সন্দীপ সরকার, কলকাতা: তখন তাঁর বছর তেরো বয়স। পারফর্ম করেও উত্তরপ্রদেশের অনূর্ধ্ব ১৫ দলে সুযোগ পেলেন না। কুলদীপ যাদবকে (Kuldeep Yadav) গ্রাস করল হতাশা।


মহেন্দ্র সিংহ ধোনির (MS Dhoni) বায়োপিক মনে করুন। ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের দলে সুযোগ তো পেলেনই না, তাঁর নাম নিয়ে নির্বাচনী বৈঠকে আলোচনা পর্যন্ত হয়নি। যা শুনে ভেঙে পড়েছিলেন ধোনির বন্ধু, পরিজনেরা। ধোনি কিন্তু সেদিনই সিঙ্গাড়া-বালুসাইয়ের পার্টি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই মুহূর্তটা তিনি স্মরণীয় করে রাখতে চান। বুকের ভেতর আগুনটা জ্বালিয়ে রাখতে চান। সেই আগুনের আঁচ পরবর্তীতে টের পেয়েছে গোটা বিশ্ব।


বালক কুলদীপ অবশ্য অতটা কঠোর সংকল্প নিতে পারেননি। বরং হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। আত্মহননের কথা ভেবেছিলেন। সেই সময় তাঁকে আগলে রেখেছিলেন যিনি, আজ তাঁর মুখে হাসি। কপিল পাণ্ডে। কুলদীপের শৈশবের কোচ। এখনও কোনও বড় টুর্নামেন্টের আগে ব্যক্তিগত গুরুর কাছে প্রশিক্ষণ নিতে যান কুলদীপ। বিশ্বকাপের আগেও গিয়েছিলেন। বুধবার ভারত যখন নিউজ়িল্যান্ডের (IND vs NZ) বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলতে নামছে, আর কুলদীপকে মনে করা হচ্ছে ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মার অন্যতম সেরা অস্ত্র, কপিলের বুক তখন গর্বে ফুলে উঠছে।


এবিপি আনন্দকে মোবাইল ফোনে কপিল বলছিলেন, 'ভীষণ কঠিন সময় ছিল সেটা। যে কোনও বাচ্চাই যদি পারফর্ম করেও সুযোগ না পায়, হতাশা আসবেই। কুলদীপকেও অবসাদ গ্রাস করেছিল। ওকে আমি সেই সময় বোঝাই, সুযোগ আসে না, সুযোগ তৈরি করে নিতে হয়। জীবন এখানেই শেষ নয়। এমন পারফর্ম করো যে, নির্বাচকেরা মাঠে এসে তোমার খেলা দেখবে।' অনেকটা তরুণ ধোনিকে যেভাবে বলা হয়েছিল, নির্বাচকেরা যেখানে বসে, ঠিক সেইখানে ছক্কা মারো...


কুলদীপ গুরুর কথা মন্ত্রের মতো মেনে চলেছিলেন। নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন আরও কঠোর সাধনায়। স্কোরবোর্ডে তাঁর নামের পাশে উইকেটের পর উইকেট। রাজ্য দলে সুযোগ। জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া। আর সেখান থেকে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ভারতের স্পিন-ভরসা কুলদীপ।


চলতি বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান দেখুন। ৯ ম্য়াচে ১৪ উইকেট কুলদীপের ঝুলিতে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে, ওভার প্রতি মাত্র ৪.১৫ রান খরচ করেছেন। ধর্মশালায় নিউজ়িল্যান্ডকে চার উইকেটে হারিয়েছিল ভারত। সেই ম্যাচে শুরুতে মার খেলেও পরে টম ল্যাথাম ও গ্লেন ফিলিপ্সকে ফিরিয়ে কিউয়ি ব্যাটিংয়ের কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন। ওয়াংখেড়েতে প্রায় ন্যাড়া পিচে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলছে ভারত। সেমিফাইনালেও তুরুপের তাস হতে পারেন কুলদীপ।


কপিল বলছেন, 'উইকেটে পেলেই যে কোনও বোলারের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। কুলদীপও আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে। ওর অ্যাকশনের জন্য কোনটা রং ওয়ান, ব্যাটাররা ধরতে পারছে না। ইংল্যান্ডের জস বাটলারকে যে বলটায় বোল্ড করেছিল মনে করুন। বুঝতেই পারেনি বাটলার। অথচ আইপিএলে ওর বিরুদ্ধে খেলেছে বাটলার।' গর্বিত গুরু যোগ করছেন, 'ও এখন গতির তারতম্য ঘটাচ্ছে। উইকেট থেকে সাহায্য় না পেলেও বল ঘোরাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়তি বাউন্সও পাচ্ছে। ওয়াংখেড়েতে নিউজিল্যান্ড ব্যাটারদের সামনে কিন্তু অগ্নিপরীক্ষা।'


এক সময় পেসার হতে চাওয়া ক্রিকেটারকে চায়নাম্যান স্পিন করতে দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন কপিল। তারপর কোচের নির্দেশে স্পিন বোলিং শুরু কুলদীপের। বিস্ময়-স্পিনারের গুরুর হুঁশিয়ারি, সেমিফাইনালে ভারতের ব্রহ্মাস্ত্র হতে পারেন চায়নাম্যান স্পিনারই।


আরও পড়ুূন: ''অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটছে টিম ইন্ডিয়া", রোহিতদের বিরুদ্ধে মাঠের লড়াইয়ের আগে সতর্ক কেন


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial