লখনউ: বিশ্বকাপের (ODI World Cup) সূচি প্রকাশের পর থেকে বলা হচ্ছিল, টুর্নামেন্টের অন্যতম বড় ম্যাচ ২৯ অক্টোবর। লখনউয়ের অটল বিহারী বাজপেয়ী স্টেডিয়ামে যেদিন মুখোমুখি হবে ভারত ও ইংল্যান্ড (Ind vs Eng)। এক দল গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। অন্য দল ঘরের মাঠে অন্যতম ফেভারিট। কেউ যদি সেই সময় বলতেন যে, বিশ্বকাপের প্রথম পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটিতে হেরে টুর্নামেন্টের মাঝপথেই কার্যত বিদায় নেবে ইংল্যান্ড, অনেকে ভাবতেন, ঠাট্টা করা হচ্ছে। 


কিন্তু বিশ্বকাপে সেই ছবিই বাস্তব। পয়েন্ট টেবিলের একেবারে তলানিতে ইংল্যান্ড। ঝুলিতে মাত্র ২ পয়েন্ট। এখান থেকে শেষ চারে পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব। রয়েছে জটিল অঙ্ক। যার মধ্যে অন্যতম, বাকি চার ম্যাচের চারটিই জিততে হবে। তবে পয়েন্ট দাঁড়াবে ১০। এবং সব ম্যাচই জিততে হবে বড় ব্যবধানে। যাতে নেট রান রেট ভাল জায়গায় থাকে। সেই সঙ্গে নির্ভর করতে হবে অন্য দলের ফলের ওপর।


টুর্নামেন্টে দলে থাকা ১৫ জন ক্রিকেটারকেই খেলিয়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড। পাঁচ ম্য়াচের মধ্যে তিনটি ম্যাচে দলের সহ অধিনায়ককে বসিয়ে রাখার মতো দুঃসাহসী পদক্ষেপও নিয়েছে। কোনও লাভ হয়নি।


অন্যদিকে, ভারত এই বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দল। পাঁচ ম্য়াচ খেলে পাঁচ জয়। রোহিত শর্মাদের ঝুলিতে ১০ পয়েন্ট। এমনকী, বিশ্বকাপে বরাবরের গাঁট নিউজ়িল্যান্ডকে হেলায় হারিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। দলের সেরা অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ড্যর অনুপস্থিতি যেন টেরই পাওয়া যায়নি গত দুই ম্যাচে।


একটা সময় ওয়ান ডে ক্রিকেটে ওপেনিং নিয়ে সমস্যায় ছিল ভারত। এখন শুরুতেই ঝড় তুলছেন রোহিত শর্মা। পাওয়ার প্লে-তে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৩৪.০১। নতুন বল হাতে একইরকম ভয়ঙ্কর শুরু করছেন যশপ্রীত বুমরা। প্রথম ১০ ওভারে যাঁর ইকনমি রেট? মাত্র ২.৯! ডেঙ্গি-মুক্ত হয়ে ফিরেই রানের মধ্যে শুভমন গিল। মিডল অর্ডারে দুরন্ত ছন্দে বিরাট কোহলি। রান তাড়া করতে নেমে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলছেন। রবীন্দ্র জাডেজা-কুলদীপ যাদবের স্পিন জুটিও ফর্মে।


রবিবার নবাবের শহরে ভারতের জয় মানে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়া। সেই সঙ্গে ইংল্যান্ডের বিদায়ঘণ্টি বেজে যাওয়া। আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে ভারতীয় শিবির। একমাত্র কাঁটা হার্দিকের গোড়ালির চোট। যে কারণে পাঁচ বোলার নিয়ে ফের নামতে হতে পারে ভারতকে। যদি ষষ্ঠ বোলারের প্রয়োজন পড়ে? নেটে হাত ঘুরিয়ে তৈরি থাকছেন শুভমন গিল, বিরাট কোহলি ও সূর্যকুমার যাদব।



ভারতীয় দলে রবিবার কোনও পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। কোনও কোনও মহল থেকে আর অশ্বিনকে খেলানোর সম্ভাবনার কথা বলা হলেও, সেক্ষেত্রে হাতে পেসার বলতে পড়ে থাকবেন দু'জন। হার্দিকের অনুপস্থিতিতে একাদশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে যেন নতুন গতিপথে নকশা সাজাতে হচ্ছে। তাই অশ্বিনের খেলার সম্ভাবনা কম বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।


ভারতের একমাত্র চিন্তা মহম্মদ সিরাজ়ের ফিকে পারফরম্য়ান্স। ২০২৩ সালে ১৪টি ওয়ান ডে ম্য়াচে ৩০ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে নেমেছিলেন হায়দরাবাদের পেসার। প্রত্যেক তিন ওভার ছাড়া উইকেট নিচ্ছিলেন। ওভার প্রতি খরচ করছিলেন মাত্র ৪.৯১ রান। কিন্তু বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচে ৬টি মাত্র উইকেট নিয়েছেন। ওভার প্রতি প্রায় ৬ রান খরচ করছেন। মহম্মদ শামি আগের ম্যাচেই ৫ উইকেট নিয়েছেন। কোনও ম্যাচে স্পিনার বাড়াতে হলে চাপ বাড়বে সিরাজ়ের ওপর।


ইংল্যান্ড শিবিরের কাঁটা অধিনায়ক জস বাটলারের ফর্ম। নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ৪৩ করেছিলেন। তারপর থেকে চার ম্যাচে তাঁর রান ২০, ৯, ১৫ ও ৮। তার ওপর শামির বিরুদ্ধে হতশ্রী রেকর্ড। শামির ৬০ বলে খেলে পাঁচবার আউট হয়েছেন বাটলার।তাঁর নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। ভারতের বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষা ইংরেজ অধিনায়কেরও।