আমদাবাদ: তাঁকে বিশ্বকাপে (ODI World Cup) ভারতের সেরা ব্যাটিং অস্ত্র মনে করা হচ্ছিল। অথচ সেই শুভমন গিলের (Shubman Gill) নাকি বিশ্বকাপ খেলাই সংশয়ের মেঘে ঢাকা পড়েছিল!
ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ায় টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে খেলতে পারেননি গিল। তবে বাইশ গজে ফিরেছেন তিনি। আর ফিরেছেন বীরদর্পে। ৮ ম্যাচে ৪টি হাফসেঞ্চুরি। ব্যাটিং গড়? ৫০। যা যে কোনও ব্যাটারকে গর্বিত করে তোলার মতো। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ৯২ রান করে আউট হয়েছিলেন। পেশির টানে কাবু না হয়ে পড়লে সেই ওয়াংখেড়েতেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করে ফেলতেন গিল। শেষ পর্যন্ত ৮০ রান করে তাঁকে আহত ও অবসৃত হতে হয়।
একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক। পাঞ্জাবের মোহালিতে প্যারাগন সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে সুখবিন্দর সিংহ টিঙ্কুর ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। সেখানে মাত্র আট বছর বয়সে গিয়েছিলেন শুভমন। বাবা লখবিন্দর সিংহ গিলের হাত ধরে। শুভমনের হাতে তখন বাড়ির একটি গাছ কেটে তৈরি করানো কাঠের ব্যাট। যা ঠাকুরদা উপহার দিয়েছিলেন শুভমনকে। আর সেই ব্যাট দিয়েই কি না সব বল সাবলীল ভঙ্গিতে, মাঝখান দিয়ে খেলে চলে বালক। চাষের জমিতে শুভমনের জন্য পিচ বানিয়েছিলেন লখবিন্দর নিজে। সেখানেই শুরু হয় ছোট্ট বালকের ক্রিকেট চর্চা। সব বল এমনভাবেই ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলতে ছোট্ট শুভমন যে, বাবা লখবিন্দর নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন, এ ছেলে অনেক দূর যাবে। দরকার শুধু সঠিক পরিচর্যা। আর সেই কারণেই টিঙ্কুর অ্যাকাডেমিতে নিয়ে যাওয়া। ছেলেকে ক্রিকেটার গড়ে তোলার স্বপ্ন সফল করতে ফিরোজপুরের চক খেহরেওয়ালা গ্রাম থেকে ২০০৭ সালে চণ্ডীগড়ে চলে আসেন লখবিন্দর। টিঙ্কুর অ্যাকাডেমিতে শুরু হয় স্বপ্নপূরণের দৌড়।
টিঙ্কু যেভাবে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সীদের তালিম দেন, তা দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন ভারতের প্রাক্তন পেসার ভূপিন্দর সিংহ। শুরুর দিকে শুভমনও টিঙ্কুর কাছে আর পাঁচজন শিক্ষার্থীর মতোই ছিলেন। কিন্তু শুভমন যে গড়পড়তা নন, বিশেষ প্রতিভা, তা উপলব্ধি করেছিলেন টিঙ্কু।
যেমন বুদ্ধিদীপ্ত, তেমন নাছোড় মনোভাব। প্রত্যেক বলে নিখুঁত টাইমিং। যেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে খেলার সবরকম মশলা মজুত শুভমনের আস্তিনে।
টিঙ্কু ছোট থেকেই শুভমনকে শিখিয়েছিলেন বড় ইনিংস খেলার গুরুত্ব। টিঙ্কুর কথায়, 'মোহালি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরের মাঠে একটা জেলাস্তরের খেলা ছিল। ও সেঞ্চুরি করেই একটা আলগা শট খেলে। ফিল্ডার সেই ক্যাচ ধরতে পারেনি। তারপরই বিরতিতে আমি ওকে বোঝাই যে, সেঞ্চুরি করে সন্তুষ্ট হলে চলবে না। দেড়শো করতে হবে। সেই ম্যাচে ও তারপর দেড়শো সম্পূর্ণ করে। তারপর দেখতে দেখতে ডাবল সেঞ্চুরি, ট্রিপল সেঞ্চুরিও করে। তখন ওর মাত্র ১৪ বছর বয়স। কিন্তু বড় ইনিংসের গুরুত্ব সেই থেকেই বুঝে গিয়েছিল।' সেই ম্যাচে শুভমন করেছিলেন ৩৫১ রান। ওপেনিং জুটিতে নির্মল সিংহের (২৬৭) সঙ্গে তুলেছিলেন ৫৮৭ রান।
ছোট থেকেই কঠোর পরিশ্রমী। বোলিং মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাটিং অনুশীলন করতেন। প্র্যাক্টিসের শেষে বাবা লখবিন্দর ৩০-৪৫ মিনিট থ্রো ডাউন দিতেন শুভমনকে। যাতে ছেলের প্রস্তুতি আরও ভালভাবে হয়।
ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক যুবরাজ সিংহের থেকেও অনেক মূল্যবান পরামর্শ পেয়েছেন শুভমন। পরে যুবরাজ বলেছিলেন, '২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজের আগের ঘটনা। আমি ওকে বলেছিলাম, বাল ফাস্টবোলারদের বিরুদ্ধে খেলতে গেলে সামনের পায়ে রক্ষণ আরও মজবুত করতে হবে। আমি সচিন পাজিকেও অনুরোধ করেছিলাম ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য।' তার ফলও পেয়েছিলেন শুভমন। গাব্বায় বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির শেষ টেস্টে তাঁর ৯১ রানের ইনিংসে ভর করেই ম্যাচ জেতে ভারত। ১৯৮৮ সালের পর সেই প্রথম গাব্বায় কোনও টেস্ট হারে অস্ট্রেলিয়া।
শুভমনের কেরিয়ারে অবদান রয়েছে প্রাক্তন পেসার কারসন ঘাউড়িরও। যিনি একটা সময় পেসারদের তুলে আনার জন্য বোর্ডের কমিটিতে ছিলেন। এবং পাঞ্জাবে গিয়ে এমন কোনও ব্যাটার খুঁজে পাচ্ছিলেন না, যিনি পেসারদের বলে খেলতে পারেন। সেই সময়ই গিলের সন্ধান পান কারসন। গিল তখন টেনিস বলেও ক্রিকেট খেলতেন। কারসনের পরামর্শে টেনিস বলে খেলা বন্ধ করেন। যোগ দেন বোর্ডের ক্যাম্পে।
ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতা প্রথমে রাজ্য দলে, তারপর আইপিএলের দরজা খুলে দেয়। সাফল্যের সূত্র ধরেই সুযোগ জাতীয় দলে। বিশ্বকাপেও ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ভরসার মুখ হয়ে উঠেছেন শুভমন। রবিবার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফের একবার নিজেকে বিশ্বমঞ্চে জাহির করার সুযোগ পাঞ্জাবের তরুণের সামনে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন
https://t.me/abpanandaofficial
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।