রোহিতের এজেন্ডায় নেই। বরং তিনি শুনিয়ে গেলেন, তাঁর টিম আদ্যন্ত পেশাদার টিম। একটা হারে তাঁরা কেউই এতটা মুষড়ে পড়েন না যে, নতুন করে কারও মোটিভেশন দরকার পড়বে।
সব মিলিয়ে যা অবস্থা, তাতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ‘টিমে’ সেরা পারফর্মার আপাতত একজনই। তিনি ক্রিকেটার নন। টিম মালকিনের পুত্র, আঠারো মাসে ১০৮ কেজি ওজন ঝরানো অনন্ত অম্বানী!