কলকাতা: ভারতের বেশিরভাগ কম জনপ্রিয় খেলার ক্ষেত্রেই যা হয়ে থাকে, অরবিন্দ সিংহ ও অর্জুন লাল জাঠের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জন্ম থেকেই পরিবারে দারিদ্র্য দেখে এসেছেন। বড় হওয়ার পর সংসারের হাল ধরার জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তার আগে পর্যন্ত রোয়িং নামক খেলার কথাই কোনওদিন শোনেননি। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর এই খেলার সঙ্গে পরিচিত হন। ২০১৭ সালে ট্রায়াল দিয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পান। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অরবিন্দ ও অর্জুনকে। যাঁরা চার বছর আগে অলিম্পিক্স কী সেটাই জানতেন না, তাঁরাই এবার টোকিওতে রোয়িংয়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছেন। সংসারের দাঁড় টানার পাশাপাশি এবার দেশের হয়েও বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসরে দাঁড় টানবেন এই দুই তরুণ।
অলিম্পিক্সের জন্য এখন পুণেতে প্রস্তুতি সারছেন অরবিন্দ ও অর্জুন। তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ইসমাইল বেগ। তাঁর অধীনে কঠোর পরিশ্রম করছেন এই দুই ক্রীড়াবিদ। টোকিওতে দেশের নাম উজ্জ্বল করাই তাঁদের লক্ষ্য।
পুণেতে অনুশীলনের ফাঁকেই ফোনে অরবিন্দ জানালেন, ‘উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলার একটি গ্রামে আমার বাড়ি। ছোটবেলায় কোনওদিন রোয়িংয়ের কথা শুনিনি। গ্রামে থাকার সময় বন্ধুদের সঙ্গে অ্যাথলেটিক্স সহ বিভিন্ন ধরনের খেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর রোয়িংয়ের কথা জানতে পারি। ধীরে ধীরে এই খেলাটাকে ভালবেসে ফেলি। এখন এটাই আমার ধ্যান-জ্ঞান।’
অরবিন্দ আরও জানালেন, ‘২০১৭ থেকে পুণেতে আছি। আমি আর অর্জুন ভালভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে গত বছর থেকে লকডাউনের জেরে অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি ধাক্কা খেয়েছে। এখন আমরা যত বেশি সম্ভব পরিশ্রম করার চেষ্টা করছি।’
সাধারণ পরিবারের ছেলে। বাড়ির লোকজন তো বটেই, এমনকী গ্রামেরও কেউ এর আগে এত বড় সাফল্য পাননি। সবাই কী বলছেন? অরবিন্দ জানালেন, ‘বাড়ির সবাই খুব খুশি। বাবা, ভাই-বোনেরা সবাই উৎসাহ দিচ্ছে। সবাই বলছে, টেনশন না করে ভালভাবে প্রস্তুতি নিতে। বাবা বলেছেন, দেশের নাম উজ্জ্বল করতে হবে।’
টোকিওতে অরবিন্দের সঙ্গী অর্জুনের বাড়ি রাজস্থানের জয়পুরে। তিনিও একেবারেই সাধারণ পরিবারের ছেলে। কিন্তু নিজের পরিশ্রম আর জেদের বশে সাফল্য অর্জন করেছেন। এই তরুণ জানালেন, ‘অলিম্পিক্সের জন্য ভালভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। রোজ সকালে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আর বিকেলে তিন ঘণ্টার মতো অনুশীলন করছি। সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে আমাদের অনুশীলন শুরু হয়, চলে প্রায় ১১টা পর্যন্ত। দুপুরে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর আবার বিকেলে তিন ঘণ্টা ধরে অনুশীলন চলছে। কোচ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন, ভুল শুধরে দিচ্ছেন। আশা করি অলিম্পিক্সে ভাল ফল হবে। যতটা সম্ভব উপরের দিকে থাকার চেষ্টা করব।’
অর্জুন আরও জানালেন, ‘২০১৬-তে আমি সেনাবাহিনীতে যোগ দিই। তার আগে পর্যন্ত রোয়িং কী, সেটা জানতাম না। কোনওদিন এই খেলাটার নামই শুনিনি। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরেই আমি রোয়িংয়ের সঙ্গে যুক্ত হই। সবাই আমাকে সাহায্য করছেন। অলিম্পিক্সে যাব শুনে বাড়ির সবাই খুব খুশি। সবাই বলছে, টেনশন না করে ভালভাবে প্রস্তুতি নিতে। সবাই সাফল্যের আশা করছে। দেশের জন্য পদক আনতে পারব কি না বলতে পারছি না, তবে আপ্রাণ চেষ্টা করব। কয়েকদিন পরেই আমরা টোকিও চলে যাচ্ছি। ওখানে গিয়ে মানিয়ে নেওয়াটাই আসল। কোচ সবসময় আমাদের সে কথা বলছেন। আমরা সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি ভাল ফল করতে পারব।’
জাতীয় রোয়িং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট রাজলক্ষ্মী সিংহ দেও জানিয়েছেন, ‘এবার ভারত থেকে দুই খেলোয়াড় অলিম্পিক্সে যাচ্ছে। অর্জুন আর অরবিন্দকে ২০১৭ সালে ট্রায়ালের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দলে ওরা ছিল। ২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ওরা রুপো পায়। করোনার জন্য অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি যথেষ্ট ধাক্কা খেয়েছে। তবে অর্জুন ও অরবিন্দ পুণেতে ভালভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করি অলিম্পিক্সে ওরা ভাল ফলই করবে। আমি পদকের আশা করছি না। ওরা ৭ থেকে ১২ নম্বরের মধ্যে থাকলেই আমি খুশি হব।’
২৩ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে এবারের অলিম্পিক্স, চলবে ৮ অগাস্ট পর্যন্ত। প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে রোয়িং, চলবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত। লাইটওয়েট ডাবল স্কালস ইভেন্টে যোগ দিচ্ছেন অরবিন্দ ও অর্জুন। এই ইভেন্ট অত্যন্ত কঠিন। তবে হাল ছাড়তে নারাজ এই দুই খেলোয়াড়। টোকিও থেকে যদি পদক আনা সম্ভব না-ও হয়, তাতেও তাঁরা দমে যেতে নারাজ। কারণ, এরপর আগামী বছর এশিয়ান গেমস রয়েছে। সেখানে সোনা জেতাই তাঁদের লক্ষ্য। এছাড়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকেও দেশকে পদক এনে দিতে চান এই দুই খেলোয়াড়।