পুণে: এরকম রুদ্ধশ্বাস অঙ্ক ক্রিকেট কেরিয়ারে কোনওদিন কষতে হয়েছে বিরাট কোহলিকে (Virat Kohli)?


বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের (Ind vs Ban) জয়ের জন্য তখন বাকি ১৯ রান। আর সেঞ্চুরি থেকে কোহলিও দাঁড়িয়ে ঠিক ১৯ রান দূরে। অন্য প্রান্তে আবার কোনও টেল এন্ডার নন, রয়েছেন ছন্দে থাকা কে এল রাহুল (KL Rahul)। কিন্তু রান-শিকারির চোখেমুখে তখন সেঞ্চুরির প্রতিজ্ঞা। কোহলি ঠিকই করে নিলেন, তিন অঙ্কে পৌঁছনোর জন্য আগ্রাসনের মাত্রা আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দেবেন।


চল্লিশতম ওভারে নাসুম আমেদের প্রথম বলেই বাউন্ডারি কোহলির। অঙ্কটা পাল্টে গেল। ম্যাচ জিততে ভারতের চাই ১৫ রান। সেঞ্চুরির জন্য কোহলিরও প্রয়োজন ১৫। পরের দুই বলে কোনও রান নিলেন না কোহলি। হাতে ওভার সংখ্যা রয়েছে পর্যাপ্ত। তাই তাড়াহুড়োতে নারাজ বিরাট। শিকার ধরার আগের মুহূর্তে ক্ষুধার্ত বাঘ যেমন নিশানাকে জরিপ করে নেয়, কোহলিও যেন সেরকমই মাপছিলেন বোলারকে। ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা। ফের বদলে গেল সমীকরণ। ম্যাচ জিততে ভারতের চাই ৯। কোহলিরও সেঞ্চুরির মোক্ষলাভ ৯ রান দূরে। ওভারের শেষ বলে সিঙ্গল নিলেন কিংগ কোহলি।


কিন্তু নাটকের পরবর্তী পর্ব তোলা ছিল পরের ওভারের জন্য। হাসান মাহমুদ ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়াইড বল করলেন। কোহলি বুঝে গেলেন, বিপক্ষ অন্য কৌশল নিচ্ছে। সে যতই খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠুক না কেন, প্রতিপক্ষকে মাইলফলক স্পর্শ করতে না দেওয়ার তীব্র আকাঙ্খা যেন তখন বাংলাদেশ শিবিরের পরতে পরতে। কোহলিও স্ট্র্যাটেজি বদলে ফেললেন। ঠিক করলেন, বড় শটের জন্য না গিয়ে ২ রান করে চুরি করে নেবেন। পৌঁছে যাবেন শতরানের আরও কাছে।


যেমন ভাবা তেমন কাজ। ওই ওভারে দুবার ২ রান করে দৌড়লেন কোহলি। শেষ বলে নিলেন সিঙ্গল। যাতে পরের ওভারে স্ট্রাইক তাঁর কাছেই থাকে। পরিবর্তিত অঙ্ক দাঁড়াল, জয়ের জন্য ভারতের চাই ২, কোহলির তিন।


পরের ওভারে বল করতে এসে এবার ওয়াইড করার চেষ্টা নাসুমের। কিন্তু আম্পায়ার অতিরিক্ত রান দিলেন না। কোহলি সম্ভবত বুঝে গিয়েছিলেন, বড় শট না খেলতে পারলে সেঞ্চুরি অসম্ভব। ওভারের তৃতীয় বলে ঝুঁকি নিলেন। কথায় আছে, ভাগ্য সাহসীদের সঙ্গ দেয়। কোহলির শট আছড়ে পড়ল মিড উইকেট বাউন্ডারির বাইরে। পেল্লায় ছক্কা মেরে দলকে জেতালেন কোহলি। ভারতও ম্য়াচ জিতে গেল। ৫১ বল বাকি থাকতে। ৭ উইকেটে।


ওয়ান ডে বিশ্বকাপের ম্যাচে পুণের গাহুঞ্জেতে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে উড়িয়ে এশিয়া কাপে পরাজয়ের মধুর প্রতিশোধও নিল টিম ইন্ডিয়া। প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ তুলেছিল ২৫৬/৮। হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন দুই বাংলাদেশি ওপেনার তানজিদ হাসান ও লিটন দাস। ওপেনিং জুটিতে ১৪.৪ ওভারে ৯৩ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। যা ১৯৯৯ সালের ওয়ান ডে বিশ্বকাপে (ODI World Cup) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মেহরাব হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেনের ৬৯ রানের ওপেনিং জুটির রেকর্ডকে ছাপিয়ে যায়। তারপরেও ভারতীয় বোলিংয়ের সামনে খুব বড় কোনও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেনি বাংলাদেশ। যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজ়, রবীন্দ্র জাডেজা, কুলদীপ যাদবদের সামনে ২৫৬-তেই আটকে যায় তাদের ইনিংস। তাও মাহমুদুল্লাহ ৪৬ ও মুশফিকুর রহিম ৩৮ রান করেন বলে ভদ্রস্থ স্কোর তোলে বাংলাদেশ।


রান তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মা অবশ্য ব্যাটিং শুরুই করেন থার্ড গিয়ারে। ৪০ বলে ৪৮ রান করেন তিনি। ডেঙ্গি থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে ৫৩ রান শুভমন গিলের। তারপর থেকে শুধুই কোহলি। ৬টি চার ও ৪ ছক্কায় সাজানো তাঁর ইনিংস। একাধিক রেকর্ডও গড়েন কোহলি। মোট আন্তর্জাতিক রানের নিরিখে তিনি পেরিয়ে গেলেন মাহেলা জয়বর্ধনেকে (২৫,৯৫৭ রান)। কোহলির সামনে এখন শুধু রিকি পন্টিং (২৭,৪৮৩ রান), কুমার সঙ্গকারা (২৮,০১৬ রান) ও সচিন তেন্ডুলকর (৩৪,৩৫৭ রান)।


জয়ের রাতে ভারতের একমাত্র কাঁটা হয়ে রইল হার্দিক পাণ্ড্যর চোট। গোড়ালি মচকে মাঠ ছেড়েছিলেন। তাঁর স্ক্যান করানো হয়েছে। বিশ্বকাপে ভারতের পরের ম্য়াচ ২২ অক্টোবর। ধর্মশালায় নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সেই ম্য়াচে কি খেলতে পারবেন বঢোদরার অলরাউন্ডার?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial