চেন্নাই: রবিবার রাতে সবচেয়ে খুশি কে? রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)? নাকি কপিল দেব (Kapil Dev)? কিংবা মনিন্দর সিংহ?


অস্ট্রেলিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে কাপ বোধনেই ৩৬ বছর পুরনো অভিশাপ থেকেও মুক্ত হল ভারতীয় ক্রিকেট (Ind vs Aus)।


১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ (ODI World Cup)। কপিল দেবের (Kapil Dev) বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সামনে সেবার খেতাব রক্ষার লড়াই। চেন্নাইয়ে অ্যালান বর্ডারের অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল কপিল'স ডেভিলস নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠা সেই ভারতীয় দল। আর জেফ মার্শের সেঞ্চুরির দাপটের পরে নভজ্যোৎ সিংহ সিধু, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তদের লড়াই সত্ত্বেও মাত্র ১ রানে হেরে গিয়েছিল ভারত। মনিন্দর সিংহ স্টিভ ওয়র বলে আউট হয়ে যেতেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ভারতের। বিশ্বকাপে দেশের মাটিতে সেটা ছিল কপিল-সুনীল গাওস্করদের কাছে বিরাট এক ধাক্কা।


সেটা ছিল ১৯৮৭-র ৯ অক্টোবর। আর রবিবার ৩৬ বছর পরের ফের এক অক্টোবর। ৮ অক্টোবর। অস্ট্রেলিয়াকে ৫২ বল বাকি থাকতে হারাল ভারত। বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হল জয় দিয়ে। যে জয় কপিল-মনিন্দরদের ৩৬ বছরের ক্ষতে প্রলেপ দেবে। স্বস্তি দেবে রোহিতকেও। শুরুর থরহরিকম্প যে আতঙ্ক তৈরি করে দিয়েছিল ভারতীয় শিবিরে!


সামনে লক্ষ্য মাত্র ২০০ রানের। আর সেই রান তুলতে গিয়েই কিনা ভারতের স্কোর হয়ে গেল ২ রানে ৩ উইকেট! ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়েছেন ঈশান কিষাণ (০), রোহিত (০), শ্রেয়স আইয়ার (০)। জশ হ্যাজলউডের দুটি ও মিচেল স্টার্কের এক উইকেট। কেউ কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে, এটা ক্রিকেট ম্যাচ চলছে। মনে হচ্ছিল যেন ফুটবল ম্যাচের স্কোরলাইন। দুশোও তখন যেন কয়েক নটিক্যাল মাইল দূরে।


সেখান থেকে পাল্টা লড়াই বিরাট কোহলি ও কে এল রাহুলের ব্যাটে। ১১৬ বলে ৮৫ রান করলেন কোহলি। আর রাহুল ১১৫ বলে ৯৭ রানে অপরাজিত রইলেন। রাহুলের ওয়ান ডে কেরিয়ারের সেরা ইনিংস বললেও অত্যুক্তি হবে না। মাত্র ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরির সুযোগ হাতছাড়া হল। একটা সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে একটি চার ও একটি ছয় মারতে হতো। কিন্তু ছয় মেরে বসেন রাহুল। সেঞ্চুরি অপূর্ণ থেকে যায়। ৪১.২ ওভারে ম্য়াচ জিতে নেয় ভারত।


রবিবারের চেন্নাইয়ে ম্যাচের প্রথমার্ধে দাপট ভারতীয় বোলারদের। অস্ট্রেলিয়াকে (Ind vs Aus) ১৯৯ রানে রুখে দেয় ভারত। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্যাট কামিন্স। অজ়ি অধিনায়কের অন্যতম বড় ভরসা ছিলেন মিচেল মার্শ। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক জেফ মার্শের পুত্র। দুরন্ত ফর্মে থাকা সেই মিচ মার্শকে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে প্রথম ধাক্কা দেন যশপ্রীত বুমরা। কোনও রান না করে ফেরেন মার্শ। তবে ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথ প্রাথমিক সেই ধাক্কা কাটিয়ে ইনিংসের হাল ধরেন। 


একটা সময় ১৬ ওভারে ৭৪ রান তুলে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপরেই ভারতীয় স্পিনারদের মঞ্চে প্রবেশ। কুলদীপ যাদবের বলে তাঁর হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডেভিড ওয়ার্নার (৪১ রান)। ২০২২ সাল থেকে ১১ থেকে ৪০ ওভারের মাঝে উইকেট তোলার নিরিখে কুলদীপ বিশ্বের সেরা। কেন, সেটা রবিবার ফের বোঝালেন চায়নাম্যান স্পিনার। ওয়ার্নারের পর বিপজ্জনক গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকেও ফিরিয়ে দেন কুলদীপ। মাত্র ১৫ রান করে বোল্ড হয়ে যান ম্যাড ম্যাক্স।


অন্য প্রান্ত থেকে ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে জাড্ডুর ভেল্কি। শুরু করেছিলেন স্টিভ স্মিথকে বোল্ড করে দিয়ে। ৪৬ রান করে ফেরেন স্মিথ। এরপর মার্নাশ লাবুশেন (২৭ রান) ও অ্যালেক্স ক্যারিকেও (০ রান) তুলে নেন রবীন্দ্র জাডেজা। ক্যামেরন গ্রিনকে (৮ রান) তুলে নেন আর অশ্বিন। ঘরের মাঠে যিনি প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন। ৩৬.২ ওভারে ১৪০/৭ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। তখনই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বড় স্কোর তুলতে পারবে না অস্ট্রেলিয়া।


শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া যে ভারতের সামনে দুশো রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছিল, তার জন্য কৃতিত্ব প্রাপ্য মিচেল স্টার্কের। ৩৫ বলে ২৮ রান করলেন অজ়ি পেসার। ৪৯.৩ ওভারে ১৯৯ রানে অল আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ৩ উইকেট জাডেজার। ২টি করে উইকেট যশপ্রীত বুমরা ও কুলদীপ যাদবের। একটি করে উইকেট পেয়েছেন মহম্মদ সিরাজ়, আর অশ্বিন ও হার্দিক পাণ্ড্য


চিপকে এই প্রথম বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচ হারল অস্ট্রেলিয়া। দিনের শেষে রোহিত হয়তো ধন্যবাদ দিতে যাবেন মিচেল মার্শকে। কেন? হ্যাজলউডের বলে ব্যক্তিগত ১৫ রানের মাথায় থাকা কোহলির লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন বলে। সেই সময় কোহলি ফিরে যাওয়া মানে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের কার্যত মর্গে ঢুকে পড়ার দশা হতো।


মার্শ ক্যাচ ফেলেছেন। সুযোগ লুফে নিয়েছেন কোহলি। চতুর্থ উইকেটে রাহুলের সঙ্গে ১৬৫ রানের পার্টনারশিপ খেলে ম্যাচের রং পাল্টে দিয়েছেন। উদ্বেগ ভুলিয়ে হাসি ফুটিয়েছেন সমর্থকদের মুখে।


আরও পড়ুন: ODI World Cup Exclusive: বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান মহারণ দেখতে আমদাবাদে যাবেন সৌরভ


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial